যে আবিষ্কারে চিকিৎসায় নোবেল পেলেন কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েজমান

নোবেল পুরস্কার ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েজমান এ বছর যৌথভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

নোবেল কমিটি তাদেরকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করার জন্য, যা করোনা টিকা তৈরিতে সহায়ক হয়েছে। সেটি হচ্ছে এমআরএনএ।

শুধু করোনা টিকা নয়, এই প্রযুক্তির সাহায্যে '২০৩০ সালের মধ্যেই ক্যানসার ও হৃদরোগের' টিকা তৈরি বা চিকিৎসা করা সম্ভব হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মডার্না।

মডার্না এবং ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা তৈরি হয়েছে এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করেই। এ ছাড়া, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানই টিকা তৈরি করছে।

এমআরএনএ প্রযুক্তির টিকা কীভাবে কাজ করে

যেকোনো টিকা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্যান্য রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এসব টিকা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সম্ভাব্য আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের দুর্বল বা মৃত কোষ। শরীরে এসব নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে এর বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো হয়।

এই জায়গাতেই ব্যতিক্রম এমআরএনএ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে আসল ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের পরিবর্তে মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ (mRNA) ব্যবহার করা হয়।

এমআরএনএ এক ধরনের আরএনএ, যা প্রোটিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। শরীরের কোষ প্রোটিন তৈরি করা শেষ করলেই এই টিকা দ্রুত এমআরএনএ ভেঙে দেয়। টিকা থেকে এমআরএনএ নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে না, এমনকি ডিএনএ পরিবর্তনও করে না। ফলে, ক্যানসার হওয়ার কোনো ঝুঁকি থাকে না।

এমআরএনএ ভিত্তিক থেরাপিতে দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোকে কোনো একটি সুনির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।

করোনা টিকায় এমআরএনএ কীভাবে কাজ করে

এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি করোনা টিকা কারো বাহুতে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হলে তা শরীরের কোষগুলোকে 'স্পাইক প্রোটিন' তৈরি করার নির্দেশনা দেয়, যা করোনাভাইরাসে থাকে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এই প্রোটিনকে চিনতে পারে এবং এর অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে। ফলে, টিকা নেওয়া ব্যক্তি যদি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়, তাহলে দ্রুত এই অ্যান্টিবডি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।

এই প্রযুক্তিকে নোবেল পুরস্কারের জন্য কেন বেছে নেওয়া হলো

নোবেল কমিটির বরাত দিয়ে আজ সিএনএনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই প্রযুক্তিকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, 'এমআরএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলনামূলক সহজে এবং দ্রুত টিকা তৈরি করা সম্ভব, যা অন্যান্য সংক্রামক রোগের টিকা তৈরির পথকে প্রশস্ত করবে। এই প্রযুক্তি থেরাপিউটিক প্রোটিন সরবরাহ করতে এবং কিছু ধরনের ক্যানসারের চিকিত্সায়ও ব্যবহার করা যেতে পারে।'

এর আগে গত ৮ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান মডার্নার বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার, অটোইমিউন রোগ ও অন্যান্য জটিল রোগের জন্য টিকা প্রস্তুত হতে পারে।

মার্কিন ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠান মডার্নার প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ড. পল বার্টন জানান, মডার্না বিভিন্ন ধরনের টিউমারের চিকিৎসায় টিকা তৈরি করছে।

তার ভাষ্য ছিল, 'আমাদের হাতে এই টিকা চলে আসবে এবং এটি অত্যন্ত উপযোগী হবে। যার ফলে কোটি না হলেও, লাখো মানুষের জীবন বাঁচবে। আমার ধারণা, আমরা বিভিন্ন ধরনের টিউমারে আক্রান্ত সারা বিশ্বের মানুষের জন্য ক্যানসার টিকা তৈরি করতে পারব।'

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, শ্বাসযন্ত্রের বেশ কয়েক ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য একটি টিকাই যথেষ্ট হবে। এর মাধ্যমে মানুষ করোনাভাইরাস, ফ্লু ও অন্যান্য আরএসভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাবে। এ ছাড়া, কিছু দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীরা এমআরএনএ থেরাপি নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এ মুহূর্তে এসব রোগের কোনো চিকিৎসা নেই বললেই চলে।

পল বলেছিলেন, 'আমার ধারণা, এর আগে যেসব জটিল ও বিরল রোগের জন্য কোনো ওষুধ ছিল না, সেগুলোর ক্ষেত্রে এমআরএনএ ভিত্তিক থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে। ১০ বছর নাগাদ আমরা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যাব, যখন বংশগত কারণে কারো কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যাবে এবং খুব সহজেই এমআরএনএ ভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সংশোধন করা যাবে।'

কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েজমানের যৌথ গবেষণা

১৯৯০ এর দশকে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয় হয় নোবেলজয়ী এই দুই গবেষকের।

কাতালিন কারিকোর জন্ম ১৯৫৫ সালে, হাঙ্গেরির সোলনক শহরে। শেগেড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করার পর ১৯৮০ এর দশকে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি।

ড্রু ওয়েজম্যানের জন্ম ১৯৫৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৮৭ তিনি বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ইমিউনোলজিতে পিএইচডি করেন।

এমআরএনএ নিয়ে এই দুই গবেষকের যৌথ গবেষণা প্রথম প্রকাশ হয় ২০০৫ সালে। তাদের ওই গবেষণায় উঠে এসেছিল কীভাবে এমআরএনএতে নির্দিষ্ট নিউক্লিওসাইডের পরিবর্তন এনে শরীরে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করা যায়।

সে সময় তাদের গবেষণা খুব একটা মনোযোগ না পেলেও, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি শুরু হলে তাদের ওই গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই টিকা উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে যায় টিকাপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও মডার্না।

 

Comments

The Daily Star  | English

How a 'Dervish Baba' conjured crores from a retired nurse

Want to earn easy money? Just find someone who thinks their partner is cheating on them, then claim to be a “Genie King” or “Dervish Baba,” and offer solutions to “relationship problems” for a fee

1h ago