দেশব্যাপী নজরদারি ব্যবস্থা চালু করতে চায় তালেবান

চীন থেকে মানবিক সাহায্য হিসেবে পাঠানো খাদ্য শস্য পাহারা দিচ্ছেন তালেবান যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স
চীন থেকে মানবিক সাহায্য হিসেবে পাঠানো খাদ্য শস্য পাহারা দিচ্ছেন তালেবান যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানের তালেবান শাসকগোষ্ঠী আফগান শহরগুলোকে নজরদারির আওতায় আনার জন্য ক্যামেরা ভিত্তিক একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা জানিয়েছে তালেবান। 

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

তবে এ বিষয়টি উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আগে মার্কিনরা এরকম একটি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছিল। সেটারই পরিবর্তিত রূপকে বাস্তবায়ন করতে চায় তালেবান।

এ মুহূর্তে রাজধানী কাবুলে হাজারো ভিডিও ক্যামেরা বসানো আছে, যার সঙ্গে যুক্ত হবে অন্যান্য শহরের ক্যামেরা।

তালেবান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসব তথ্য জানান।

তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে, তারা দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা ও জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) দমন করার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। মুখপাত্র আরও জানান, তারা ইতোমধ্যে চীনের প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে নজরদারি উপকরণ সরবরাহ বিষয়ে সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছে।

আইএসের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের হামলা প্রতিহত করার বিষয়টি তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সহ অন্যান্য দেশের আলোচনায় প্রাধান্য পেলেও অনেক বিশ্লেষকের মতে, এ ধরনের বড় আকারের নজরদারি ব্যবস্থা চালুর মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই দারিদ্র্যপীড়িত আফগানিস্তানের।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশংকা প্রকাশ করেছে, এই ব্যবস্থা বিক্ষোভকারী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে ব্যবহার হতে পারে।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল মতিন কানি বলেন, 'কাবুলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ও অন্যান্য অবস্থানে ক্যামেরা বসানো হবে। এই উদ্যোগ নতুন নিরাপত্তা কৌশলের অংশ। এর বাস্তবায়নে চার বছর সময় লাগবে।'

'এ মুহূর্তে আমরা কাবুলের নিরাপত্তা মানচিত্র তৈরি করছি। এই কাজটি করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এবং স্বভাবতই, এতে অনেক সময় লাগছে', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের হাতে ইতোমধ্যে দুইটি মানচিত্র আছে, যার একটি আগের সরকারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করেছিল এবং অপরটি তৈরি করেছে তুরস্ক।'

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিশ্চিত করেন, ওয়াশিংটন তালেবানের সঙ্গে কোন 'অংশীদারিত্বে' যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র তালেবানকে জানিয়েছে যে 'জঙ্গিরা যাতে দেশটিতে নিরাপদ আশ্রয় না পেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের নিজেদের।'

কানি জানান, তালেবান চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে আগস্টে খোলামেলা আলোচনা করেছে। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কোনো চুক্তি বা নিশ্চিত পরিকল্পনা করা হয়নি।

তালেবান জানিয়েছে, এ মুহূর্তে কাবুল ও অন্যান্য শহরে ৬২ হাজার ক্যামেরা বসানো আছে, যা একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পরিচালনা করা হয়। ২০০৮ সালে সর্বশেষ এই প্রক্রিয়াকে হালনাগাদ করা হয়।

তালেবান শাসনের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রহরায় নিয়োজিত যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স
তালেবান শাসনের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রহরায় নিয়োজিত যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স

সেন্টার ফর ন্যাভাল অ্যানালাইসেস সংগঠনের আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ জনাথান শ্রোডেন বলেন, 'একটি নজরদারি ব্যবস্থা তালেবানের জন্য খুবই সুবিধাজনক হবে, কারণ তারা আইএসের মতো সংগঠনগুলোকে কাবুলে তালেবানের সদস্য বা সরকারী কর্মকর্তাদের ওপর হামলা ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।'

ইতোমধ্যে নগর অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিবহণ ও নিয়মিত বিরতিতে বসানো তল্লাশি চৌকির মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে তালেবান।

মানবাধিকার সংস্থা ও তালেবান বিরোধীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, উচ্চমাত্রার নজরদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিক সমাজের সদস্য ও বিক্ষোভকারীরা তালেবানের লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস দাবি করেছে, তালেবান সরকার ক্ষমতা দখলের পর অন্তত ৬৪ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে নানা বিধিনিষেধ আরোপের বিরুদ্ধে আয়োজিত একাধিক বিক্ষোভকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে পণ্ড করেছে তালেবান।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ম্যাট মাহমুদি বলেন, 'জাতীয় নিরাপত্তার' অজুহাতে বড় আকারের নজরদারি ব্যবস্থা বসানোর মাধ্যমে তালেবান তাদের দমন-পীড়নমুলক কার্যধারা অব্যাহত রাখতে পারে, যা আফগান জনগণের মৌলিক অধিকারগুলোকে লঙ্ঘন করছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে তালেবান।

কানি দাবি করেন, এই নজরদারি ব্যবস্থার সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য বড় শহরের একইরকম ব্যবস্থার কোনো পার্থক্য নেই। এবং এটি ইসলামি শরিয়া আইনে পরিচালিত হবে। যার ফলে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কোন সম্ভাবনা নেই।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago