অবৈধ বালু উত্তোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগের জবাবে যা বললেন দীপু মনি
চাঁদপুরে মেঘনা নদী থেকে সেলিম খানের অবৈধ বালু উত্তোলন বহুল চর্চিত বিষয়। অভিযোগ আছে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সেলিম খান মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন।
অবৈধ বালু উত্তোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগের জবাব দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
দ্য ডেইলি স্টার: নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী মন্তব্য করেছিলেন যে মেঘনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে 'চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে'। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
দীপু মনি: তিনি বলেছেন, চাঁদপুরের মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের পেছনে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সহায়তা আছে এবং মেঘনা দখলের পেছনে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর হাত আছে—যা সর্বৈব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কারণ, চাঁদপুরে একজনই নারী মন্ত্রী আছেন বর্তমানে, সেটা আমি এবং আমার সঙ্গে কোথাও কোনো অবৈধ বালু উত্তোলন বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক নদী দখলে কোনো সহায়তা বা পৃষ্ঠপোষকতার প্রশ্নই ওঠে না।
একজন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তির এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত এবং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের বক্তব্য অবশ্যই অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ডেইলি স্টার: ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কয়েকটি সরকারি দপ্তরে অন্তত ১৫টি ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। কেন?
দীপু মনি: আমার প্রতিটি চিঠিতে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়া আছে যে সেগুলো কেন পাঠানো হয়েছে।
মেঘনায় নাব্যতার সমস্যা সম্পর্কে তারা সবাই জানেন, যারা ওই অঞ্চলে মূল নৌপথে এবং পদ্মা ও মেঘনার চরগুলোতে নিয়মিত যাতায়াত করেন। কীভাবে ডুবোচরগুলোকে এড়িয়ে ভীষণ সাবধানতার সঙ্গে চলতে হয়, কীভাবে বারবার নৌযান ডুবোচরে আটকে যায়, তা ওই অঞ্চলের মানুষ জানেন।
নাব্যতা রক্ষায় তাই ড্রেজিং অপরিহার্য। কখনো কখনো ডুবোচরের কারণে পানির ধাক্কায় নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের শিকার হয়। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও আবার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলিত বালু ব্যবহৃত হয়। মেঘনায় বালু উত্তোলন হয় সবসময়। মূলত নাব্যতা রক্ষায় ও ভাঙন রোধে ডুবোচর বা চর কেটে দেওয়ার জন্য ড্রেজিং করা হয়।
এই বালু উত্তোলনের মাধ্যমে সরকারও রাজস্ব আয় করে বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে। বালু উত্তোলনকারীদের জন্যও এটি একটি ব্যবসা।
এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে আমার এলাকার স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি বা অন্য কেউ কোনো বৈধ কাজ করতে চাইলে সে কাজে তাকে সহায়তা করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমার এলাকার একটি ইউনিয়নের দলীয় নেতা ও চেয়ারম্যান যখন বৈধভাবে বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে আমার সহযোগিতা চেয়েছেন, তখন মেঘনা নদীর নাব্যতা রক্ষা এবং কিছু এলাকার ভাঙন রোধে তাকে বালু উত্তোলনে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সময়ে উল্লিখিত স্বব্যাখ্যাত ডিওগুলো আমি দিয়েছি।
যদি সেলিম খানের বালি উত্তোলন অবৈধ হতো, তবে অবশ্যই জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ বা কোস্ট গার্ড—কেউ আমাকে জানাতো। বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের নানা সংশ্লিষ্ট দপ্তরও নিশ্চয়ই আমাকে জানাতো। কেউ কখনো বৈধতার প্রশ্ন উত্থাপন করেনি।
সরকারের সব নিয়মনীতি অনুসরণ করেই সেখানে বালু উত্তোলন হয়েছে বলেই আমি সবসময় জেনেছি এবং জেনেছি তার বালু উত্তোলন বৈধ ছিল।
ডেইলি স্টার: আপনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছেও তিনটি ডিও লেটার পাঠিয়েছেন, সেলিম খান ও তার ছেলেকে বালু উত্তোলন করতে দিতে মুখ্য সচিব পর্যন্ত সুপারিশ করেছেন। এটা কেন করতে হলো? মুখ্য সচিবের এখানে কী ভূমিকা আছে?
দীপু মনি: মুখ্য সচিব প্রায়শই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয়ে কিংবা কখনো কোনো কাজের দ্রুত বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করেন।
ডেইলি স্টার: সেলিম খান সরকারি কোষাগারে অর্থ না দিয়েই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এটা কি আপনি জানতেন?
দীপু মনি: না, এমন কোনো তথ্য আমার কখনো জানা ছিল না।
ডেইলি স্টার: স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, আপনি সেলিম খানের সঙ্গে বালু ব্যবসায় জড়িত।
দীপু মনি: না। আমি কারো সঙ্গেই কোনো ব্যবসায় জড়িত নই। আমি রাজনীতিক। আমি একজন চিকিৎসক, আইনজীবী ও জনস্বাস্থ্য পেশাজীবী। আমার পরিবারেরও সবাই পেশাজীবী, কেউ ব্যবসায়ী নয়। যারা আমাকে চেনেন, তারা সবাই এটা জানেন। যদি স্থানীয় কোনো রাজনীতিক বা বাসিন্দা এমন কথা সত্যিই বলে থাকেন, তাহলে হয় তিনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যাচার করছেন।
ডেইলি স্টার: অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশের পর দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সেলিম খানকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু, এরপরও আপনি দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে সেলিম খানকে সভাপতি সম্বোধন করে ও তার উপস্থিতিতে একাধিক দলীয় সভা ও সেমিনার করছেন। এতে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় কি? বহিষ্কার করা হয়েছে জেনেও একজন নেতাকে কেন দলীয় অনুষ্ঠানে রাখছেন?
দীপু মনি: সেলিম খানের ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রচার করেছে মাত্র, সাংগঠনিক কোনো প্রক্রিয়া কোথাও অনুসরণ করেনি। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছেও উপজেলা আওয়ামী লীগ জেলার মাধ্যমে তাকে বহিষ্কারের কোনো সুপারিশ কখনো করেনি।
কাজেই কেন্দ্রীয় পর্যায়েও বিষয়টি কখনো উত্থাপিত হয়নি বা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণও কখনো করা হয়নি। কাজেই সেলিম খান বহিষ্কৃত নন। আমার একটি ইউনিটের সভাপতি হিসেবে এবং যেহেতু বহিষ্কৃত নন, তাই দলীয় কর্মকাণ্ডে নিয়মিত তিনি অংশ নেন।
ডেইলি স্টার: নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সেলিম খান এখনো প্রায় ২৬৭ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি। ডিও লেটারের মাধ্যমে আপনি সেলিম খানকে সহায়তা করেছেন। আপনার সঙ্গে সখ্যতার কারণেই তিনি সরকারি কোষাগারে টাকা দিচ্ছে না—বিষয়টি কি এমন?
দীপু মনি: যতটা জানি, বিষয়টি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। কাজেই এ বিষয়ে মন্তব্য সমীচীন নয়।
ডেইলি স্টার: সংসদ সদস্য হিসেবে আপনার কি জানা আছে যে আপনার এলাকার মেঘনা নদীতে এখনো অবৈধভাবে রাতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে? অভিযোগ আছে, অবৈধ বালু উত্তোলনের টাকার ভাগ সেলিম খান আপনাকে দেন।
দীপু মনি: আমার এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই।
আমি আগেই বলেছি, আমি ব্যবসায়ী নই। আমার গত ৪১ বছরের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক জীবনে এমন কোনো নজির নেই, যার ফলে কেউ যৌক্তিকভাবে এমন অভিযোগ করতে পারবেন যে অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ডের দ্বারা আমি আর্থিকভাবে কখনো লাভবান হতে পারি।
Comments