সিনেমা হলের বরাদ্দ ঋণ ১ হাজার কোটি টাকা, বিতরণ মাত্র ১৮ কোটি

সিনেমা হল, ঋণ, সিনেমা হলের জন্য ঋণ, বাংলাদেশের সিনেমা হল,
রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হল। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

দুই বছরেরও বেশি সময় আগে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন সিনেমা হল তৈরি ও বিদ্যমান সিনেমা হলের সংস্কারে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছিল। কিন্তু, এখন পর্যন্ত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণ পেতে বন্ধক হিসেবে দেওয়া কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতা, ঋণ দেওয়ায় দীর্ঘ প্রক্রিয়া, জামানতের অভাব ও নেটফ্লিক্সসহ অন্যান্য ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর জনপ্রিয়তার কারণে মূলত এই ঋণ নিতে আগ্রহীর সংখ্যা কম।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সিনেমা হল মালিকদের ওই বছরের মার্চের মধ্যে ঋণের জন্য আবেদন করতে বলেছিল। কিন্তু, চাহিদা কম থাকায় ওই সময়সীমা দুই দফা বাড়িয়ে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় উদ্যোক্তারা নতুন সিনেমা হল তৈরির জন্য ১০ কোটি টাকা ও বর্তমান মালিকরা হল সংস্কারের জন্য পাঁচ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারেন।

বড় শহর এলাকার ঋণ গ্রহীতাদের জন্য সুদের হার পাঁচ শতাংশ ও এর বাইরে আগ্রহীদের জন্য সাড়ে চার শতাংশ। যেখানে দেশে অন্যান্য ঋণের সুদের হার এখন প্রায় ১২ শতাংশ।

এ প্রকল্পে অংশ নেওয়া ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেড় শতাংশ সুদ দিতে হবে।

এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক এই স্কিমে ঋণ বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

এর মধ্যে বিতরণের জন্য প্রিমিয়ার ব্যাংক ১৫ কোটি টাকা ও ওয়ান ব্যাংক তিন কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়েছে।

ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রিমিয়ার ব্যাংক ঋণের বেশিরভাগ টাকা স্টার সিনেপ্লেক্সের অধীনে সিনেপ্লেক্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান শো মোশন লিমিটেডকে দিয়েছে।

২০০২ সালে বসুন্ধরা সিটিতে পাঁচ কোটি টাকায় প্রথম সিনেপ্লেক্স চালু করে শো মোশন।

শো মোশনের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকা, বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জে নতুন সিনেপ্লেক্সের জন্য ঋণ পেতে অনেক সময় ও শ্রম দিতে হয়েছে।'

'ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হওয়ায় আগ্রহীর সংখ্যা কম' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'পাঁচ কোটি টাকায় ব্যবসা শুরু করলেও এখন তা বেড়ে ৯০ কোটি টাকা হয়েছে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে জানা গেছে, রাজশাহী শহরে নতুন সিনেপ্লেক্স তৈরির জন্য গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেলকে ওয়ান ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর মফিজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিনেপ্লেক্স নির্মাণাধীন থাকলেও এখনো ঋণ বিতরণ করা হয়নি।'

তিনি জানান, এই ঋণের চাহিদা কম। কারণ মানুষ এখন নেটফ্লিক্সের মতো ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোয় তাদের সুবিধা মতো সময় ও স্থানে সিনেমা দেখছেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হল মালিকদের ঋণ পরিশোধের সামর্থ্যের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।'

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অনেক হল মালিক ঋণের জন্য আবেদন করেননি। কারণ, তারা মনে করছেন, ব্যাংকের দেওয়া শর্তগুলো মেনে চলা কঠিন। যে এলাকায় অনেক সিনেমা হল সেখানে এ ঋণ নিয়ে জটিলতা আছে। এসব কারণে প্রায় ৫০টি হল মালিক ঋণের জন্য আবেদন করলেও তা পাননি।

মিয়া আলাউদ্দিনের মতো ঢাকার অন্যতম পুরোনো মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেছেন, 'দেশে পর্যাপ্ত সিনেমা পাওয়া যায় না।'

ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ আরও বলেন, 'আমরা বছরে ৫২ সপ্তাহের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ সপ্তাহ সিনেমা দেখাতে পারি। বাকি সময় প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকে।'

১৯৯৮ সালে দেশে এক হাজার ২৩৫টি সিনেমা হল থাকলেও বর্তমানে ৬০টি হল চালু আছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ঈদের সময় এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ১২০টিতে দাঁড়ায়।

Comments

The Daily Star  | English

Those involved in Ijtema ground deaths won't be spared: home adviser

The home adviser met with both factions of Tabligh Jamaat today at the Secretariat

1h ago