আজ বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করবেন।

তিনি পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে একটি এবং টানেল পার হয়ে সকাল ১১টায় আনোয়ারায় নদীর দক্ষিণ তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন।

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলার মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি সোমবার সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী দিনের খাম ও প্রথম পানির নিচের সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ সিলমোহরও প্রকাশ করবেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) মাঠে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে জেলাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করায় আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করছে।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মঞ্চে থাকবেন। অনুষ্ঠানস্থলে নৌকার আদলে একটি বড় মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।

মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল বলেন, সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ অনুষ্ঠানস্থলে স্যানিটেশন ও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে এবং নারীদের নির্বিঘ্নে অংশগ্রহণের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষের অংশগ্রহণে আমাদের জনসভা বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য গর্বের বিষয়। লাখো মানুষের জন্য, বিশেষ করে বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দর নগরীর বাসিন্দাদের একটি 'স্বপ্ন সত্যে পরিণত' হলো। বহুল প্রত্যাশিত মাল্টিলেন আন্ডারওয়াটার এক্সপ্রেসওয়ে টানেলটি দক্ষিণ এশিয়ার এ ধরনের প্রথম টানেল এবং এই অঞ্চলের একটি প্রধান নদী কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি যানবাহন টানেলটি ব্যবহার করতে পারবে, যা বছরে প্রায় ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন যানবাহনের সমান।

তিনি বলেন, টানেলটি দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ১৬৬ শতাংশ বাড়াতে সাহায্য করবে।

কাদের বলেন, 'টানেলটি চট্টগ্রাম শহর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরের দূরত্বও কমিয়ে দেবে। কারণ এটি অর্থনীতিকে আরও প্রাণবন্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'

বাসসের সঙ্গে আলাপকালে মেগা প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেলটি বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ এটি এই অঞ্চলে নদীর তলদেশে প্রথম সড়ক সুড়ঙ্গ।

এটি চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই শহরের মতো 'দুটি শহরকে একটি শহরে' পরিণত করবে। কারণ এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে এবং শিল্পায়ন, পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও সড়ক যোগাযোগ বিকাশে অপার সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করে শহরের পরিধিকে সমগ্র অঞ্চলে প্রসারিত করবে।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশ পানির নিচের সড়ক সুড়ঙ্গের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যা অবশ্যই সমগ্র জাতির জন্য গর্বের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ব্যাপক সুবিধা দেবে।

টানেলটি এই অঞ্চলে শিল্পায়নকে বাড়িয়ে তুলবে। কারণ চট্টগ্রাম-কেইপিজেডের আনোয়ারায় দুটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং হালিশহরে চট্টগ্রাম ইপিজেড ও আনোয়ারাতে চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) এই টানেলের জন্য অত্যন্ত সুবিধাপ্রাপ্ত হবে।

আলম বলেন, এটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে সংযুক্ত করবে। কক্সবাজারে চলমান ও পরিকল্পিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাবকেও সুবিধা দেবে, যা ইতোমধ্যেই দেশের একটি পর্যটন কেন্দ্র।

এভাবে পদ্মা সেতুর মতো এই টানেল দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

তিনি বলেন, টানেল ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং কর্ণফুলী নদীর তীরে পরিকল্পিত শিল্পায়নকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান করা গেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। পাশাপাশি এটি মিজোরাম ও মণিপুরসহ ভারতের 'সেভেন সিস্টারস'র সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়াতে এবং এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটনের প্রসার ঘটাতে পারে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, পুরো রুটের দৈর্ঘ্য নয় দশমিক ৩৯ কিলোমিটার (পাঁচ দশমিক ৮৩ মাইল), টানেলটি তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার (দুই দশমিক ০৬ মাইল) দৈর্ঘ্য তৈরি করে এবং এর ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার (৩৫ দশমিক চার ফুট)। এটি ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এবং এর প্রায় অর্ধেক চীনের এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করেছে।

এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উন্নত হবে। চীনের একটি কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা টানেল বোরিং ফেজও উদ্বোধন করেন।

মাল্টিলেন টানেল রুটটি একদিকে নেভি কলেজ ও অন্যদিকে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) কাছাকাছি নদীর মধ্য দিয়ে গেছে। এতে কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটি সেতুর যানজটও কমবে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান বলেন, টানেলটি চট্টগ্রামকে দুটি শহর থেকে একটি শহরে পরিণত করে অর্থনীতি ও আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করবে। টানেল উদ্বোধনের অনুষ্ঠানস্থলে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

10h ago