ভ্রমণ ভিসার পাকিস্তানিকে চাকরি, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যা বলব, সেটাই আইন’

পাকিস্তানি নাগরিককে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ
পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ আমিন নদভী। ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে বেড়াতে এসে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ আমিন নদভী। চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (আইআইইউসি) ২০২১ সালের জুন মাস থেকে শিক্ষকতা করছেন তিনি।

তার পাসপোর্ট, ভিসা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি হাতে পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার

জানা যায়, চট্টগ্রাম-১৫ সংসদীয় আসনের (সাতকানিয়া-লোহাগড়া) সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী পাকিস্তানি এই নাগরিককে ভিসা পাইয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছেন। ড. আবু রেজা আইআইইউসি'র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি বেআইনিভাবে তার পাকিস্তানি বন্ধু আমিন নদভীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিসহ বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।

জানতে চাইলে আইআইইউসি'র উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, 'মোহাম্মদ আমিন নদভী বিদেশি নাগরিক তা আমার জানা নেই। আমার জানামতে, তিনি বাংলাদেশি। এদেশেই উনার জন্ম। তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর ঘনিষ্ঠজন। চেয়ারম্যান সাহেবই তাকে নিয়োগ দিয়েছেন।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ এবং বাণিজ্য অনুষদের একাধিক সিনিয়র শিক্ষক জানান, এমপি আবু রেজার খারাপ সময়ে উপকার করেছিলেন দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ আমিন নদভী। তাই কৃতজ্ঞতা হিসেবে আমিন নদভীকে আইআইইউসি'তে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ আমিন নদভীর পরিচয়পত্র। ছবি: সংগৃহীত

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ২০২১ সালের জুন মাসে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে আমিন নদভীকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন প্রাথমিকভাবে তার বেতন ধরা হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা।

২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর আইআইইউসির রেজিস্ট্রারের সই করা এক আদেশে আমিন নদভীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোরালিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এমডিপি) নামে একটি বিভাগের পরিচালকের (ইনচার্জ) অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর সুবাদে তার বেতন-ভাতাও বেড়ে যায়।

অভিযোগ আছে, কিছুদিন আগে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে পাশ কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস কোঅর্ডিনেটর, মসজিদ ও লাইব্রেরি কমিটির সদস্য করা হয় আমিন নদভীকে।

বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকায় আমিন নদভী বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও তার বেতন নগদে পরিশোধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টস ডিরেক্টর অধ্যাপক আফজাল আহমেদ প্রতি মাসে তার হাতে বেতন হিসেবে নগদ অর্থ তুলে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এছাড়া ৪০ লাখ টাকা খরচ করে আমিন নদভীর অফিস ইনটেরিয়র ডেকোরেশন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আইআইইউসি'র একটি আবাসিক হলের সাথে সংযুক্ত ৬ রুমের একটি বিলাসবহুল বাসাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাকে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইইউসি'র হিসাব বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আফজাল আহমেদ বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করুন।'

আইআইইউসি'র একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আমিন নদভী দুবাইয়ে বাংলাদেশি নারীকে বিয়ে করার সুবাদে টিএফ (ট্যুরিস্ট ফ্যামেলি) ভিসায় বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। এর কিছুদিন পর তিনি এমপি আবু রেজার চট্টগ্রামের রূপালী আবাসিক এলাকার বাসায় ছিলেন। গত আড়াই বছর ধরে তিনি আইআইইউসি ক্যাম্পাসে থাকছেন। তবে তার পরিবার দুবাই থাকেন।

কোনো বিদেশি নাগরিক অন্য কোনো দেশে চাকরি করতে গেলে তার 'ই' ভিসা থাকতে হয়। কিন্তু আমিন নদভীর ভিসা ক্যাটাগরিতে 'টিএফ' উল্লেখ রয়েছে।

পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ আমিন নদভীর বাংলাদেশি ভিসা। ছবি: সংগৃহীত

ভিসায় এও বলা হয়েছে, ভিসা ইস্যুর ৭ দিনের মধ্যে যেন জেলা অথবা নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু পুলিশের বিশেষ শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, মো. আমিন নদভী সেই নির্দেশ পালন করেননি। ভিসায় কোনো ধরনের চাকরিতে নিয়োগ নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ থাকলেও ২ বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছেন।

পাকিস্তানি বন্ধুকে বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, 'আমি জেনে, বুঝেই মোহাম্মদ আমিন নদভীকে নিয়োগ দিয়েছি। তার নাগরিকত্ব পরিবর্তনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। আগামী ২-১ মাসের মধ্যে তা কার্যকর হয়ে যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি তিনি জানেন।'

ভ্রমণ ভিসায় বেড়াতে আসা পাকিস্তানি নাগরিককে চাকরি দেওয়ার আইনগত বৈধতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আইআইইউসিতে আমি যা বলব, তাই আইন বা নিয়ম। পাকিস্তানি নাগরিককে চাকরি দিলে আপনাদের সমস্যা কী? কোনো অনিয়ম হলে সেটা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তা দেখবে। আপনারা কেন এ বিষয়ে খোঁচাখুঁচি করছেন?'

অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে নিজেকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে দাবি করেন মো. আমিন নদভী। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার জন্ম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা এলাকায়। আমি পাকিস্তানি নাগরিক নই। আমি দীর্ঘদিন দুবাইয়ে চাকরি করেছি। সাতকানিয়ার এমপি ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমি আইআইইউসিতে চাকরি করি না। আইআইইউসি'র ট্রাস্টি বোর্ডে চেয়ারম্যান ড. আবু রেজা নদভী সাহেবকে আমি বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করি।'

তার পাকিস্তানি জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও বাংলাদেশের ভিসার তথ্য উল্লেখ করে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করতে চান এবং এ নিয়ে কোনো কিছু না লেখার অনুরোধ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

From gravel beds to tourists’ treasure

A couple of decades ago, Panchagarh, the northernmost district of Bangladesh, was primarily known for its abundance of gravel beds. With thousands of acres of land devoted to digging for the resource, the backbone of the region’s rural economy was based on those natural resources.

14h ago