পঞ্চম দিনে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ: অবরুদ্ধ গাজা পরিস্থিতি

গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে চারপাশ। ১১ অক্টোবর, ২০২৩। ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান সংঘাতের আজ পঞ্চম দিন। সোমবার থেকে হামাস অধ্যুষিত গাজার সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ নিতে বিদ্যুৎ, খাবার, পানি, ওষুধ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় টানা তীব্র হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

 

ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি, বাড়ছে মানবিক সংকট 

জ্বালানি ফুরিয়ে আসায় গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার কার্যক্রম ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলি বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণের কারণে গাজায় ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা অব্যাহত আছে।

এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছিলেন,  'গাজা পাওয়ার প্ল্যান্ট এখন বিদ্যুতের একমাত্র উৎস। শিগগির এখানেও জ্বালানি শেষ হয়ে যেতে পারে।'

অধিকাংশ এলাকায় ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় খাবার পানির সংকটের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি স্যানিটেশন অবকাঠামো চ্যালেঞ্জের মুখে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

 

২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ 

চলমান ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় ২ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোরে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা-ওসিএইচএ জানায়, গাজায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৪ জনের বেশি লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, 'এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।' তাদের মধ্যে অন্তত ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৬ জন জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার স্কুলে আশ্রয় চাইছে বলে জানান তারা।

 

৮০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি বিমান হামলা 

গাজায় ৮০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। টেলিযোগাযোগ স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। মোবাইল যোগাযোগের ৩টি প্রধান লাইনের মধ্যে ২টি ধ্বংস করা হয়েছে। এর ফলে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, গাজায় ৮০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাস বিমান শনাক্ত করতে ব্যবহার করে এমন একটি 'উন্নত শনাক্তকরণ ব্যবস্থা' ধ্বংস করা হয়েছে।

পৃথক বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নে হামাসের ব্যবহৃত ২টি ব্যাংক শাখা, ১টি ভূগর্ভস্থ টানেল, হামাসের ২টি অপারেশনাল কমান্ড সেন্টার, অস্ত্র মজুদের জন্য ব্যবহৃত অবকাঠামো, হামাসের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র তৈরি এবং অস্ত্র সংরক্ষণ হতো এমন ২টি কমপাউন্ড হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

 

গাজার কাছে ৩ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে ইসরায়েল 

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস এক্সে (টুইটার) পোস্ট করা এক ভিডিওতে বলেছেন, 'গাজা উপত্যকার কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে আমরা আমাদের পদাতিক বাহিনী, সাঁজোয়া সৈন্য, আমাদের আর্টিলারি কর্পস এবং রিজার্ভ থেকে আরও অনেক সেনা পাঠিয়েছি। ৩ লাখ সেনা বিভিন্ন ব্রিগেড এবং ডিভিশনে পাঠানো হয়েছে, তারা এখন গাজার কাছাকাছি রয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল সরকার আমাদের যে মিশনে পাঠিয়েছে আমাদের সেনারা সে মিশন কার্যকর করতে প্রস্তুত হচ্ছে।'

'এই যুদ্ধের শেষে আর কখনো কোনো ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিককে হুমকি বা হত্যার মতো সামরিক সক্ষমতা যেন হামাসের না হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি,' বলেন তিনি।

 

কমপক্ষে ৯৫০ ফিলিস্তিনি ও ১২০০ ইসরায়েলি নিহত 

গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত বেড়ে ৯৫০ এবং ৫ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এ সংঘাতে কমপক্ষে ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।

এদিকে সীমান্ত বেষ্টনি টপকে নিজেদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়া ১০০০ হামাস যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরালের প্রধান সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, তাদের মধ্যে অন্তত ১৮ জন গতকাল মঙ্গলবার নিহত হয়েছে।

 

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ তুলেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গুরুতর আহত ফিলিস্তিনিদের কাছে অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি স্বাস্থ্যকর্মীদের পৌঁছাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা শহরের আল-কারামা টাওয়ারে বিমান হামলার পর আহত ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টার সময় ফের হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ২ জন নিহত ও ২ স্বাস্থ্যকর্মী আহত হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আল জাজিরাকে বলেন, 'মেডিকেল টিম বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করছে। আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানাই মেডিকেল টিমের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিন।'

সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করাকে যুদ্ধাপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

 

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, সিএনএন, বিবিসি

 

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

17h ago