আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

অপ্রতিরোধ্য ভারত মলিন ইংল্যান্ডকে রাখল তলানিতেই

জয়রথে থাকা ভারত সেমিফাইনাল একরকম নিশ্চিতই করে ফেলল।

অপ্রতিরোধ্য ভারত মলিন ইংল্যান্ডকে রাখল তলানিতেই

ভারত বনাম ইংল্যান্ড
ছবি: রয়টার্স

দুই মেরুর দুই দলের লড়াইয়ের প্রথম অংশের পর চূড়ান্ত ফলের উল্টোটা হয়তো হতে পারে, সেই ইঙ্গিত দিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু দুরবস্থায় থাকা দলটির শিবিরে যেন নেমে এলো নিকষ কালো আঁধার। শীর্ষে ওঠা ভারতের সঙ্গে হারের পর তলানিতে থাকা ইংলিশরা যেন আরও গভীরে নামল। মাঝারি লক্ষ্য তো তারা পেরিয়ে যেতে পারলই না, বরং থামল ১০০ রান দূরে!

রোববার লখনউতে কঠিন ব্যাটিং কন্ডিশনে অধিনায়ক রোহিত শর্মার ৮৭ রানের ইনিংসের পর সূর্যকুমার যাদবের ব্যাট থেকে আসে ৪৯ রান। তাতে ভারত ২২৯ রানের পুঁজি পায়। এরপর বোলিংবান্ধব উইকেটকে কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডকে অলআউট করে দেয় ১২৯ রানেই, ৯১ বল বাকি থাকতে। জাসপ্রিত বুমরাহ ৩২ রানে নেন ৩ উইকেট। মোহাম্মদ শামি ২২ রানেই শিকার করেন ৪ উইকেট। ব্যাটে-বলে আরেকটি অসাধারণ পারফরম্যান্সে জয়রথে থাকা ভারত সেমিফাইনাল একরকম নিশ্চিতই করে ফেলল।

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ছয় ম্যাচের সবকটিই জিতে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে আবার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠল স্বাগতিক ভারত। সমান ম্যাচে ইংল্যান্ড দেখল টানা চতুর্থ ও সব মিলিয়ে পঞ্চম হার। মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে আগের আসরের চ্যাম্পিয়নরা থাকল তলানিতেই।

ভারতের বোলিংয়ের শুরুটা হয় অন্যদিনের মতো একই তালে। বুমরাহ দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ দেখান, মোহাম্মদ সিরাজ হয়ে যান খরুচে। সিরাজ তার প্রথম দুই ওভারে দিয়ে দেন ১৮ রান। পঞ্চম ওভারে ৩০ রানে চলে গিয়ে ইংল্যান্ড ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু এরপরই শুরু হয় তাদের দুঃস্বপ্নের সময়!

বুমরাহর বলে ইনসাইড এজে ডেভিড মালান আউট হয়ে যান ১৬ রানে। পরের বলেই জো রুট এলবিডব্লিউ গোল্ডেন ডাকে। শামি এসে বল এদিক-সেদিক করাতে থাকেন। অসহ্যকর যন্ত্রণায় যেন পড়ে গিয়েছিলেন বেন স্টোকস। টানা দুই ওভার হয় মেডেন। ৯ বলে রানের খাতা খুলতে না পেরে স্টোকস এলোপাথাড়ি ব্যাট চালান। শূন্য রানে স্টোকসও বোল্ড হয়ে ফিরে গেলে ৩৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড।

গুড লেংথে পড়ে মুভমেন্ট হওয়ায় টেস্ট ম্যাচ বোলিংয়ের দৃশ্যায়ন যেন হচ্ছিল বুমরাহ-শামির স্পেলে! একপাশে থেকে ধস দেখা জনি বেয়ারস্টোও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শামির ভেতরে আসা বলে তিনিও ইনসাইড এজে হয়ে যান বোল্ড। ৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড পড়ে যায় ব্যাকফুটে।

শামি তার প্রথম স্পেল শেষ করেন ৪ ওভারে মাত্র ৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে। সমান উইকেট নিয়ে বুমরাহ তার ৫ ওভারের স্পেলে দেন ১৭ রান। ঝড়-ঝাপটা সামলানোর দায়িত্ব পড়ে অধিনায়ক জস বাটলারের কাঁধেই। কিন্তু কুলদীপ যাদব এসে তাকে ফিরিয়ে দিলে ইংলিশদের মাথার উপরের ছাদই যেন ভেঙে পড়ে! ওভার দ্য উইকেট থেকে সিক্সথ স্টাম্পের আশপাশে বল পড়ে বড় টার্ন নিয়ে সাঁ করে ঢুকে ভেঙে দেয় স্টাম্প। বাটলার বুঝতেও পারেননি।

৫২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে নেতিয়ে পড়া ইংল্যান্ড মাথা তুলে কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারে মঈন আলী-লিয়াম লিভিংস্টোনের ব্যাটে। কিন্তু তাদের জুটিটা ২৯ রানের বড় হওয়ার আগেই হাজির শামি! দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলেই এসে ফিরিয়ে দেন ১৫ রান করা মঈনকে। এরপর স্পিনাররা উইকেট শিকারে সামিল হন।

রবীন্দ্র জাদেজার বলে স্টাম্পিং হয়ে যান ১০ রান করা ক্রিস ওকস। কুলদীপের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে বিদায় লিভিংস্টোনের। ৪৬ বলে ২ চারে সর্বোচ্চ ২৭ রানের ইনিংস খেলে যখন লিভিংস্টোন আউট হন, তখন ৮ উইকেট হারিয়ে একশ থেকেও ২ রান দূরে ইংল্যান্ড। সেই স্কোর ছুঁতে পারলেও শামি ও বুমরাহ এসে যথাক্রমে রশিদ ও উডের স্টাম্প উপড়ে দিয়ে প্রতিপক্ষকে রাখেন লক্ষ্য থেকে শতরান দূরে।

টস জিতে বোলিং নিয়ে দুর্দান্ত শুরু করেন ইংলিশ বোলাররা। আঁটসাঁট লেংথে বাউন্ডারির সুযোগই দেননি তারা। প্রথম দুই ওভারে আসে এক চার। সুযোগের অপেক্ষায় না থেকে ঝুঁকি নেওয়ার পথ বেছে নেন রোহিত। ডেভিড উইলিকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে চারের পর মারেন ছয়। তৃতীয় ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে ভারত আনে ১৮ রান। কিন্তু রোহিতকে সতর্কসীমায় ঢুকে যেতে হয় এরপরই দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেললে। টু-পেসড উইকেটে যথেষ্ট সিম মুভমেন্ট পেয়ে দারুণ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে আতঙ্কে পরিণত হন উইলি ও ওকস। শুবমান গিলকে ৯ রানেই ওকস ফিরিয়ে দেন ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড করে।

বিরাট কোহলি রানের খাতা খুলতেই পারছিলেন না। নবম বলে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ধরা পড়ে যান মিডঅফে। ওকস-উইলি জুটি নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চেপে ধরে ভারতকে। পাওয়ারপ্লের শেষ সাত ওভারে মাত্র ১৩ রান এলে তারা পাওয়ারপ্লে শেষ করে ৩৫ রানে। ছন্দ খুঁজে পাওয়া ওকসকে টানা বোলিং করাতে থাকেন ইংল্যান্ডের দলনেতা জস বাটলার। পাওয়ারপ্লের পরে এসে শ্রেয়াস আইয়ারকে ফিরিয়ে দেন ওকস। শর্ট বলে পুল খেলতে গিয়ে ৪ রানেই মরণ ঘটে শ্রেয়াসের। ২৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে সাত ওভারের দুর্দান্ত এক স্পেল শেষ করেন ওকস।

৪০ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারতের বিপদ সামলান রোহিতের সঙ্গে লোকেশ রাহুল মিলে দেখেশুনে খেলে। ওভারপ্রতি চারের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। ৬৬ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর রোহিত কয়েকটি বাউন্ডারি বের করলেই রান রেট বেড়ে যায়। টার্নিং পিচে রশিদের ওভার দেখেশুনে কাটিয়ে দেয় ভারত। এরপর আরেক স্পিনার লিভিংস্টোনের বোলিংয়ে কয়েকটি চার বের করেন রোহিত-রাহুল। ২৫তম ওভারে গিয়ে শতরানের দেখা পায় ভারত। ভালো স্কোরের পথে এগিয়ে যাওয়ার সুবাস যখন ছড়াচ্ছিল, আচমকা উইলিকে মারতে গিয়ে আউট হয়ে বসেন রাহুল। ৫৮ বলে ৩৯ রানে রাহুল ফিরে গেলে ১৩১ রানে ভারত হারায় চতুর্থ উইকেট। 

আরেকটি সেঞ্চুরির গন্ধ পাওয়া রোহিতও বড় শট খেলতে গিয়ে একই গন্তব্য অর্থাৎ ড্রেসিংরুমে পৌঁছান। ব্যাটারদের জন্য কঠিন পিচে বেশি সুযোগ পাননি, দুর্দান্ত সব শটে তবুও বাউন্ডারি বের করেন রোহিত। ১০ চার ও ৩ ছক্কায় তাই গড়তে পারেন ১০৩ বলে ৮৭ রানের ইনিংস। সূর্যকুমার এসে ততক্ষণে বলপ্রতি রান পেয়ে ভালো শুরু করেন। তার ট্রেডমার্ক সুইপ শটে চার বের করেন কয়েকটি। কিন্তু জাদেজা এসে রশিদের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। 

এক অঙ্কে জাদেজা ফিরে গেলে টেলএন্ডারদের সঙ্গে স্ট্রাইক পাওয়ার চিন্তায় পড়ে যেতে হয় সূর্যকুমারকে। কয়েকটি চার-ছক্কা মেরে শেষমেশ ৪৭ বলে ৪৯ রানে আউট হয়ে ফিরে যান যখন, ভারত ২০৮ রানে হারিয়ে ফেলে অষ্টম উইকেট। ৪৭তম ওভারে সূর্যকুমার আউট হয়ে যাওয়ার পর বুমরাহ ও কুলদীপ মিলে পুরো ওভার কাটিয়ে দিতে সক্ষম হন। শেষ বলে রানআউট হওয়া বুমরাহ ১৬ ও কুলদীপ অপরাজিত ৯ রান করে দলের লড়ার পুঁজিটা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

37m ago