আপস হয়ে গেছে, দিল্লি আছে আমরা আছি: ওবায়দুল কাদের
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোথায় স্যাংশন কোথায় ভিসা নীতি। তলে তলে আপস হয়ে গেছে। দিল্লি আছে, আমেরিকারও দিল্লিকে দরকার। দিল্লি আছে আমরা আছি। শত্রুতা কারো সঙ্গে হবে না সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে। শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেলেছেন।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর প্রবেশমুখ আমিনবাজারে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে 'বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের' বিরুদ্ধে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, 'বিএনপি এখন পথ হারিয়ে দিশাহারা। কীসে দিশাহারা? দুই সেলফিতেই বাজিমাত। একটি সেলফি দিল্লিতে আরেক সেলফি নিউইয়র্কে। শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে পুতুল জো বাইডেনের সেলফি, প্রথমে দিল্লি পরে নিউইয়র্ক, দুই সেলফিতেই বাজিমাত।'
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা এমন ভারসাম্য সবার সাথে করে ফেলেছেন, আর কোনো চিন্তা নাই। ইলেকশন হবে, যথাসময়ে হবে। অক্টোবর থেকে, এই মাস থেকে শুরু। আগামী মাসে সেমিফাইনাল, জানুয়ারিতে ফাইনাল। বিএনপি এখন ফাউল করতেছে, ফাউল করলে হলুদ কার্ড, ফাউল করলে লাল কার্ড। খেলা নিয়ে ফাউল করা চলবে না।'
'বিএনপি খালেদা জিয়াকে ছাড়া ইলেকশন করবে না, না করুক। এতদিন কই ছিল? খালেদা জিয়া বছরের পর বছর জেলে। তার জন্য একটা আন্দোলনও করতে পারল না ফখরুল। আর এখন খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন করবে না,' যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা নাকি নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছে, কেমন নিষ্ঠুরতা? ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে তারা রক্তাক্ত করেছে। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা সেদিন বিদেশে ছিলেন বলে বেঁচে গিয়েছিলেন। নিষ্ঠুর কারা? যারা এইদেশে জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, জেলখানায় ৪ নেতাকে হত্যা করেছে, শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। কে করেছে এই কাজ? হাওয়া ভবন। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছে।'
'শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত ২০ বার হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে' উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন করেন, 'বেগম জিয়াকে কি একবারও কেউ হত্যা করতে গিয়েছে? বেগম জিয়ার জীবনের ওপর একবারও কি হামলা হয়েছে? আওয়ামী লীগ তা করবে না। কারণ আওয়ামী লীগ হত্যার ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ বারবার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। এখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।'
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, 'জিনিসপত্রের দামের আজ যে ঊর্ধ্বগতি, সেই দাম যেন কমে সেজন্য শেখ হাসিনা অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জিনিসপত্রের দাম এখন একটু বেশি, সারা দুনিয়ায় বেশি। শেখ হাসিনা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, ইনশাল্লাহ নির্বাচনের মধ্যে দাম একটু একটু করে কমে যাবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জিনিসপত্রের দাম চলে আসবে, চিন্তা করবেন না।'
তিনি বলেন, 'খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবে না, আর কত হুমকি, অক্টোবর মাস তো চলে যাচ্ছে, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম বুড়িগঙ্গায় ভেসে গেছে। আন্দোলনের নামে বিএনপি নেতারা দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ান।'
'আমেরিকার রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট এক সমীক্ষায় মন্তব্য করেছে, এই মুহূর্তে ভোট হলে ৭০ শতাংশ লোক শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে,' বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর কন্যার ওপর আস্থা রাখবেন। তার মতো নেতা আর নাই। ৪৮ বছরে শেখ হাসিনার মত এমন জনপ্রিয় নেতা, সৎ নেতা বাংলাদেশে আর আসে নাই।'
'বিএনপির দম ফুরিয়ে গেছে। ওদের দিয়ে আর আন্দোলনও হবে না, নির্বাচনও হবে না। ভোট হবে, ভোট বাংলাদেশে হবে, যে যত ষড়যন্ত্রই করুক, নির্বাচন বাংলাদেশে হবেই ইনশাআল্লাহ। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, অবাধ নির্বাচন হবে, ফ্রি ফেয়ার নির্বাচন হবে,' যোগ করেন তিনি।
'আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না' উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা ভিসা নীতির পরোয়া করি না। আমরা ঠিক আছি, আমরা তো শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। কেন তাহলে ভিসা নীতি, কেন তাহলে নিষেধাজ্ঞা।'
তিনি বলেন, 'কেউ নিষেধাজ্ঞা দেবেন না, নিষেধাজ্ঞার ধামকি দেবেন না। নিষেধাজ্ঞা শেষ। দেখেন না ফখরুল সাহেবের গলার আওয়াজ নরম হয়ে গেছে।'
বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবারও লুটপাট করবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, 'মানুষ বুঝে গেছে, বিএনপির লাফালাফি-বাড়াবাড়িতে জনগণের কোনো লাভ নাই। এই চোরারা চুরি করার জন্য আবারও দুর্নীতি করবে, লুটপাট করবে, আবারও ভোটচুরি করবে। ক্ষমতায় এলে বিএনপি গণতন্ত্র গিলে খাবে।'
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'ডিসেম্বরে বলেছিল খালেদা জিয়া দেশ চালাবে। ৯ মাস চলে গেছে। এখন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করে। ৪-৫ বছর হাজিরা পর্যন্ত দেয়নি। এতদিন খালেদা জিয়ার মামলার ফয়সালা হয়ে যেত হয়ত মুক্তিও পেত। কিন্তু মামলা ফয়সালা হয়নি শুধু বিএনপির জন্য। বিএনপি মামলা ঝুলিয়ে রেখেছে৷ আদালতে ঝুলিয়ে রেখেছে, খালেদা জিয়াকে দেখিয়ে যদি কিছু করা যায়।'
শিগগির গাবতলী ব্রিজ হয়ে যাবে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, 'আমিনবাজারের ব্রিজগুলো একে একে সব হয়ে গেছে। গাবতলি ব্রিজও শিগগির হয়ে যাবে। গাজীপুরের বাস র্যাপিড ট্রানজিটও হয়ে যাবে। আগামী বছর লাইনের ওপর বাস চলবে। সুদিন আবার আসবেই। সুখ চাইলে একটু কষ্ট লাগেই। এই কষ্ট বেশিদিন থাকবে না।'
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ সভাপতিত্বে ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা, ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
Comments