১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১০.৩৭ গুণ, আয় ১১.৬৩

health_minister_zahid_malek
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফাইল ছবি | সংগৃহীত

গত পাঁচ বছরে মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আয় বেড়েছে তিন দশমিক ৭৫ গুণ এবং ১৫ বছরে বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৩ গুণ। এই পাঁচ বছরের মধ্যে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ এবং ১৫ বছরে তা ১০ গুণেরও বেশি বেড়েছে।

বর্তমানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোনো ইলেকট্রনিকসামগ্রী নেই। ২০০৮ সালের নবম, ২০১৮ সালের একাদশ ও ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জাহিদ মালেকের জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানা গেছে।

সাটুরিয়া উপজেলা, মানিকগঞ্জ পৌরসভা ও সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে মানিকগঞ্জ-৩ আসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন জাহিদ মালেক। ২০০৮ সালে তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথমবার বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দায়িত্ব পান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবার হলফনামায় পেশা হিসেবে 'মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার' উল্লেখ করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি পেশা হিসেবে 'প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার' উল্লেখ করেছিলেন।

স্নাতকোত্তর পাস জাহিদ মালেক ২০০৮ সালে হলফনামায় পেশা হিসেবে 'ব্যবসা' উল্লেখ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলেও উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।

আয় বেড়েছে

জাহিদ মালেকের দেওয়া ২০০৮, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট অথবা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ব্যাংক আমানত ও অন্যান্য বাবদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বার্ষিক আয় এখন আট কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ২৫ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯১ টাকা। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে সাত কোটি ৫২ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৩ গুণ।

২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ছিল দুই কোটি ২০ লাখ ৮৩ হাজার ২১১ টাকা। সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ছয় কোটি নয় লাখ ১৩ হাজার ৮১৪ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে তিন দশমিক ৭৫ গুণ।

বেড়েছে অস্থাবর সম্পদও

হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ গুণ এবং গত পাঁচ বছরে বেড়েছে অর্ধেকেরও বেশি। এবার নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা, বন্ড ও ঋণপত্র, যানবাহন ও অন্যান্য বাবদ তার অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬১ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ছয় কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭ টাকা। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে ৬৩ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৬০৪ টাকা।

২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪২ কোটি ২৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭১ টাকা। সেই হিসেবে গত পাঁচ বছরে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ২৮ কোটি নয় লাখ ২০ হাজার ৯০ টাকা, অর্থাৎ এক দশমিক ৬৬ গুণ বেশি।

ইলেকট্রনিকসামগ্রী নেই

এবারের দেওয়া হলফনামায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উল্লেখ করেছেন তার কোনো ইলেকট্রনিকসামগ্রী নেই। যদিও ২০০৮ সালে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, তার এক লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিকসামগ্রী ছিল।

স্থাবর সম্পদ অপরিবর্তনীয়

হলফনামায় প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে জাহিদ মালেকের নামে অকৃষি জমি ছিল দুই দশমিক পাঁচ কাঠা এবং তার স্ত্রীর ছিল দুই দশমিক পাঁচ কাঠা। এ ছাড়া ৫৩ দশমিক চার শতক জমিতে ১১তলা আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন ও বাড়ি ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় ৪০ বিঘা কৃষি জমি ছিল। এই স্থাবর সম্পদের পরিমাণ এবারও অপরিবর্তনীয় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে স্ত্রীর নামে দুই দশমিক পাঁচ কাঠার ওই জমি এবার নির্ভরশীলদের নামে স্থানান্তর করা হয়েছে। যৌথ মালিকানার ৪০ বিঘা কৃষিজমিও এবার নির্ভরশীলদের নামে রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

স্ত্রীর সম্পদ কমেছে

হলফনামা অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী শাবানা মালেকের অস্থাবর সম্পদ কিছুটা কমেছে। ২০০৮ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকার বন্ড বা ঋণপত্র ছিল। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছিল তিন কোটি ছয় লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এবারের হলফনামায় তার উল্লেখ নেই। তবে ১৫ বছরে তার পাঁচ ভরি স্বর্ণ বেড়েছে। বর্তমান বাজার দরে পাঁচ ভরি স্বর্ণের দাম প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ২০০৮ সালের ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা বাদ দিলে ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর প্রায় ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ কমেছে।

তবে গত পাঁচ বছরের হিসাব অনুযায়ী তার স্বর্ণের পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে। সেই হিসাবে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে তার আয় কমেছে তিন কোটি ছয় লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা।

বেড়েছে দায়

এবারের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ও কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এক কোটি ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯ টাকা দায় রয়েছে। ২০০৮ সালে সেই দায়ের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৮০ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এক কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার ৭৯৯ টাকা ঋণ বা দায় বেড়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরের হিসাব ধরলে তার দায় বেড়েছে এক কোটি ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯ টাকা। কেননা, ২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি দায়ের কথা উল্লেখ করেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

5h ago