চট্টগ্রামে নির্বাচনী প্রচারণার আমেজ নষ্ট করছে সহিংসতা

সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহতদের একজন। ছবি: স্টার

নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম পাঁচ দিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে সহিংসতা হয়েছে। এতে নির্বাচনী প্রচারণার আমেজ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ ভোটারদের। 

তারা জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সব প্রার্থীই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। এখন প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় তাদের কর্মীরা পরস্পরকে আক্রমণ ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন।

ভোটাররা জানান, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যেই অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ শুক্রবার বিকেলে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ইউনিয়নে প্রচারণা চালাতে গেলে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের এক কর্মী প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেলের নেতাকর্মীরা কোনো প্ররোচনা ছাড়াই তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন গিয়াস উদ্দিন। 

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'তারা আমার কর্মীদের ওপর লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমার কর্মী অপু মাথায় আঘাত পেয়েছেন।'

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়া ধর বলেন, 'আহত অপুকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।'

গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। দলের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন।

হামলার বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

ভোটাররা জানান, অধিকাংশ আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী, একইসঙ্গে যারা আওয়ামী লীগের নেতাও। তাই তাদের কর্মীদের মধ্যেই সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটছে। 

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ তিনজন আহত হন। 

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রচারণা চালাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের কর্মীরা রাত ৮টার দিকে সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীসহ তিনজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।'

এম এ মোতালেব সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। 
 
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, বুধবার পটিয়া উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নে প্রচারণা চালাতে গেলে চট্টগ্রাম-১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতাকর্মীরা তার কর্মীদের ওপর হামলা ও ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর করে।

মোতাহেরুল ইসলাম এ অভিযোগ অস্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সামশুল একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো কর্মী জড়িত নয়।' 

বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত ভোটাররা।

চট্টগ্রাম-১২ আসনের ভোটার তাপস নন্দী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থীরা শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের অঙ্গীকার করলেও দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।'
 
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের ভোটার আবদুর নুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা চাই প্রার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাবেন এবং অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।'

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম-১, চট্টগ্রাম-১২ ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনসহ ১০টি নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সহিংসতা ও হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। পুলিশ ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটক করেছে। আমি সব প্রার্থীকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই যে, নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আমার এখতিয়ারের ১০টি আসনের ৭৪ জন প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠকে বসব। সেখানে আবারও তাদেরকে হুঁশিয়ার করব।' 

Comments

The Daily Star  | English
government bank borrowing target

Govt to give special benefits to employees, pensioners from July 1

For self-governing and state-owned institutions, the benefit must be funded from their budgets

24m ago