যেভাবে সাজাবেন হোম অফিস

চলুন, নিজ ঘরের কাজের জায়গাটিকে আরও শৈল্পিক করে তোলার অভিযানে নেমে পড়া যাক।
ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-১৯ মহামারি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরনের ভিত নাড়িয়ে দিলেও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা অনস্বীকার্য। সেগুলোর মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনটি হলো নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে কাজের বদলে রিমোট বা দূর থেকেই কাজ করা।

এই রিমোট কাজের ঝটিকা বিবর্তনেই অবতারণা হোম অফিস ধারণাটির, যেটি মূলত স্বাধীনচেতা জীবনধারারই নামান্তর। এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো হোম অফিস দারুণভাবে আপনার কাজের উৎপাদনশীলতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। একটি সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কীভাবে আপনার হোম অফিস সাজাবেন তারই বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা হবে এই আয়োজনে। চলুন, নিজ ঘরের কাজের জায়গাটিকে আরও শৈল্পিক করে তোলার অভিযানে নেমে পড়া যাক।

হোম অফিস সুন্দর করে সাজানোর ১০ টিপস-

সঠিক স্থান নির্বাচন করুন

প্রসঙ্গ যখন কাজের জায়গা নিয়ে তখন প্রথমেই বাড়ির সবচেয়ে সুন্দর ঘরের সঠিক স্থানটি নির্বাচন করা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে ঘরটিতে আলো-বাতাসের চলাচল আছে কি না তা দেখা জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে বাড়িতে প্রবেশের পর যে কেউ সহজেই যেন জায়গাটিতে পৌঁছাতে না পারে।

আসলে কাজে একান্তভাবে মনোনিবেশের জন্য প্রাকৃতিক আলো-বাতাসে ভরপুর শান্ত পরিবেশের কোনো বিকল্প নেই। ঘরটির মধ্যে অন্যান্য ঘর থেকে অপেক্ষাকৃত কম শব্দ যায় এরকমই বেছে নেওয়া উত্তম।

প্রশান্তিদায়ক রং নির্বাচন করুন

এই কাজটি অবশ্য একদম প্রথমে বাড়ি খোঁজার সময় বিবেচনায় রাখা দরকার। কারণ উষ্ণ রঙের বাড়ি হলে সেখানে আলাদা করে একটি ঘরের জন্য শীতল রং ব্যবহার করার অবস্থা থাকে না।

হালকা রংগুলোতে সাধারণত ঘর প্রশস্ত দেখায়, অন্যদিকে নীল এবং বেগুনি রঙের মতো গাঢ় শেডগুলোও কার্যকর হতে পারে। বিভ্রান্তিকর ওয়ালপেপার প্যাটার্ন এড়িয়ে সাধারণ কারুকাজের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।

সামগ্রিকভাবে ঘরের দেয়ালগুলো এমন হওয়া উচিত যেন তা কাজের সময় চিন্তাশক্তিতে যথেষ্ট জ্বালানি সরবরাহ করতে পারে।

রঙের সঙ্গে আবেগ-অনুভূতির এক আদিম সম্পর্ক আছে। আর এই বিষয়টিই সাহায্য করবে জায়গাটিতে কর্মমুখরতা সৃষ্টি করতে।

কার্যকরী আসবাবপত্র ব্যবহার করুন

আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে একইসঙ্গে কার্যকারিতা এবং নান্দনিকতা দুটোরই প্রয়োজন। আপনার দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার জন্য চেয়ারটি আপনার বসার ভঙ্গিমার সঙ্গে সহায়ক কি না তা দেখা উচিত।

একই সঙ্গে টেবিলটিও এমন উচ্চতায় হওয়া উচিত যেন দুহাত অবলীলায় রেখে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন। এই ব্যাপারগুলো ঘরের প্রতিটি আসবাবের বেলায় উপযুক্ত। ঘরের জায়গা সংকুলানের কথা চিন্তা করে আসবাবপত্রের পছন্দের বেলায় মিনিমালিস্ট হওয়াটা যুক্তিযুক্ত।

এমন আসবাব ব্যবহার করুন যেগুলো একইসঙ্গে একাধিক কাজের জন্য উপযুক্ত। এতে আপনার কাজও সমাধা হবে, আবার ঘরে যথেষ্ট খালি জায়গাও থাকবে।

উদাহরণস্বরূপ, এমন টেবিল কেনা যায় যেখানে স্টোরেজসহ একটি ডেস্ক আছে। একটি ফাইলিং ক্যাবিনেট যুক্ত টেবিলগুলোও এক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজে দিতে পারে। অতিরিক্ত কাজের জায়গার প্রয়োজন হলে ভাঁজযোগ্য আসবাবপত্র উত্তম।

শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধকে অগ্রাধিকার দিন

যেহেতু এই ঘরটিকে ঘিরেই আপনার পুরো পেশাগত জীবনটা আবর্তিত হতে যাচ্ছে, তাই দীর্ঘ সময় ধরে কাজের অবস্থা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই, এতে কোনোভাবে যেন শরীরের কোনো ক্ষতি না হয় সেটা সর্বপ্রথম নিশ্চিত করা জরুরি।

আপনার কম্পিউটার, কীবোর্ড এবং মাউসকে এমনভাবে সাজান, যেন তা আপনার হাত, পা এবং ঘাড়ের সঙ্গে সহায়ক হয়। সঠিক উচ্চতার আসবাবপত্রের ওরিয়েন্টেশনটা এমন হওয়া চাই, যেন ঘর জুড়ে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারেন।

নিয়মিত দরকারি জিনিসগুলো এমন দূরত্বে রাখুন, যেন তা হাতের নাগালের মধ্যে থাকে। যেগুলো একটু দূরে সেগুলো নিতে গিয়ে বারবার যেন আকস্মিক কোনো বাধার সম্মুখীন হতে না হয়। কাজের সময় অল্প একটু হোঁচট খাওয়া বা সঠিক বস্তুটিকে সঠিক জায়গায় দেখতে না পাওয়াটাও প্রায়ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গৃহসজ্জার সর্বত্র আপনার উপস্থিতি রাখুন

কাজের সময় আনমনে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে নিজের প্রিয় ওয়ালমেটটি দেখা কিছু সময় বিরতি নেওয়ার পরিপূরক। যে বিরতি নতুন উদ্যমে কাজে নিয়োজিত হতে শক্তি যোগায়।

ডেস্কের ওপরের শো পিস, ছোট্ট পোট্রেইট, ফুলদানি সবকিছুতে নিজের পছন্দগুলো ঢেলে দিন। অবশ্যই অগোছালোভাবে নয়, অথবা অতিরিক্ত জিনিসপত্র নয়। আপনার দৃষ্টিসীমার পরিধিকে পরিমিতিবোধ নিয়ে যাচাই করে সুন্দর করে আপনার ভালোলাগার জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখুন। এমনকি ঘরের কোণার ট্র্যাশ বক্সটাও যেন এ থেকে বাদ না যায়।

সবুজায়নের দিকে গুরুত্ব দিন

তাকের ওপর, ডেস্কে অথবা দেয়ালে নিজের প্রিয় ফুলের ছোট গাছটা শুধু মানসিক প্রশান্তিই নয়; স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। ছোট একটা ইনডোর বাগান আপনার কর্মক্ষেত্রে একইসঙ্গে বৈচিত্র্য ও স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে আসতে পারে। এক্ষেত্রে সেগুলো পরিচর্যার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

এই আধিক্যটা অবশ্য আপনি গাছপালার প্রতি কতটা আগ্রহী তার ওপর নির্ভরশীল। তাই সবুজায়নের এই ব্যাপারটি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যেন তা কাজ থেকে আপনার মনকে বিভ্রান্ত না করে।

দেয়াল সাজানোর ক্ষেত্রে সৃজনশীল হোন

তাক, কর্কবোর্ড বা পেগবোর্ডের মতো কার্যকরী উপাদানগুলোকে একত্রিত করে দেয়ালে যথেষ্ট জায়গা তৈরি করা যায়। এতে ঘরের অনেক জায়গা বাঁচানো যায়। এ ছাড়া সবকিছু নাগালের মধ্যে রাখতে এবং কাজের জন্য ডেস্কের জায়গা খালি করাতেও বেশ সহায়ক হয়।

তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত দেয়াল ব্যবহারে যেন তা নষ্ট হয়ে না যায়। সময় নিয়ে এমন কিছু নকশার কথা ভাবুন যেগুলো কাজের সময় অনুপ্রেরণা দেবে।

প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংরক্ষণে ঘরকে স্মার্ট করে তুলুন

বিশৃঙ্খল পরিবেশ যে কোনো কাজেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে। হোম অফিসকে সুসংগঠিত রাখতে কেবিনেট, ড্রয়ার বা ফাইলিং সিস্টেমের মতো স্মার্ট স্টোরেজ সমাধানগুলোতে নজর দিন। ঘরকে সাজানোর মুহূর্তেই এমনভাবে জিনিসগুলো রাখুন, যেন পরে প্রয়োজনের সময় দ্রুত সেগুলো খুঁজে পেতে পারেন।

এই পরিকল্পনাটি আপনার পেশাগত জীবনের জন্যও এক বিরাট প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা নতুন কাজে দ্রুত মনোনিবেশে সহায়তা করে। আর নতুন নতুন প্রিয় কাজের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার মত আনন্দের কোনো তুলনা হয় না।

পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করুন

আলোর স্তরটি আপনার দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারসাম্যপূর্ণ রাখা উচিত। দিনের বেলা ঘরে রোদের আলো কতটুকু প্রবেশ করছে তার ওপর নির্ভর করে আলো নিয়ন্ত্রণ করুন। একইভাবে রাতের বেলা কতটুকু আলো থাকলে আপনার চোখের জন্য সমস্য হবে না তা নির্ধারণ করুন।

ঘরের ঠিক কোথায় আলোর উৎসটি স্থাপন করছেন সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন কম্পিউটার মনিটরের ঠিক উল্টো দিকে বাল্ব বা টিউব থাকলে মনিটরে তার প্রতিফলন কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

প্রযুক্তিপণ্য ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিন

বর্তমানে পেশাগুলো প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ায় কাজের জায়গার চারপাশ জুড়ে প্রযুক্তির ছড়াছড়িটা স্বাভাবিক হয়ে দাড়িয়েছে। কম্পিউটারের নানা কেবল এবং কর্ডগুলোকে সুসংগঠিত রাখতে সেগুলোর ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সিস্টেমের প্রস্তুত করা দরকার। সেগুলোর জট পাকিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে এবং মেরামতের সময় সময়ক্ষেপণ এড়াতে এই সিস্টেমের কোনো বিকল্প নেই।

এর জন্য কেবল সংগঠক বা কর্ড ক্লিপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া তারগুলোকে চোখের বাইরে সরিয়ে রাখতে টেবিলকে কাস্টমাইজ করা যেতে পারে। মোবাইল, পোর্টেবল ডিভাইস, আইপিএসের তারগুলোকে গুপ্ত রাখার জন্য দেয়াল কেবিনেট করা যেতে পারে।

যারা ইতোমধ্যে নিজের হোম অফিসটিকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মপরিকল্পনা করছেন, এই উপায়গুলো তাদের জন্য সেরা একটি গাইড। তাই কীভাবে আপনার হোম অফিস সাজাবেন তা নিয়ে দ্বিধায় থাকলে নিশ্চিন্তে এই ১০টি টিপস কাজে লাগাতে পারেন।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago