শীতে শিশুর ডায়রিয়া ও ঠাণ্ডা-কাশির সমস্যায় করণীয়

অধ্যাপক মো. মাহবুবুল হক
অধ্যাপক মো. মাহবুবুল হক। ছবি: স্টার

অগ্রহায়ণ শেষ, পৌষের শুরু। প্রকৃতিতে শীত বসছে জেঁকে। শীত এলেই সর্দি-কাশিসহ মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হয় শিশু। বিশেষ করে ঠাণ্ডা-কাশির পাশাপাশি দেখা দেয় ডায়রিয়া।

কিন্তু করণীয় কী?

এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ডিপার্টমেন্ট অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার পেডিয়াট্রিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক।

শীতে শিশুর রোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'শীতকালে ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুদের দুটি রোগ বেশি হয়। একটি ঠাণ্ডা-কাশি ও শ্বাসকষ্ট এবং অপরটি ডায়রিয়া।'

তিনি বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এটা বড়দেরও হচ্ছে। প্রথম দিকে বমি হয়, পরে পাতলা পায়খানা হতে থাকে। এটা ৫-৭ দিন থাকতে পারে। তারপর নিজেই ভালো হয়।'

চিকিৎসা সম্পর্কে এই শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, 'এ ক্ষেত্রে প্রধান চিকিৎসাই হচ্ছে পর্যাপ্ত তরল খাবারের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ, শিশু যদি বমি ও পাতলা পায়খানা করে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে পরিমাণ মতো স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যতটুকু পায়খানা বা বমি করবে সেই পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যেতে হবে।'

শিশুরা সাধারণত স্যালাইন খেতে চায় না। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে বারবার চেষ্টা করে পরিমাণ মতো স্যালাইন খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।

তার ভাষ্য, 'একবারে না খেলে বারবার দিয়ে ওই ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। ডায়রিয়া হলে শিশুকে স্বাভাবিক খাবারটাই খাওয়াতে হবে। অনেক সময় দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখেন অনেকে। সেটা করা যাবে না। বাচ্চা খেতে না চাইলে, অনেক সময় সেটাই মেনে নেওয়া হয়। এটাও করা যাবে না। স্বাভাবিক কোনো খাবারই বন্ধ করা যাবে না।'

ডায়রিয়া হলে শরীরে পানি স্বল্পতা তৈরি হওয়া একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। এ দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দিয়ে ডা. মাহবুবুল বলেন, 'শিশুর ডায়রিয়া হলে খেয়াল রাখতে হবে যে তার প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কিনা। আজকাল অনেক অভিভাবক শিশুকে বেশিরভাগ সময় ডায়পার পরিয়ে রাখেন। ফলে, চিকিৎসকের কাছে গেলে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, শিশুর প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটা আর বলতে পারেন না। বিশেষ করে ডায়রিয়া হলে অবশ্যই ডায়পার পরিয়ে না রেখে প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটা খেয়াল করতে হবে।'

শিশু দিনে কতবার প্রস্রাব করলে তা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, '৬ মাসের বেশি বয়সী শিশু দিনে ৪-৫ বার প্রস্রাব করবে। আর ৬ মাসের আগ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাধারণত ৬ বার করবে। এটা সর্বনিম্ন পরিমাণ। আরও বেশিও করতে পারে।'

সতর্ক করে ডা. মাহবুবুল বলেন, 'যদি কোনো শিশু পাতলা পায়খানা করে এবং সেইসঙ্গে টানা ৬-৮ ঘণ্টা প্রস্রাব না করে, তাহলে সেটা পানি স্বল্পতার লক্ষণ। ডায়রিয়া হলে পানি স্বল্পতা দূর করা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। আর যদি কোনো কারণে পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।'

ডায়রিয়া না হলেও শিশু যদি প্রস্রাব কম করে? এমন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, 'যদি শিশু ডায়রিয়া না হলেও ২৪ ঘণ্টায় একবার বা দুবার প্রস্রাব করে, তাহলে বুঝতে হবে যে তার খাওয়া কম হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা না করে তার খাবার বাড়িয়ে দিতে হবে।'

শিশুর ঠাণ্ডা-কাশি হলে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। যত দিন যাচ্ছে ততই এই সমস্যা জটিল হচ্ছে। কারণ, বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ায় ঠাণ্ডা-কাশির সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে। এটা বড়দের ক্ষেত্রেও হচ্ছে। ফুসফুস বায়ুদূষণের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে, অল্প ঠাণ্ডা-কাশি লেগে গেলেই সেটা শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনকি ওষুধেও এই সমস্যা সহজে দূর হতে চায় না।'

শিশু হাসপাতাল
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। স্টার ফাইল ফটো

ডা. মাহবুবুল বলেন, 'এ ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য চিকিৎসা হচ্ছে, স্যালাইন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুর বয়স যদি ৬ মাসের বেশি হয়, তাকে লেবুর রস দিয়ে কুসুম গরম পানি খাওয়ানো গেলে ভালো।'

'যদি শ্বাসকষ্ট ও কাশি অনেক বেশি হয় তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক যদি প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করতেও হতে পারে। অনেক অভিভাবক চিকিৎসক বলার পরও শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে চান না। তারা ভাবেন, আরেকটু দেখি। এটা ঠিক না। কারণ, চিকিৎসক শিশুর পরিস্থিতি বুঝেই চিকিৎসা দেন এবং প্রয়োজন মনে হলেই কেবল ভর্তি করতে বলেন', যোগ করেন তিনি।

শিশুদের খাবার খেতে না চাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। ডায়রিয়া বা ঠাণ্ডা-কাশি লেগে থাকলে খাবার খেতে না চাওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মাহবুবুল বলেন, 'ঠাণ্ডা-কাশি হলে নাক বন্ধ থাকে বলে শিশু খেতে চায় না। তাই চেষ্টা করতে হবে নাকটা স্যালাইন পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখার। বাচ্চা যেহেতু এমন সময়ে একবারে বেশি খাবে না, তাই বারবার তাকে অল্প অল্প করেই খাওয়াতে হবে।'

অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক: বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার পেডিয়াট্রিকস, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago