২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাসহ ১০ ইসরায়েলি সেনা নিহত
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে অক্টোবরের পর এক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারে ক্ষতির শিকার হয়েছে ইসরায়েল। দুই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাসহ ১০ সেনা নিহতের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি জানিয়েছে রয়টার্স।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে নিরঙ্কুশ ভোটে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার একদিন পরও অব্যাহত ছিল উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ।
উল্লেখ্য, সাধারণ অধিবেশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এটি কূটনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও একে বিশ্বজনমতের প্রতিফলন হিসেবে ধরা হয়।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে পরিচালিত এই অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য বেসামরিক ব্যক্তি, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যার ফলে বিশ্বজুড়ে উঠেছে নিন্দার ঝড় এবং বিভিন্ন মহল থেকে আসছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান।
এমন কী দেশটির প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও মঙ্গলবার মন্তব্য করেন, গাজায় 'নির্বিচারে বোমা ফেলে' ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাতে বসেছে।
গতকাল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, আন্তর্জাতিক মহল থেকে যুদ্ধবিরতির চাপ আসলেও সামরিক বাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
গাজায় যুদ্ধরত সেনাদের তিনি রেডিও বার্তায় বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে বিজয় অর্জন করা না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব।'
'দুঃখ, বেদনা বা আন্তর্জাতিক চাপ, কোনো কিছুই আমাদেরকে থামাতে পারবে না', যোগ করেন তিনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় যুদ্ধক্ষেত্রে অস্থায়ী সামরিক ঘাঁটির নেতৃত্বে থাকা একজন কর্নেল ও অপর এক রেজিমেন্টের নেতৃত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সহ মোট ১০ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর এক দিনের ব্যবধানে ১৫ সেনা হারিয়েছিল ইসরায়েল।
নিহতদের বেশিরভাগই উত্তর গাজার গাজা সিটির শেজাইয়া মহল্লায় যুদ্ধ করছিলেন। এক ভবনে অবস্থানরত হামাস যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালাতে গেলে একদল ইসরায়েলি সেনা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তাদেরকে উদ্ধার করতে অপর এক দল সেখানে গেলে তারাও অতর্কিত হামলার শিকার হন। এ ঘটনার ফলশ্রুতিতে ইসরায়েলি সেনারা নিহত হন বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, এই অভিযানের ফল এটাই প্রমাণ করেছে যে ইসরায়েলি বাহিনী কখনোই গাজাকে বশীভূত করতে পারবে না।
'আপনারা যত বেশি সময় এখানে থাকবেন, ততই বাড়তে থাকবে নিহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, এবং এ থেকে আপনারা শুধু হতাশা ও লোকসান নিয়েই বের হয়ে আসতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ', যোগ করে হামাস।
টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্যে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া জানান, হামাসকে ছাড়া গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যেকোনো পরিকল্পনা এক 'বিভ্রম'।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস। এই হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং হামাস ২৪০ ব্যক্তিকে জিম্মি করে। নিহত ইসরায়েলিদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক ব্যক্তি। এরপর হামাসকে নির্মূলের উদ্দেশ্যে প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। শুরুতে ইসরায়েলের প্রতি বৈশ্বিক সহানুভূতি ও সমর্থন ছিল।
কিন্তু এরপর থেকে গাজায় টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচার হামলা চালিয়ে সেই সমর্থন ও সহানুভূতি হারিয়েছে দেশটি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৮ হাজার ৬০৮ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং ৫০ হাজার ৫৯৪ জন আহত হয়েছে। আরও হাজারো মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন ও নিখোঁজ আছেন। সেসব অবস্থানে অ্যামবুলেন্সও পৌঁছাতে পারছে না।
ডিসেম্বরের শুরুতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তির মেয়াদ শেষে ইসরায়েল উত্তর গাজা থেকে তাদের স্থল অভিযানকে দক্ষিণ গাজায় সম্প্রসারণ করে।
ইতোমধ্যে উত্তর গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও সেখানে থেমে নেই যুদ্ধ। এর আগে ইসরায়েল জানিয়েছিল, উত্তর গাজায় তাদের সামরিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
দক্ষিণে খান ইউনিস শহরকে ঘিরে তাদের অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েল। বুধবার বুলডোজার দিয়ে হামাস নেতা ইয়াহিয়া আল-সিনওয়ারের বাড়ির কাছে একটি সড়ক ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
উত্তর গাজার বেশিরভাগ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ আছে। দক্ষিণ গাজার হাসপাতালগুলো হতাহত মানুষের চাপে ভারাক্রান্ত।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের জানান, ইসরায়েল সফররত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান ইসরায়েলের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে হামাসের ওপর হামলা চালানোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টির ওপর জোর দেবেন, যাতে বেসামরিক ব্যক্তিরা রক্ষা পায়।
Comments