অবরোধ, শ্রমিক অস্থিরতা

বেড়েছে পরিবহন খরচ, প্রভাব পড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে

রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, পোশাক শ্রমিক,
অবরোধ ফাঁকা সড়ক। ছবি: স্টার

আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমানভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে বিরোধী দলগুলো হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ। যার প্রভাব পড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায়। ফলে, পরিবহন ব্যয় আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়েছে। এমনিতেই দেশে গত ১৮ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে সাধারণ মানুষ। নতুন করে আবার নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

বিরোধী দলগুলোর ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে সহিংসতার আশঙ্কায় অধিকাংশ যানবাহন রাস্তায় চলাচল করেনি। এই সুযোগে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি মালিকরা ভাড়া ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছেন। ফলে পণ্য পরিবহনে বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পণ্য আমদানিকারক ও প্রসেসরের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, 'সিটি গ্রুপ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ পণ্য বাজারে সরবরাহ করতে পেরেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সিটি গ্রুপ সাধারণত নিজস্ব পরিবহনের পাশাপাশি ভাড়া করা যানবাহনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য সরবরাহ করে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, ভাড়া করা যানবাহন পাওয়া যায়নি।'

দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের পরিচালক শফিউল আথের তসলিম বলেন, অবরোধের আগে সকাল ৬টায় পণ্যবাহী গাড়িগুলো ঢাকার গুদাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যেত। কিন্তু এখন বিকেল ৩টা বা ৪টায় রওনা হয়।

'তারপর সেগুলো মধ্যরাতে গন্তব্যে পৌঁছায়, এটি এমন একটি সময় যখন সেখানে শ্রমিক পাওয়া যায় না। ফলে পরদিন সকালে যানবাহনগুলো ঢাকায় ফিরতে পারছে না। অথচ অবরোধের আগে একদিনে দুটি ট্রিপ শেষ করতে পারলেও এখন একটির বেশি ট্রিপ শেষ করতে পারছে না,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এতে আমাদের পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে আমরা খারাপ অবস্থায় আছি।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের একজন নির্বাহীও একই কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় আমরা চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছি না।'

রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন বলেন, অবরোধের আগে চট্টগ্রাম থেকে পেঁয়াজ ভর্তি একটি ট্রাক রাজধানীতে আনতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।

কারওয়ান বাজারের সবজির পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও থেকে লাউ ও শসাসহ এক ট্রাক সবজি ঢাকায় আনার খরচ ২৩ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৩২ হাজার হয়েছে।

চট্টগ্রামের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট আলী হোসেন বলেন, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের ভাড়া দুই থেকে ছয় হাজার টাকা বেড়েছে। যেমন- চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাজীপুরে পণ্য পাঠাতে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যানের ভাড়া বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৫ হাজার টাকা।

ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ বলেন, অবরোধের সময় বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস হলেও রপ্তানি পণ্য পাঠানো হচ্ছে না।

তিনি বলেন, 'ফলে আমদানি পণ্য ডেলিভারি দিয়ে খালি ফিরছে পরিবহন।'

বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এম শাহাদাত হোসেন বলেন, পোশাক খাতের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শ্রমিকরা সচেতন। এছাড়া তারা প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পান।

'আমি জানি না তারপরও কেন সারা দেশে শ্রমিক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে,' বলেন তিনি।

পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য মালিক, শ্রমিক, সরকার ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কাজ করছে।

প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, 'আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কার্যকর করতে মালিকরা সম্মত হয়েছেন। তাই এ অস্থিরতা গ্রহণযোগ্য নয়।'

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন, কারণ তারা লিড টাইম নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন।'

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে ব্যবসা করা সত্যিই কঠিন। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সুশাসন টেকসই ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'

Comments

The Daily Star  | English

World press freedom day: 266 journalists face criminal cases so far

Fears for physical safety and instances of judicial harassment are still profoundly visible -- only the actors have changed.

10h ago