ওমরায় থাকা বিএনপি নেতাকে ডাকাতি ও অস্ত্র মামলার আসামি করল পুলিশ

রাউজান থানা পুলিশের বুধবার রাতের অভিযানে গ্রেপ্তার ৩ আসামি। ছবি: সংগৃহীত

ওমরা পালন করতে মক্কায় অবস্থানরত বিএনপির এক নেতাকে অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার আসামি করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের রাউজান থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। 

এছাড়া, মামলায় উল্লেখিত ঘটনাস্থলে না থেকেও স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকেও আসামি করায় এ মামলা নিয়ে পুলিশের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতারা।

গতকাল বুধবার রাতে পুলিশের এক অভিযানের পর রাউজান থানায় ৯ জনকে আসামি করে এ দুটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ৩ জনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ও বাকিদের পলাতক দেখিয়েছে পুলিশ।

মামলার ৯ আসামির মধ্যে রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ ওরফে ফিরোজ মেম্বার ওমরাহ হজ পালন করতে বর্তমানে মক্কায় আছেন বলে পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে ফিরোজসহ অন্যান্য বিএনপি নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, রাউজান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) টুটন মজুমদার বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাউজান থানার পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন পরিষদের বড় ঠাকুরপাড়া গ্রামে ইটের রাস্তায় অভিযান চালায়। এ সময় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে জানে আলম (৪৬), আবদুল্লাহ আল খোকন (৩৮) এবং আবু বক্কর সিদ্দিক বাবুকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ তাদের কাছ থেকে দুটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র (এলজি), ২ রাউন্ড কার্তুজ, দুটি রামদা ও একটি লোহার কাটার জব্দ করে।

এজাহারে আরও বলা হয়, অভিযানের সময় মো. শাহ আলম, মো. ইউসুফ তালুকদার, লোকমান, মো. জসিম ও ফিরোজ মেম্বার ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। 

এ ঘটনায় পুলিশ অস্ত্র আইনে ও দণ্ডবিধির ৩৯৯/৪০২ ধারায় দুটি মামলা করে।

অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার জানে আলম জেলা যুবদলের সহ-যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক বলে স্থানীয় ও দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

এছাড়া আসামি মো. ইউসুফ তালুকদার চট্টগ্রাম উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-সম্পাদক।

ইউসুফ ও ফিরোজ দুজনের দাবি, তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পুলিশ রাজনৈতিক কারণে মামলায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।

পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সাজানো মামলা করেছে বলেও অভিযোগ তাদের।

বিএনপি নেতা ফিরোজের পরিবারের সদস্যরা জানায়, তিনি গত ৪ অক্টোবর ওমরাহ হজ পালনের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন এবং বর্তমানে তিনি মক্কায় আছেন।

যোগাযোগ অ্যাপ্লিকেশন ইমোর মাধ্যমে বিএনপি নেতা ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশি হয়রানি ও রাজনৈতিক কারণে ১০ বছর আগে আমি রাউজান উপজেলা ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস শুরু করি। গত ৪ অক্টোবর আমি মক্কায় এসেছি ওমরা করতে। এখন ওমরা হজ্জের আনুষ্ঠানিকতায় আছি। কিন্তু গতরাতে পুলিশ ডাকাতির চেষ্টায় জড়িত বলে আমার নামে মামলা করেছে।'

'কয়েক বছর আগে আমার বিরুদ্ধে পুলিশের মিথ্যা মামলার কারণে আমি মায়ের জানাজা পড়তে পারিনি। আমাকে তারা হয়রানি করেছে। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে শুধু রাজনৈতিক কারণেই মামলায় দেওয়া হচ্ছে,' বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ইউসুফ ডেইলি স্টারকে বলেন, '১২ বছর আগে রাউজানে পুলিশি হয়রানির শুরু হলে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসি। আমি ঘটনাস্থলে নেই। তারপরও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নাম মামলায় দিয়ে দিচ্ছে। এটিসহ পুলিশ আমার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা করেছে যার সবগুলোই রাজনৈতিক।'

দেশের ও এলাকার বাইরে অবস্থানরত বিএনপি নেতাদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানিনা। তারা ডাকাতির চেষ্টা করেছিল এবং পুলিশ তাদের হাতেনাতে ধরেছে। ঘটনাস্থলে না থাকলে কাউকে ভুলবশত এফআইআরে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তদন্তের সময় নাম বাদ দেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'গ্রেপ্তারের পর আসামিরা তাদের সহযোগীদের নাম বলেছে সেই অনুযায়ী এজাহার হয়েছে। অনেক সময় নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে সুযোগ নেয় আসামিরা।'

মক্কায় অবস্থানরত বিএনপি নেতা ফিরোজের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'এরকম কিছু জানি না। ফিরোজ নামে অনেকেই আছেন।'

আলাপের একপর্যায়ে ওসি হারুন মামলার আসামি বিএনপি নেতা ফিরোজের বিষয়ে এই প্রতিবেদককে প্রতিবেদনে বিস্তারিত না লিখার অনুরোধ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

1h ago