যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানোর ৩ দিন আগে তুলে নিয়েছিল পুলিশ, অভিযোগ স্ত্রীর

যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানোর ৩ দিন আগে তুলে নিয়েছিল পুলিশ, অভিযোগ স্বজনের
জানে আলম, কালো রঙের টি-শার্ট পরে আছেন (বাম থেকে দ্বিতীয়) | ছবি: সংগৃহীত

অবৈধ অস্ত্র রাখা ও ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগে দায়ের মামলায় চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার এক যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

তার স্বজনের অভিযোগ, তিন দিন আগেই পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।

গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম জেলা যুবদলের যোগাযোগ বিষয়ক সহসম্পাদক জানে আলমের পরিবারের আরও অভিযোগ, অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়েছে পুলিশ।

তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাউজান থানা পুলিশ জানায়, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তিন জনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আগের দিন বুধবার দিবাগত রাত রাউজান থানায় নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় জানে আলমসহ তিনজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ও বাকিদের পলাতক দেখায় পুলিশ।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে সক্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে পুলিশ। পলাতক আসামিদের মধ্যে রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদ ওরফে ফিরোজ মেম্বার ওমরাহ হজ পালন করতে মক্কায় রয়েছেন।

এই মামলার আরেক আসামি চট্টগ্রাম উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউসুফ তালুকদার।

এজাহার অনুসারে, রাউজান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) টুটন মজুমদারের নেতৃত্বে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাউজান থানাধীন ১০ নম্বর পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড় ঠাকুরপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে জানে আলম (৪৬), আবদুল্লাহ আল খোখান (৩৮) ও আবু বক্কর সিদ্দিক বাবুকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের অভিযোগ, তারা উপজেলা সদরে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাদের কাছ থেকে দুটি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র (এলজি), দুই রাউন্ড কার্তুজ, দুটি রামদা ও একটি লোহার কাটার জব্দ করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, মো. শাহ আলম, মো. ইউসুফ তালুকদার, জানে আলম, লোকমান, মো. জসিম ও ফিরোজ মেম্বার পুলিশের অভিযানের সময় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ অস্ত্র আইনে ও দণ্ডবিধির ৩৯৯ ও ৪০২ ধারায় দুটি মামলা করেছে।

জানে আলমের স্ত্রী রুনা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামী কাতার প্রবাসী। বছর খানেক আগে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন এবং আবার ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

'রাজনীতি করলেও কারও সঙ্গে তার ঝামেলা নেই। গত ১৬ তারিখ তিনি রাউজানে আমাদের শ্বশুর বাড়িতে পুকুরে মাছ ছেড়ে ফিরে আসার সময় তার মোটরসাইকেল গতিরোধ করে পুলিশ। সে সময় তাকে ও লিটনকে আটক করে,' বলেন রুনা।

তিনি আরও বলেন, 'স্থানীয়দের মাধ্যমে সেদিনই খবর পেয়ে আমি চট্টগ্রাম শহর থেকে রাউজান নোয়াপাড়া পুলিশ বক্সে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে বলা হয়েছিল, রাউজান থানায় আমার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি রাউজান থানায় গিয়ে আমার স্বামীর বিষয়ে খোঁজ করলে তারা আটকের তথ্য অস্বীকার করে। এক পর্যায়ে আমাকে থানা থেকে বের করে দেয়।

'থানার বাইরে অপেক্ষা করে আমি ফিরে আসি। পর দিন আমি থানায় লোক পাঠিয়েও আমার স্বামীর খোঁজ পাইনি। তিন দিন পরে গত বৃহস্পতিবার খবর পাই, আমার স্বামী পুলিশের কাছে অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে,' বলেন রুনা।

জানে আলমকে ফাঁসানো হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আগে মামলা আছে এবং আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন। হয়রানির জন্য তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।'

রুনার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টুটুন মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই অভিযোগ সত্য নয়। আমরা তাদের হাতে-নাতে গ্রেপ্তার করেছি। লিটনের নামে আগে চুরির মামলা ছিল। জানে আলমকে অস্ত্রসহ ধরেছি।'

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তেউয়ব মো. আরিফ বলেন, 'তুলে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানোর অভিযোগের ব্যাপারে ওসি ভালো বলতে পারবে৷ তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি৷ অভিযোগ পেলে আমরা খতিয়ে দেখবো।'

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

1h ago