শীতে শিশুর রোগ শিশুর যত্ন: কখন নিতে হবে হাসপাতালে

অধ্যাপক মো. মাহবুবুল হক। ছবি: স্টার

শীত এলেই সর্দি-কাশিসহ মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হয় শিশু। এই সময়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে যায়, এমনকি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুও হয়। এমন পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটের ডিপার্টমেন্ট অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার পেডিয়াট্রিকসের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক পরামর্শ দিয়েছেন, শিশুর ঠাণ্ডা লাগলে আতঙ্কিত না হয়ে তার যত্ন নিতে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'শীতে শিশুদের ঠাণ্ডা, কাশি হতেই পারে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। তবে, চেষ্টা করতে হবে, শিশু যেন প্রচণ্ড কুয়াশা, ঠাণ্ডা বাতাস থেকে দূরে থাকে।'

তিনি আরও বলেন, 'শিশুর শরীরে ঠাণ্ডা বাতাস না লাগানো ভালো। কারণ, ঠাণ্ডা বাতাস শিশুর গায়ে লাগলেই সর্দি লেগে যায়, নাক দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়। এমন মৌসুমে শিশুকে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে রাখতে হবে।'

শিশুকে বাইরে নিতে করণীয়

অনেকের পক্ষে শিশুকে সবসময় বাসায় রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। নানা প্রয়োজনে তাদের নিয়ে বাসার বাইরে যেতে হতে পারে।

অধ্যাপক মাহবুব বলেন, 'শিশুকে বাসার বাইরে নিতে হলে গরম কাপড় পড়াতে হবে, হাত-পায়ে মোজা পড়াতে হবে, মাথায় টুপি পড়াতে হবে। শিশুর মাথায় টুপি পড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।'

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

অপরিণত শিশু ও নবজাতকের যত্ন

অনেক শিশুর জন্ম হয় নির্দিষ্ট সময়ের আগে, অর্থাৎ অপরিণত অবস্থায়। তেমন ক্ষেত্রে শিশুকে মায়ের মুখের ও শরীরের সংস্পর্শে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক মাহবুব।

তিনি বলেন, 'এই পদ্ধতিকে বলা হয়, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার। যতটা সম্ভব শিশুকে মা তার বুকের ওপর রাখবেন। নবজাতকের জন্য এটা প্রয়োজন। এতে করে তাদের শরীর গরম থাকবে।'

শিশুর ঠাণ্ডা লাগলে করণীয়

অধ্যাপক মাহবুব বলেন, 'ঠাণ্ডা লেগে গেলে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে আসে। তখন তারা খাবারও খেতে চায় না। এ ক্ষেত্রে শিশুর নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। বাজারে নরমাল স্যালাইন পানি নরসল পাওয়া যায়, সেটা দিয়ে নাক পরিষ্কার করে দিতে হবে। এটা মূল কাজ।'

তিনি আরও বলেন, 'যখনই মনে হবে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে আছে, খেতে পারছে না নাক বন্ধ থাকায়, তখনই নাকটা পরিষ্কার করে দিতে হবে। নাকে ১ ফোটা করে নরসল দিতে হবে।'

নাকে নরসল ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কাজেই বেশি বার ব্যবহার করতে হলে তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ারও কারণ নেই।'

অধ্যাপক মাহবুব বলেন, 'এ সময়ে শিশুকে স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে, বিশেষ কোনো খাবার দেওয়া জরুরি না। বাসায় তৈরি পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। শিশুকে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বা ফল খাওয়ানো যেতে পারে, এতে ঠাণ্ডাটা কম লাগে।'

শিশুর নিউমোনিয়া হলে

শীতে শিশুর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়। নিউমোনিয়ার লক্ষণ সম্পর্কে অধ্যাপক মাহবুব বলেন, 'প্রচণ্ড জ্বর হবে, স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত শ্বাস নেবে, শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের নিচের অংশটুকু ভেতরের দিকে ঢুকে যাবে। সেইসঙ্গে শিশুর খাওয়া কমে যাবে ৫০ শতাংশের নিচে। স্বাভাবিক সময়ে যদি শিশু ১০ মিনিট ধরে বুকের দুধ খায়, এমন সময়ে দেখা যাবে ২ মিনিট পরই ছেড়ে দিচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই সময়ে শিশুর ঠাণ্ডা থেকে শ্বাসকষ্ট হয়। অনেক শিশুর পরিবারের সদস্যদের অ্যাজমা থাকলে তাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।'

এমন পরিস্থিতিতে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

শীতের অন্যান্য রোগ

'শীতের এই সময়ে ঠাণ্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিস ছাড়াও ভাইরাল সংক্রমণ বেশি হয়। এসব সমস্যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা হায়ার অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত প্রয়োজন হয় না। আরেকটি সমস্যা হয়, তা হলো ডায়রিয়া', বলেন অধ্যাপক মাহবুব।

এ সময় করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, 'শীতে ডায়রিয়া হলে অন্যান্য সময়ের মতো শিশুকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। প্রতিবার পায়খানায় যে পরিমাণ তরল বের হয়ে যাবে, সেটা স্যালাইন খাওয়ানোর মাধ্যমে পূরণ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।'

স্যালাইনে সতর্কতা

আমরা স্যালাইন বানানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে পানির পরিমাণ কম বা বেশি নিয়ে ফেলি। এ বিষয়ে সতর্ক করে অধ্যাপক মাহবুব বলেন, 'স্যালাইন বানানোর প্রক্রিয়াটি প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে। খুব সতর্কতার সঙ্গে তা পড়তে হবে এবং সঠিকভাবে স্যালাইন বানাতে হবে। পানি কম-বেশি হলে লবণের পরিমাণ কম-বেশি হবে, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং স্যালাইন বানাতে খুব সতর্ক থাকতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'স্যালাইনকে অনেকে শক্তিবর্ধক মনে করেন, কিন্তু আসলে তা নয়। অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়া ক্ষতির কারণ হতে পারে। পায়খানার সঙ্গে প্রতিবার যে পরিমাণ পানি বের হবে, প্রতিবার সেই পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে।'

শিশুকে হাসপাতালে কখন নিতে হবে

শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হয়, বুকের নিচের অংশ যদি বেশি ওঠা-নামা করে, খাওয়া যদি একেবারেই বন্ধ করে দেয়, ৩-৪ দিনের বেশি সময় ধরে যদি বেশি জ্বর থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Polytechnic students protest Bangladesh 2025

Polytechnic students issue 48-hr ultimatum over six-point demand

Threaten a long march to Dhaka if govt doesn't respond to demands

2h ago