ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আতঙ্ক সাইবার নিরাপত্তা আইনে দূর হবে: আইনমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিতকরণ ও প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: সংগৃহীত

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন সাইবার অপরাধ বন্ধে অত্যন্ত সহায়ক হবে। পাশাপাশি সাংবাদিকরা যেসব সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন, সেটাও দূর হবে এবং সাংবাদিক হয়রানিও বন্ধ হবে। 

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে জনগণের মধ্যে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে কিংবা গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যে মানসিক চাপ বা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা সাইবার নিরাপত্তা আইনে দূর হবে। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বিসিসি অডিটোরিয়ামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ রহিতকরণ এবং প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেসব ধারায় সাজার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল এবং বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সেগুলোর সাজা সাইবার নিরাপত্তা আইনে কমিয়ে আনা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বেশকিছু ধারা জামিন অযোগ্য ছিল, সেগুলোকে নতুন আইনে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধের জন্য সাজা দ্বিগুণ কিংবা সাজার মেয়াদ বাড়ানোর বিধান করা হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে বাড়তি সাজার কথা বলা আছে, সেগুলো নতুন আইনে বাতিল করা হয়েছে।'

মন্ত্রী বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়টি ছিল। এতে বলা ছিল যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) ৪৯৯ ধারায় বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সে জন্য তিনি অনধিক ৩ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটন করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।'

'নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে মানহানির অপরাধের জন্য কারাদণ্ড বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানা ১ টাকাও হতে পারে। অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে আদালত এটি নির্ধারণ করবে,' যোগ করেন তিনি।

মানহানির মামলায় নতুন আইনে কাউকে সরাসরি গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং গ্রেপ্তারের কোনো আতঙ্ক বা আশঙ্কা থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'তবে জরিমানা না দিলে ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। কিন্তু অপরাধের মূল শাস্তি হবে জরিমানা।' 

তিনি আরও বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি, পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন যদি বলি, বাতিল করা হয়েছে তাহলে আপনারা প্রশ্ন করবেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় সব ধারাই তো এ আইনে আছে। তাহলে কেন বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। যে কারণে আমি পরিবর্তন শব্দটি ব্যবহার করেছি।' 

সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, 'আসলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনগুলো এতটাই বেশি ছিল যে, যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পড়তে হতো, তখন সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা (সংশোধন) আইনটিও সঙ্গে রাখতে হতো, এটা কনফিউজিং।'

'সেজন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ নামে নতুন আইন করা হচ্ছে। এখানে ডিজিটালের পরিবর্তে সাইবার নামটা রাখা হয়েছে, এটার ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য,' বলেন তিনি।

'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সালে অনুমোদনের পর ৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের ৫ বছরে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সারাবিশ্বে আইসিটি সংক্রান্ত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আইসিটি সংক্রান্ত বিশ্বের যে ব্যাপ্তি কিংবা ধরন, তার বেশ পরিবর্তন এসেছে। সবকিছুকে বিবেচনায় রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।' 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে আনিসুল হক বলেন, 'প্রায় ১৫ বছর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নতুন এক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্দেশ্য ছিল একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তিনির্ভর বেগবান বৈশ্বিক উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা এবং বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন "সোনার বাংলা" গড়া। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের আপামর জনসাধারণ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ম্যান্ডেট দিলে তিনি ২০০৯ সাল সরকার গঠন করেন এবং কালবিলম্ব না করে তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সুদূর প্রসারী ও বাস্তবধর্মী বহুমুখী পদক্ষেপ নেন।'

'আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সীমাবদ্ধতাও পরিলক্ষিত হয়। সেটি হলো ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে নতুন নতুন অপরাধ সংঘটন, যেগুলো রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। প্রচলিত আইনে এসব সাইবার অপরাধ দমনের সুযোগ না থাকায় নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই প্রেক্ষাপটে প্রণয়ন করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন,' যোগ করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, 'আইনটি প্রয়োগের শুরুতেই আমরা এর কিছু অপব্যবহার বা মিসইউজ দেখতে পাই যা আমি অকপটে স্বীকার করতে কখনোই বিন্দু পরিমাণ কুণ্ঠাবোধ করিনি এবং করব না। সে সময় এ আইনের অপব্যবহার প্রতিরোধে আমরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেই। ফলে এই আইনের অপব্যবহার অনেকটাই কমে যায়।'

'সরকার আইনটির যেন কোনো অপব্যবহার না হয় সেটাই চায় এবং এ কারণেই আমরা বলেছি আইন সংশোধন করা হবে। এর আলোকে আইনটি সংশোধনের জন্য আমরা একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিলাম। এই কমিটি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ধারাবাহিক ও দীর্ঘ আলোচনার পর আমাদেরকে যে মতামত বা রিপোর্ট দেয় তাতে দেখা যায়, আইনটি ব্যাপক আকারে  সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা প্রয়োজন,' বলেন মন্ত্রী আনিসুল হক।

এসব কারণেই 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮' রহিত করে 'সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩' নামে নতুন আইন প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু হয় এবং গত ৭ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটি অনুমোদন পায় বলে জানান তিনি।   

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবির, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

8h ago