এখানে ঝাড়ু নিয়ে মিছিল হচ্ছে, আমরা ঝাড়ুর যোগ্য হয়ে গেলাম: ড. ইউনূস

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পলাশ খান/স্টার

রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে থাকা গ্রামীণ পরিবারের আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে নেওয়ার অভিযোগ জানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন ছিল।

কিন্তু গত ৩ দিনের ধারাবাহিকতায় আজ সকালেও 'বহিরাগতরা' ভবনে ঢোকার পথ অবরোধ করে রাখেন বলে অভিযোগ করেন এই ভবনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা।

এদিন সকাল ১১টার পর চিড়িয়াখানা রোডে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে পৌঁছানোর খানিকটা আগেই ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ পাহারা চোখে পড়ে। এর মধ্যেই দেখা যায় 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে শ খানেক মানুষের একটা মিছিল সনি সিনেমা হলের দিকে আসছে।

ঝাড়ু হাতে কিছু নারী গ্রামীণ টেলিকম ভবনের সামনে মিছিল করেন। ছবি: পলাশ খান/স্টার

এখান থেকে একটু এগিয়ে ঝাড়ু হাতে কিছু নারীকে ভবনের সামনে অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদের কেউ ড. ইউনূসের কাছে টাকা পান বলে দাবি করেন, আবার কারো দাবি, মোবাইলের কল রেট অনেক বেশি এ কারণে তারা ঝাড়ু হাতে নেমেছেন।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভবনের সামনে থেকে সরে যান তারা।

এ সময় টেলিকম ভবনে ঢুকে কথা হয় গ্রামীণ শক্তির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দখলকারীরা ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আমাদের কেউ তখন ভবনে ঢুকতে পারেননি। বাইরে ঝাড়ু মিছিল হয়েছে। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন।'

গ্রামীণ টেলিকম ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়া মিছিল। ছবি: পলাশ খান/স্টার

আজ ড. ইউনূস টেলিকম ভবনে পৌঁছান দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আজকে যে আমরা এখানে পৌঁছেছি, আমরা জানতাম না যে আমাদের এখানে বসতে দেবে কি দেবে না। এটা তাদের (জবরদখলকারীদের) এখতিয়ারের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনার বাড়িতে যদি একজন এসে বলে যে ‍যান সরেন, আমি এখানে থাকব, ও ওখানে থাকবে—কী রকম লাগবে তাহলে?'

বাইরে ঝাড়ু মিছিলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা সকাল থেকে শুনছি এখানে ঝাড়ু নিয়ে মিছিল হচ্ছে। কেন হচ্ছে তাও বুঝছি না। আমরা ঝাড়ুর যোগ্য হয়ে গেলাম হঠাৎ করে। আমরা তো নিজের বাড়িতেই আছি। নিজের ঘরে আছি। আর কারো ঝামেলার মধ্যে তো আমরা যাই না।'

এর আগে গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে থাকা আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে নেওয়ার অভিযোগ তুলে নোবেলবিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'আমরা বহু রকমের দুর্যোগের ভেতর দিয়ে যাই। এরকম দুর্যোগ আর দেখি নাই কোনোদিন, যে হঠাৎ করে বাইরের থেকে কিছু লোক এসে বলল তোমরা সরে যাও।'

গ্রামীণ টেলিকম ভবনে ড. ইউনূসের মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান আছে, প্রতিটির চেয়ারম্যান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস বলেন, 'আমরা একটা ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। আমরা এই সুন্দর বিল্ডিংটা বানিয়েছিলাম অতি সম্প্রতি। আমরা যখন গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলাম তখন আমাদের অফিস ইত্যাদি ওখানে ছিল। যখন আমাদের যাওয়ার পালা আসল তখন আমরা ভাবলাম আমরা সবাই মিলে একটা বিল্ডিং করি যেখানে আমরা শান্তিতে কাজকর্ম করতে পারব। এটাই সেই জিনিস; আমাদের স্বপ্নের বীজতলা। এটা তার একটা নমুনা।'

ড. ইউনূস আরও বলেন, 'হঠাৎ চারদিন আগে (১২ ফেব্রুয়ারি) দেখলাম বাইরের লোক এসে এটা জবরদখল করে নিচ্ছে। আমরা বাইরের লোক হয়ে গেলাম তাদের কাছে। তারা এটা তাদের নিয়মে চালানোর চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারলাম না এটা কীভাবে হয়।'

ভবনের পঞ্চম তলায় গ্রামীণ কল্যাণের কার্যালয়ে তালা। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি মন্তব্য করে এই নোবেলজয়ী আরও বলেন, 'আমরা পুলিশকে বললাম যে এরকম কাণ্ড হচ্ছে। আপনারা এসে দেখেন। ঠিক করে দেন। পুলিশ প্রথমে (অভিযোগ) গ্রহণই করল না। তারপর একবার এসে ঘুরে গেল। কোনো অসুবিধা দেখল না। আমরা তাদের বললাম—দেখেন আমাদের দরজায় তালা দিয়ে যাচ্ছে তারা। সকালবেলা এসে তালা খুলে দিচ্ছে। এখনো সেই পরিস্থিতি বিরাজমান।'

এই ভবনে থাকা প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসার মুনাফার টাকায় গড়ে উঠেছে মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, 'এখানে হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই।'

ড. ইউনূসের পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মঈনুদ্দিন চৌধুরী। গত ১২ তারিখের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি জানান, সেদিন বিকেলে ২০ থেকে ২২ জনের মতো মানুষ এই ভবনে জোর করে ঢুকে পড়েন। তাদের মধ্যে একজন 'অস্ত্রধারী' অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাও ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি, যিনি নিজেকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরামর্শক হিসেবে পরিচয় দেন।

মঈনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'তারা আমাকে বলল "আপনি বসেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে চিঠি আসতেছে।" আমি বললাম, তাহলে চিঠি নিয়ে আসলে না কেন? আমাকে কেন এভাবে বসিয়ে রেখেছ? আমি তো ভয় পাচ্ছি।'

প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, 'তারা যে ব্যবহার আমাদের সঙ্গে করেছে তা সভ্য সমাজের কোনো বিষয় হতে পারে না।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

7h ago