নির্বাচনের আগে জুলাইয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেকর্ড ব্যয়

এলজিডি, স্থানীয় সরকার বিভাগ, নির্বাচন, আহসান এইচ মনসুর, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা রেল সংযোগ, এমআরটি লাইন-৬,

স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের কারণে চলতি বছরের জুলাইয়ের উন্নয়ন ব্যয় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল, যা কোনো অর্থবছরের প্রথম মাসেও সর্বোচ্চ ব্যয়ের রেকর্ড।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ২১৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ১ হাজার ২৫৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন ও সহায়তার দায়িত্বে থাকা এলজিডি।

এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের জুলাইয়ে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ের ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এলজিডির এই উচ্চ ব্যয় আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে মনে হচ্ছে। এলজিডির প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে আছে- গ্রামীণ পুলিশ, সেতু ও কালভার্টসহ উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামের সড়ক নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'নির্বাচনের আগে কম গুরুত্বের প্রকল্পতেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, আমেরিকায় একে পর্ক ব্যারেল বলা হয়। পর্ক ব্যারেল, বা পর্ক হলো স্থানীয় প্রকল্পগুলোর জন্য সরকারি বরাদ্দের একটি রূপক, যা কেবল বা প্রাথমিকভাবে কোনো প্রতিনিধির জেলায় সরাসরি ব্যয়ের জন্য সুরক্ষিত থাকে।'

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই কি এসব খরচ হচ্ছে? আগে কখনো জুলাইয়ে এমন ঘটনা ঘটেনি।'

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এলজিডির প্রকল্পগুলো অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে বাস্তবায়ন সহজ। এলজিডি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে, তাই এর পরিধি সবচেয়ে বিস্তৃত। আরও অনেক প্রকল্প নেওয়া দরকার এবং এই প্রকল্পগুলো সহজ ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই।'

তিনি জানান, যে কারণে পরিকল্পনামন্ত্রী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে না নিয়ে অনেক এলজিডি প্রকল্পের অনুমোদন দিতে পারেন। পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে তিনি ৫০ কোটি টাকার কম ব্যয়ের প্রকল্পের অনুমোদন দিতে পারেন এবং অনুমোদনের পর একনেকে তা জানাতে পারেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, 'জুলাইয়ে মাত্র একটি একনেক সভা ছিল এবং ২৯ আগস্ট আরেকটি সভা হওয়ার কথা আছে।'

এর আগে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের মাসগুলোতে ঘন ঘন একনেক সভা হতে দেখা গিয়েছিল এবং অনেকগুলো প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, ১৫টি বড় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৫টি জুলাইয়ে তাদের বরাদ্দ থেকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। এগুলো হলো- মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জুলাইয়ে বরাদ্দের শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে।

গত বছরের জুলাইয়ে ১৫টি বড় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে শুধু কৃষি মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ব্যয় করতে পারেনি।

১৫টি বড় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বছরের মোট বাজেটের ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে এলজিডি জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে পেরেছে, যা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এর পরেই আছে রেলপথ মন্ত্রণালয় (২ দশমিক ০৮ শতাংশ), সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ (১ দশমিক ৭৮ শতাংশ), গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় (১ দশমিক ৬৭ শতাংশ) এবং কৃষি মন্ত্রণালয় (১ দশমিক ১৭ শতাংশ)।

রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অপেক্ষাকৃত বেশি ব্যয়ের ব্যাখ্যা হলো- এ বছরের শেষের দিকে পদ্মা রেল সংযোগ, ঢাকা এমআরটি লাইন-৬ এর দ্বিতীয় পর্যায়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেলের মতো কয়েকটি মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের পরিকল্পনা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'এটি একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক উদ্যোগ। সব সরকারই নিজেদের জন্য ভালো কিছু কাজ করে দেখাতে চান।'

জাহিদ হোসেন, মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন সবার জন্য উপকারী।

তিনি বলেন, 'যে কারণেই হোক বা উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন- ভালো প্রকল্পগুলো যদি দ্রুত শেষ করা যায়, তাহলে তা জাতীয় অর্থনীতির জন্য ভালো।'

গত এক মাসে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দ্রুত অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নির্বাচন কারণ হলেও আমাদের জন্য এর ফল ভালো হবে।'

জুলাইয়ে ব্যয় করা অর্থের ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ এসেছে সরকারি তহবিল থেকে এবং ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ এসেছে বৈদেশিক সহায়তা থেকে।

Comments

The Daily Star  | English
Banking sector crisis

Why is the banking sector crisis so deep-rooted?

The regime-sponsored immorality to protect or pamper the financial gangsters not only eroded the future of the banking sector, but also made the wound too difficult to recover from.

4h ago