ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে শ্বশুর-জামাতার লড়াই

শ্বশুর-জামাতা
শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা (বামে) ও তার মেয়ের জামাই রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শ্বশুর ও তার মেয়ের জামাই। 

গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও এ আসনে শ্বশুর-জামাতার দ্বন্দ্ব ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

এই দুজন হলেন-সরাইল উপজেলার বাসিন্দা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের সাবেক উপদেষ্টা জিয়াউল হক মৃধা এবং তার মেয়ের জামাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসিন্দা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। 

জিয়াউল হক মৃধা নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে জাপা প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এবারের নির্বাচনে তিনি ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় জিয়াউল হকের মেয়ের জামাই রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ আসনে এই দুজন ছাড়াও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আরও পাঁচজন ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। 

তারা হলেন-কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন কলার ছড়ি প্রতীকে, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসানাত আমিনী, বিএনপির দলছুট সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে তৃণমূল বিএনপির মাইনুল হাসান তুষার, বাংলাদেশ ত্বরীকত ফেডারেশনের ছৈয়দ জাফরুল কুদ্দুছ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাজ্জাক হোসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্বশুর-জামাই দুজনই পেশায় আইনজীবী। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার সঙ্গে তার জামাতা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার মনোনয়ন যুদ্ধ শুরু হয়।

রেজাউল জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির মনোনয়ন পেলে জিয়াউল হক মৃধা সরাইল উপজেলা শাখা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নিয়ে জামাতার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। তারা রেজাউলকে 'বহিরাগত' আখ্যা দেন। ব্যাপক তোলপাড়ের পর রেজাউলের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। 

পরে জিয়াউল হক মৃধা সিংহ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। 

এ আসনে গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজুর কাছে পরাজিত হন। 

এলাকার ভোটাররা বলছেন, পাঁচ বছর আগেও মনোনয়ন নিয়ে শ্বশুর-জামাই একে অপরের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে দুজনেই রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিরোধের কারণে তখনকার মহাজোট মনোনীত প্রার্থী রেজাউলকে ভোটের দুই দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল।

কিন্তু, শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থেকে বিএনপি প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদ থেকে পদত্যাগের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উকিল সাত্তার যখন আবার উপনির্বাচনে প্রার্থী হন, তখন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন জিয়াউল হক মৃধা। 

পরে উকিল সাত্তারের মৃত্যুর পরে তৃতীয় দফা নির্বাচনে অংশ নিয়েও পরাজয় বরণ করতে হয় জিয়াউল হক মৃধাকে।

এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া জাপার প্রার্থী হন।

ভোটারদের ধারণা, এই আসনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মঈন উদ্দিন মঈন। রেজাউল তার শ্বশুরসহ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারবেন না। 

এছাড়া, এটি মূলত তার শ্বশুর বাড়ি এলাকা। শ্বশুরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকায় নির্বাচনে তার ভালো করার সম্ভাবনা একেবারেই কম বলে ধারণা সরাইলের বাসিন্দাদের। 

স্থানীয়রা জানান, এ আসনটি বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন। 

মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে ভোটের লড়াই প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কে নির্বাচন করল, না করল, সেটা দেখার বিষয় নয়। আমি এ জনপদে দুইবার সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে নির্বাচন করছি।'

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্ষমতাসীন দল সারা দেশে ২৬টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে, যার একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। আশা করি, আওয়ামী লীগের সভাপতির আদেশ এখানে পালিত হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে হতাশ করবেন না।'

শ্বশুরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রাজনীতি একদিকে আর পারিবারিক বিষয় আরেকদিকে। আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না।'

Comments

The Daily Star  | English

Smaller in size, larger in intent

Finance Adviser Salehuddin Ahmed has offered both empathy and arithmetic in his budget speech, laying out a vision that puts people, not just projects, at the heart of economic policy.

9h ago