স্যার ফজলে হাসান আবেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

sir-fazle-hassan-abed
স্যার ফজলে হাসান আবেদ। স্টার ফাইল ছবি

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২০ ডিসেম্বর। ২০১৯ সালের এইদিনে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর সুনামগঞ্জের দুর্গম এলাকা শাল্লায় ফিরে আসা শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ৩৬ বছর বয়সে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। পরবর্তীতে অন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যেও কর্মসূচি সম্প্রসারিত করে ব্র্যাক। সেইসঙ্গে এই সংস্থাটির মাধ্যমে কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্রঋণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, মানবাধিকার, সড়ক নিরাপত্তা, অভিবাসন এবং নগর উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্বপ্ন ও দর্শনের পথ ধরে বিকশিত ব্র্যাক আজ শিখর ছুঁয়েছে। নানামুখী কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ এনজিওর স্বীকৃতিও অর্জন করেছে সংস্থাটি। বাংলাদেশে এখন ব্র্যাক কেবল একটি উন্নয়ন সংস্থার নাম নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক ব্যবসাসহ নানামুখী উদ্যোগ।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল সিলেটের হবিগঞ্জ মহকুমার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লন্ডনে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পড়ালেখা করেন। ১৯৬২ সালে 'কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট' হিসেবে উত্তীর্ণ হন। পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানিতে সিনিয়র করপোরেট এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত থাকাকালে ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনের মোড় সম্পূর্ণরূপে ঘুরিয়ে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চাকরি ছেড়ে লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে 'অ্যাকশন বাংলাদেশ' ও 'হেলপ বাংলাদেশ' নামে দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর ১৯৭২ সালে স্যার আবেদ দেশে ফিরে আসেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ভারত-প্রত্যাগত শরণার্থীদের জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত শাল্লা এলাকায় ফিরে আসা শরণার্থীদের নিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখায় স্যার আবেদ অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। এর মধ্যে আছে—শিক্ষার উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পুরস্কার ইদান প্রাইজ (২০১৯), প্রাক-শৈশব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ লেগো ফাউন্ডেশন কর্তৃক লেগো পুরস্কার (২০১৮), দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের সম্ভাবনা বিকাশে সুযোগ সৃষ্টির জন্য লুডাটো সি অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ (২০১৫), ট্রাস্ট উইমেন হিরো অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল মেরিট (২০১৪), লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), শিক্ষাক্ষেত্রে ওয়াইজ প্রাইজ ফর এডুকেশন (২০১১), ডেভিড রকফেলার ব্রিজিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০৮), ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন অ্যাওয়ার্ড (২০০৭), ইউএনডিপি মাহবুবুল হক অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং কনট্রিবিউশন টু হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (২০০৪), ওলফ পামে প্রাইজ (২০০১) এবং র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফর কমিউনিটি লিডারশিপ (১৯৮০)।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অশোকা স্যার আবেদকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। তিনি এর মর্যাদাসূচক গ্লোবাল অ্যাকাডেমি ফর সোশ্যাল আন্ট্রপ্রেনিওরশিপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিশন অন হেলথ রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট (১৯৮৭-৯০), ইন্ডিপেনডেন্ট সাউথ এশিয়ান কমিশন অন প্রোভার্টি অ্যালিভিয়েশন (১৯৯১-৯২) এবং হাইলেভেল কমিশন অন লিগ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অব দ্য পুওরের (২০০৫-২০০৮) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

স্যার আবেদ ২০১০ সালে ব্রিটেনের রানি প্রদত্ত নাইটহুড মর্যাদা লাভ করেন। ২০১০ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত পরামর্শদাতা দলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ফরচুন ম্যাগাজিন স্যার আবেদকে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ জন ব্যক্তিত্বের একজন হিসেবে উল্লেখ করে। ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডের রাজা কর্তৃক নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Specific laws needed to combat cyber harassment

There is an absence of a clear legal framework and proper definitions when it comes to cyber violence against women, speakers said at an event yesterday.They urged for specific legislation to combat such crimes..The roundtable, titled “Scanning the Horizon: Addressing Cyber Violence agains

2h ago