জট কমায় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে গতি বাড়ছে
এ বছরের জুলাই ও আগস্টে চট্টগ্রাম বন্দরে তৈরি হওয়া জট ধীরে ধীরে কমে এসেছে। এতে বন্দরে পৌঁছানোর পর কনটেইনারবাহী জাহাজ দ্রুত বার্থ ও লোড-আনলোড করতে পারছে।
এর আগে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অন্যান্য কারণে আগস্টে জেটিতে জাহাজগুলোর ভিড়তে স্বাভাবিক সময়ের বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তথ্য অনুযায়ী, অপেক্ষার গড় সময় বেড়ে ছয় থেকে আট দিনে পৌঁছেছিল।
তবে অক্টোবরে তা দুই দিনেরও কম সময়ে নেমে এসেছে। এছাড়া চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে অর্ধেকের বেশি জাহাজ আসার একদিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়তে পেরেছে। বর্তমানে জাহাজগুলো কম সময়ের মধ্যে বার্থ করতে পারছে। মূলত জেটিগুলোতে জাহাজের অবস্থানের সময় কমায় এই জট কমেছে।
জুলাই ও আগস্টে জেটিতে জাহাজের গড় অবস্থানকাল তিন দিনের বেশি ছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে চার দিন পর্যন্ত হয়েছিল।
অক্টোবরে বন্দরের জেটি ভেড়ার পর কনটেইনারবাহী জাহাজ ছাড়ার আগে আমদানি কনটেইনার খালাস ও রপ্তানি কনটেইনার লোড করতে গড়ে দুই দশমিক ৪৮ দিন সময় লেগেছে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ প্রতিদিন ডেলিভারির কার্গোর সংখ্যা কমে আসায় তীব্র কনটেইনার জট কম ছিল।
তারা বলেন, কয়েক মাস ধরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভালো হয়েছে। ফলে জেটিতে বার্থের জন্য অপেক্ষার সময় ও অবস্থানকাল উভয়ই কমেছে।
এর আগে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বন্দরের ইয়ার্ড থেকে প্রতিদিন কনটেইনার ডেলিভারি ও স্থানান্তর মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এরপর আগস্টের শেষের দিকে বন্যার কারণে সপ্তাহব্যাপী যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
এর ফলে বন্দরে এক সময়ে প্রায় ৪৫ হাজার টিইইউ কনটেইনার স্তূপ জমে যায়। যা বন্দরের ইয়ার্ডের মোট ধারণ ক্ষমতার ৮৫ শতাংশ জায়গা পর্যন্ত পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা ৩৪ হাজার টিইইউএসে নেমে এসেছে।
বিদেশি শিপিং লাইনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াও বর্ষাকালীন খারাপ আবহাওয়ার কারণে দৈনিক পণ্য ডেলিভারি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কারণ বন্দরে যে পরিমাণ আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার আসে, তার মধ্যে বড় একটি অংশ বন্দরের ইয়ার্ডে খুলে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়। তাই বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনের কনটেইনার ডেলিভারিতে বিঘ্ন ঘটায় ইয়ার্ডে কনটেইনারের স্তূপ হয়ে যায়। এতে জেটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিং কার্যক্রমে বিলম্ব হয়। এর ফলে জেটিগুলোতে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বেড়ে যায় এবং ফলশ্রুতিতে জেটি খালি হওয়ার অপেক্ষায় থাকা জাহাজের সারি দীর্ঘ হয়।
'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ধীরে ধীরে গতি পেয়েছে। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে এবং এভাবে গত কয়েক মাসের বন্দরের ইয়ার্ডে জট ধীরে ধীরে কমেছে,' বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কর্তৃপক্ষ ধারাবাহিক ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জট নিরসন করতে পেরেছে।
তারা পুরনো কনটেইনার নিলামের গতি বাড়িয়ে ইয়ার্ডে আরও জায়গা তৈরির চেষ্টা করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বন্দর ইয়ার্ডে জায়গা খালি করতে ডেলিভারির জন্য সব 'ফুল কনটেইনার লোড' বা এফসিএল কনটেইনার সরাসরি বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি) স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়ার জন্য তারা ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন।
'ফুল কন্টেইনার লোড' বলতে পুরো কনটেইনারে একজন আমদানিকারীর পণ্যকে বোঝায়।
বন্দরের দুটি টার্মিনাল নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) ছয়টি জেটি আছে। এই দুটি টার্মিনাল বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হওয়া ৬৫ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে।
এই দুটি টার্মিনালে জাহাজের থাকার সময়সীমা ৪৮ ঘণ্টা।
এই দুটি টার্মিনাল পরিচালনাকারী সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হক জানান, তারা জুলাইয়ে সিসিটি ও এনসিটিতে ৭০টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে।
তাদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টার্মিনাল ছাড়তে পেরেছিল এবং ৬৩ শতাংশ ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান করেছিল। আগস্টে এই অনুপাত আরও খারাপ ছিল।
তিনি জানান, আগস্টে মোট ৬৭টি জাহাজের ৩১ শতাংশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রওনা হয় এবং ৬৯ শতাংশকে ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় জেটিতে থাকতে হয়।
তার ভাষ্য, কিন্তু অক্টোবরে এই একেবারেই পরিবর্তন হয়। অক্টোবরে ৮৪টি জাহাজের ৭০ শতাংশ জাহাজ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের কাজ শেষ করেছিল এবং বাকি ৩০ শতাংশের ৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছিল।
Comments