বিএনপি নির্বাচনে এলে আইন মেনে সুযোগ তৈরি করবে কমিশন

বিএনপি নির্বাচনে এলে আইন মেনে সুযোগ তৈরি করবে কমিশন
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার ফাইল ছবি | সংগৃহীত

বিএনপি মত বদলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে আইন মেনে সুযোগ তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা।

আজ সোমবার সকালে নির্বাচন কমিশনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রাশেদা সুলতানা বলেন, 'যারা (নির্বাচনে) আসতে চাচ্ছেন না, এই মুহূর্তে যারা জানাচ্ছেন যে, আমরা যাচ্ছি না-যাব না, উনারা সিদ্ধান্ত নিলে, উনারা আসতে চাইলে নিশ্চয়ই আমরা স্বাগত জানাব। উনারা আসতে চেয়েছেন, আমরা ফিরিয়ে দেবো—এটা কখনোই হবে না।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এই পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা হইনি। উনারা যদি আসেন, আমরা কমিশনাররা বসব, আইন-কানুন দেখব, তারপর যেটা সিদ্ধান্ত হয়—হবে।

'আমরা চাই, সব দল এসে একটা সুন্দর নির্বাচন হোক,' বলেন তিনি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, '২০১৮ সালের নির্বাচনে উনারা এসেছিলেন, ওই নির্বাচনে উনাদের জন্য একটু স্পেস তৈরি করা হয়েছিল। যেভাবে আইনে হবে, আমরা সেভাবেই করব। এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলবো না এখন।'

গতকাল জাতীয় পার্টির পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তফসিল পেছানোর কথা বলেছেন। রিটার্ন ও মনোনয়ন জমা একই দিনে হয়ে গেছে। সে কারণে তিনি মনে করছেন, মনোনয়ন জমার সময় বাড়ানো যায় কি না—এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'এই বিষয়গুলো আমি অগ্রিম কিছুই বলবো না। পরিষ্কার কথা, অগ্রিম বলার সময় এখনো আসেনি। যখন আসবে, যেটা হবে, সেটাই বলবো। যখন পরিস্থিতি আসবে, পরিস্থিতি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

'উনারা যদি আসেন, আমরা ওয়েলকাম করব। সেটার জন্য যেভাবে উনাদের জন্য পথ সৃষ্টি করতে হবে, আমরা আইন দেখে-শুনে পথ বের করব,' যোগ করেন তিনি।

৩০ তারিখ যেহেতু রিটার্ন দাখিল ও মনোনয়ন জমার শেষ দিন, সেখানে জাতীয় পার্টি বলছে একটি দলের অসুবিধা হবে। সেটা আপনারা আমলে নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি এই মুহূর্তে সেটাও বলতে পারব না। ৩০ তারিখের আগেই যদি উনারা আসেন, এই সংকট তৈরি হওয়ার আগেই যদি উনারা আসেন, তাহলে তো এটা নিয়ে কোনো প্রশ্নই আসে না! সংকট হওয়ার মতো সুযোগ তো না-ও হতে পারে।'

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার মতো স্পেশ আছে কি না জানতে চাইলে রাশেদা খাতুন বলেন, 'নিশ্চয়ই! এখনো স্পেস আছে। উনারা স্পেস নিতে চাইলে নিতে পারেন। যখন একটি বিভাজন তৈরি হয়ে গেছে, তখন মাঠের রাজনীতি কি না আমার বলতে হবে না, জনগণ দেখতে পাচ্ছে কিন্তু অশান্ত আছে জন্য এটা শান্ত হবে না; এমন কিন্তু কোনো কথা নেই। যে কোনো মুহূর্তে শান্ত হতে পারে। উনারা যদি মনে করেন—আমরা যাব, সুষ্ঠু একটা নির্বাচন হোক, আমরা সবাই শরিক হই, হলে শান্ত হয়ে যাবে।'

তিনি বলেন, 'তাদের প্রতি আমার বার্তা, আমাদের ওপর আস্থা রাখেন। আসেন, নির্বাচন করেন, নিঃসন্দেহে আপনারা একটি ভালো, সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন। ভোটাররা এসে স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। তাদের যাকে ইচ্ছা তাকে মনোনীত করবে।'

তারা নির্বাচনে এলে আপনারা সময় বাড়িয়ে দেবেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'অতীতে যেভাবে হয়েছে, আমরা দেখব। (মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়) বাড়ানোর যদি প্রয়োজন হয়, বাড়াব।'

কমিশন আর সংলাপের উদ্যোগ নেবে কি না জানতে চাইলে রাশেদা সুলতানা বলেন, 'রাজনৈতিক যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটা (মীমাংসার) উদ্যোগ আমাদের আর নেওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আর এই সুযোগটা কমিশনের কখনোই ছিল না। যদি থাকতো, আমরা নিশ্চয়ই সেই স্টেপগুলো নিতাম।

'আমাদের পক্ষে যতটুকু নেওয়ার সুযোগ ছিল, আমরা ততটুকু নিয়েছি। আমরা বারবার উনাদের ডেকেছি; আমাদের কাছে আসেন। অন্তত আমাদের সঙ্গে বসেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। উনারা কিন্তু আসেননি। উনারা আসতে চাইলে আমরা নিষেধ করব না। সংকট দূর করতে দুই দলকে নিয়ে বসার সুযোগ আমাদের সাংবিধানিকভাবে নেই। আইনে কোনো সুযোগ নেই,' বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, 'আমরা কিন্তু চাই সবাই (নির্বাচনে) আসুক। এই স্পেসটা যদি উনারা কাজে লাগাতে চান, লাগাবেন। উনারা যদি আমাদের এই সময়ের মধ্যে না আসেন তাহলে আর জায়গা দেওয়ার সুযোগ নেই। উনারা যদি আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, জানান আনুষ্ঠানিকভাবে তাহলে অন্য কথা কিন্তু যদি একেবারেই না আসেন আমাদের ঘোষিত সময়ের মধ্যে; আমাদের তো পেছানোর আর কোনো সুযোগ নেই! আমাদের ইতোমধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।'

তাহলে লেভেল প্লেয়েং ফিল্ড এবং সবার জন্য সমান সুযোগের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন আপনারা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আসলে কোনো কিছুরই নিশ্চয়তা দেওয়া খুব কঠিন। যদি আক্ষরিক অর্থে আমরা ধরি, ওই নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন কিন্তু আমাদের প্রাণান্ত চেষ্টা থাকবে হান্ড্রেড পারসেন্টের ওপর যদি কয়েক পারসেন্ট দিতে হয় লেবার, আমরা সবাই দেবো। আমরা চাচ্ছি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা সেভাবে তৈরি করব। যারা আসছেন, তারাও তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা চায়! অংশগ্রহণ করার জন্য মনোনয়নপত্র কিনছেন অনেকেই, তারা যদি আসেন আমাদের তো তাদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা করতে হবে। যারা আসতে চাচ্ছে না, হঠাৎ আসতে চাইবে, তাদের জন্য করব—নো, সবার জন্য করব। যারা নির্বাচনের মাঠে থাকবেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে থাকবেন, প্রত্যেকের জন্য আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা তৈরি করব।'

তিনি বলেন, 'আমরা চাই, আমাদের যতগুলো নিবন্ধিত দল আছে, সবাই আসুক, একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হোক। একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হোক। উনারা না আসায়, সত্যি কথা, এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই...মানে এক ধরনের গ্যাপ তো আছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। গ্যাপ মানে, সবাই আসছে না। এটা এক ধরনের শূন্যতা বলেন, হতাশা বলেন, যা-ই বলেন জাতির কাছে আছে। এটা আমরা কখনোই অস্বীকার করিনি, এখনো করব না।'

নির্বাচনে একটা বড় অংশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যারা ভোটে আসছে না, প্রথমেই তারা বলছে আপনাদের ওপর আস্থা নেই। তার পরে বলছে, সরকার-প্রশাসনে আস্থা নেই—এ প্রসঙ্গে রাশেদা সুলতানা বলেন, 'আমরা যদি প্রত্যেকটা মানুষের ওপর আস্থাহীনতায় থাকি, তাহলে তো দেশটাই নেই। কিন্তু আসলে তো তা না, দেশটা তো আছে। কাউকে না কাউকে তো কাজগুলো করতে হবে। যে করবে, তাকেই যদি আমি আস্থায় না নেই তাহলে তো মুশকিল। আস্থায় নিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী...আমরা এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন করেছি, আমাদের সময় হাজারের উপরে নির্বাচন হয়ে গেছে। অসহযোগিতামূলক আচরণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ভোটের মাঠে যারা কাজ করেছেন, আমরা কিন্তু ও রকম খুব একটা পাইনি। দুএকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা আলাদা।'

তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে যেহেতু তারা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছেন। না থাকলে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। যিনি আইনি ব্যত্যয় ঘটাবেন, যিনি নিরপেক্ষতা হারাবেন, যিনি ঠিক মতো কাজ করবেন না, তার জন্য আইনে যেসব ব্যবস্থা দেওয়া আছে আমরা সেগুলো প্রয়োগ করব।

'ইতোমধ্যে আমরা প্রিসাইডিং অফিসারকে সাসপেন্ড করেছি ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং লক্ষ্মীপুরে। আইনে যতটুকু প্রয়োগ করার ক্ষমতা দেওয়া আছে, আমরা সেটা করব। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। আমরা যেভাবেই হোক সুন্দর একটা নির্বাচন করব,' বলেন তিনি।

রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে বলেও এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাশেদা সুলতানা।

Comments

The Daily Star  | English

$14b lost to capital flight a year during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

10h ago