আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

রিভিউ বিশ্লেষণ: বিশ্বকাপে রিভিউ নেওয়ায় সবচেয়ে সফল কোন দল?

বাংলাদেশ রিভিউয়ে ভালো, এমন কোনো ধারণা কারো মনেই বোধহয় না থাকবে। উল্টো খারাপ বলে উঠতে একটুও দ্বিধায় পড়বেন না কেউ কেউ। তবে ২০২৩ বিশ্বকাপের রিভিউয়ের হিসাব-নিকাশ দেখলে চমকেই উঠতে পারেন।

রিভিউ বিশ্লেষণ: বিশ্বকাপে রিভিউ নেওয়ায় সবচেয়ে সফল কোন দল?

বাংলাদেশ রিভিউয়ে ভালো, এমন কোনো ধারণা কারো মনেই বোধহয় না থাকবে। উল্টো খারাপ বলে উঠতে একটুও দ্বিধায় পড়বেন না কেউ কেউ। তবে ২০২৩ বিশ্বকাপের রিভিউয়ের হিসাব-নিকাশ দেখলে চমকেই উঠতে পারেন।
বিশ্বকাপে রিভিউ নেওয়ায় সবচেয়ে সফল দল
ছবি: রয়টার্স

যদি বলা হয়, সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোনো পরিসংখ্যানের তালিকায় সবার উপরে আছে, হয়তো ধরে নেবেন যে সেটা নেতিবাচক কিছুই। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ একটি জায়গায় 'সবচেয়ে ভালো' করেছে। বাংলাদেশ রিভিউয়ে ভালো, এমন কোনো ধারণা কারো মনেই বোধহয় না থাকবে। উল্টো খারাপ বলে উঠতে একটুও দ্বিধায় পড়বেন না কেউ কেউ। তবে ২০২৩ বিশ্বকাপের রিভিউয়ের হিসাব-নিকাশ দেখলে চমকেই উঠতে পারেন।

ব্যাটিংয়ে রিভিউ নিয়ে পঞ্চাশ ভাগের বেশি সফল হয়েছে একটি মাত্র দল— বাংলাদেশ। বাংলাদেশি ব্যাটারদের নেওয়া শতকরা ৬০ ভাগ ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম) সফল প্রমাণিত হয়েছে। পাঁচবার রিভিউ নিয়ে তিনবারই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

খেয়াল করেছেন হয়তো, আলাদা করে উল্লেখ করা— ব্যাটিংয়ে। সব মিলিয়ে হিসাব করলেও পাওয়া যায়, রিভিউয়ে দ্বিতীয় সফল দল বাংলাদেশ। টাইগাররা কতটা সফল হলো, একে একে সবগুলো দলের 'রিভিউ-নামা' দেখলে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

সব মিলিয়ে যত রিভিউ নিয়েছে, তার অর্ধেকেই সফল হয়েছে— বিশ্বকাপে এমন কোনো দল ছিল না। ১৫বার রিভিউ নিয়ে ছয়টি নিজেদের পক্ষে এনে ভারতের ৪০ শতাংশ সফলতাই সর্বোচ্চ। আম্পায়ারস কলের কবলে পড়ে সবচেয়ে দুর্ভাগাও বনেছে ভারতই। তাদের পাঁচবারের চেয়ে বেশি আর কোনো দলের বিপক্ষে আম্পায়ারস কল যায়নি।

৩৬.৩৬ শতাংশ সফলতা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। ১১ রিভিউয়ে চারবার সফল হয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য বাংলাদেশই সবচেয়ে কম রিভিউ নিয়েছে। অংশগ্রহণকারী ১০ দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রিভিউ নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৩ রিভিউয়ে মাত্র সাতবার সফল হয়েছে প্রোটিয়ারা। তারপরও ৩০.৪৩ শতাংশ নিয়ে সফলতার তালিকায় তৃতীয় স্থানে তারাই। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো তিনবার আম্পায়ারস কলের শিকার হয়েছে শ্রীলঙ্কাও। ২০ বার ডিআরএস নিয়ে ছয়টিতে সিদ্ধান্ত বদলাতে সক্ষম হয়েছে লঙ্কানরা। শতকরা ৩০ ভাগ সফলতায় তারা জায়গা পাচ্ছে চতুর্থ স্থানে।

নিউজিল্যান্ড রিভিউয়ের তালিকায় নিজেদের পাচ্ছে যৌথভাবে পাঁচ নম্বরে। আফগানিস্তানের সফলতার হারও কিউইদের সমান—  ২৭.৭৮ ভাগ। দুই দলই ১৮টি রিভিউ নিয়ে পাঁচটিতে সফল হয়েছে। আফগানদের চারবার আম্পায়ারস কলের আক্ষেপে পুড়তে হলেও কিউইদের বিপক্ষে সেটা যায়নি একবারের বেশি।

অস্ট্রেলিয়া কোথায়? একুশটি রিভিউ নিয়ে মাত্র চারবারই সফল হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অজিরা। ১৯.০৫ শতাংশ সফলতা নিয়ে তারা আছে ষষ্ঠ স্থানে। ১৭.৬৫ শতাংশ সফলতা নিয়ে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দী ইংল্যান্ড আছে ঠিক পেছনেই। ১৭টি রিভিউয়ের স্রেফ তিনটিতে সিদ্ধান্ত এসেছে ইংলিশদের পক্ষে।

লিগ পর্বের পয়েন্ট তালিকার দশে অর্থাৎ সবার নিচে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করা নেদারল্যান্ডস রিভিউয়ের তালিকাতেও শেষেই থেকেছে। অবশ্য এক্ষেত্রে তারা সঙ্গী পেয়েছে। ডাচদের মতো ১৪.২৯ ভাগ সফলতার হারের বেশি যেতে পারেনি পাকিস্তান। ১৪টি রিভিউ নিয়ে দুইবার সফলতার মুখ দেখেছে পাকিস্তানিরা। আর নেদারল্যান্ডসকে তিনবার সিদ্ধান্ত বদল করতেই খরচ করতে হয়েছে ২১ রিভিউ।

আউট মানি না

ব্যাটিংয়ে আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর, আউট নয় দাবি তুলে রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটাররাই সবচেয়ে বেশি সঠিক হয়েছেন। আগেই দেখেছেন, তাদের সফলতা ৬০ শতাংশ।

এই তালিকায় রিভিউয়ের বেলায় দ্বিতীয় সফল দল নিউজিল্যান্ড। ছয়বারের মধ্যে তিনবারই তারা সিদ্ধান্ত বদলাতে পেরেছে। শ্রীলঙ্কাও সমান তিনবার সফল হয়েছে। যদিও আটটি রিভিউ নিয়ে ৩৭.৫ শতাংশ সফলতায় তারা তৃতীয় স্থানে। স্বাগতিক ও রানার্সআপ ভারত তিনবারের বেশি রিভিউ নেয়নি ব্যাট হাতে। তাতেই একবার সফল হয়ে তাদের সফলতার হার ৩৩.৩ শতাংশ।

ব্যর্থ বিশ্বকাপ অভিযানে গতবারের শিরোপাজয়ী ইংলিশরা ব্যাট হাতে রিভিউয়ে ২৫ ভাগ সময়ে সফল হয়েছে। আটবার আম্পায়ারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দুইবার সিদ্ধান্ত বদল করেছে তারা। সমান সফলতা দেখেছে আফগানিস্তানও। তবে ব্যাট হাতে শুধু একটিবার সফল হতে চারটি রিভিউ নেন আফগানরা। 

বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া রিভিউয়ের বেলায় মাঝারি মানের সাফল্যই দেখিয়েছে। ব্যাট হাতে অজিরা ১০ রিভিউ নিয়ে মাত্র দুইবার আম্পায়ারকে ভুল প্রমাণ করেছে। তাদের সমান ২০ ভাগ সফলতা পাকিস্তানেরও। পাঁচটি ডিআরএসে কেবল একবার পাকিস্তানিরা জিতেছে আম্পায়ারের সঙ্গে।

নেদারল্যান্ডসের ব্যাটাররা সবচেয়ে বেশি ১২টি রিভিউ নিয়েছেন। কিন্তু দুইবারের বেশি আউটকে নট-আউটে রূপান্তর করতে পারেননি। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত দক্ষিণ আফ্রিকানরা অবশ্য তিনবারের বেশি রিভিউ নেননি। কিন্তু তাতে প্রোটিয়াদের সফলতার হার শূন্য!

এটা আউট না?

বোলিংয়ের সময় রিভিউ নেওয়ার বেলায় কিন্তু বাংলাদেশ নিচের সারিতেই। ছয়বার আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তুলে, উত্তরে বাংলাদেশিরা আউট এনেছেন মাত্র একবার। ১৬.৬৭ শতাংশ সফলতা নিয়ে একই কাতারে আছে নিউজিল্যান্ডও। ১২ রিভিউয়ে দুইবার সফল হয়েছে কিউইরা।

এই সফলতার হারকে খারাপ বলবেন? আরও তিনটি দল তো এর চেয়েও খারাপ করেছে রিভিউয়ের পরীক্ষায়! সেই তিনটি দল— ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডস। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিন দেশেরই অধিনায়ক সমান নয়টি করে রিভিউ নিয়েছেন। তাতে তারা প্রত্যেকেই স্রেফ একবার করে সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া রিভিউয়ের বেলায় বোলিংয়েও মলিন। ১১ বারের মধ্যে দুইবার আম্পায়ার তাদের চ্যালেঞ্জে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন।

খারাপের কথা তো গেল, ভালো করেছে কারা? ভারতই সফল এখানে। ১২টি রিভিউ নিয়ে পাঁচবারই সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য করেছে দলটি। রিভিউয়ের বেলায় শান্ত থেকে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছেন লোকেশ রাহুল। এই উইকেটরক্ষকের ভাগেও তাই যায় কৃতিত্ব।

ভারতের শতকরা ৪১.৬৭ ভাগ সাফল্যের পেছনে থেকে দ্বিতীয় স্থান দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রোটিয়ারা সবচেয়ে বেশি ২০ বার বোলিংয়ে রিভিউ নিয়েছে। তাতে সাতবার সঠিক প্রমাণিত হয়ে ৩৫ শতাংশ সফলতা তাদের। 

আফগানিস্তান ১৪টি রিভিউ নিয়েছে। তাতে চারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আফগানদের সফলতা ২৮.৫৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ১২টি ডিআরএস নিয়ে নট-আউটকে আউটে পরিণত করেছে তিনবার। রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপা জেতা অস্ট্রেলিয়ার ১৮.১৮ শতাংশের চেয়ে এই তালিকায় বেশি সফলতা (২৫ শতাংশ) পেয়েছে তারা।

Comments