আমদানি শুল্ক কমানোর পরও বেড়েছে চিনির দাম

চিনি, চিনি আমদানি, আমদানি শুল্ক, এনবিআর,
স্টার ফাইল ফটো

গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশের বাজারে চিনির দাম ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। অথচ চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। এরপরও বৈশ্বিক বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধি, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি ও দেশে সরবরাহ সংকটের কারণে দেশের বাজারে চিনির দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে, গত ২ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাঁচা ও পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করেছিল। দেশের বাজারে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও চিনির দাম না কমে বরং বেড়েছে।

এনবিআর শুল্ক কমানোয় আমদানিকারকদের আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি টন কাঁচা চিনির জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে। শুল্ক কর্তনের আগে যা ছিল ৩ হাজার টাকা। একইভাবে পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা জানান, রিফাইনারি ও ডিলাররা চিনির দাম বাড়িয়েছেন।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। কিন্তু বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়।

অর্থাৎ গত এক সপ্তাহে চিনির দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

তবে, কাঁচা ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ও ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক বহাল রেখেছে এনবিআর।

রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা তানভীর হোসেন জানান, গতকাল প্রতি ৫০ কেজির বস্তা চিনি বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৯০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬ হাজার ৪০০ টাকা।

ডিলারদের কাছে দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, মূলত মার্কিন ডলারের ঘাটতির কারণে চিনির দাম বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে।

২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ছিল কেজি প্রতি শূন্য দশমিক ৪০ ডলার। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ৫৪ ডলার এবং অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৫৭ ডলার।

আরেক পাইকারি বিক্রেতা নাঈম হোসেন জানান, আমার চিনির চাহিদা ছিল ২০ থেকে ৩০ বস্তা, অথচ গতকাল আমি চিনি পেয়েছি ১০ বস্তা।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের খুচরা বিক্রেতা এনামুল হক জানান, তিনি প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করছেন ১৪২ থেকে ১৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা।

খাতুনগঞ্জ বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক প্রতি মণ চিনি বিক্রি করেছেন ৫ হাজার টাকায় (৩৭.৩২ কেজি), যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪ হাজার ৭০০ টাকা।

তিনি বলেন, 'চিনির পর্যাপ্ত সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।'

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. তসলিম শাহরিয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও ডলারের উচ্চ মূল্য চিনির বাজারে প্রভাব ফেলছে।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে, ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে।

মো. তসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ঋণপত্র খুলতেও আমাদের অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে।'

বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ লাখ টন চিনির চাহিদা আছে। এর মধ্যে স্থানীয় মিলগুলো ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টন উৎপাদন করে। ফলে, বাকি চিনির যোগান দিতে বাংলাদেশকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Record toll collection on Padma and Jamuna bridges

Padma Bridge generated a record toll revenue of Tk 54.32 crore, while Jamuna Tk 41.81 crore

37m ago