২৪ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হলেও 'নীরব' বুয়েট প্রশাসন

নীরব বুয়েট প্রশাসন
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে বুয়েট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী অনুমোদিত ক্লাব-সোসাইটি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বা এর অঙ্গসংগঠনের অথবা অন্য কোনো সংগঠনের সদস্য হতে বা তার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়মগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং এগুলো অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য কোনো মাধ্যমে সাংগঠনিক-রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার না করার নির্দেশনা আছে।

এতকিছুর মধ্যেই 'গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার আশঙ্কা' এবং সরকারের বিরুদ্ধে 'ষড়যন্ত্র' করার অভিযোগে গত ৩০ জুলাই সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে বুয়েট শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জন গ্রেপ্তার হন। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত।

এ ঘটনার ৩ দিন পর আজ সোমবার দুপুরে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩২ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শিক্ষার্থীরা আটক হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না জানতে চাইলে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জানান, এটি তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।

তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ্রমণে যাননি, এটা কোনো ব্যাচের ট্যুর ছিল না। বুয়েট থেকে ভ্রমণে গেলে তাদের সঙ্গে শিক্ষকও থাকতেন। তারা নিজেরা নিজেরা ঘুরতে গিয়েছেন। তাদের আটকের বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই।'

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিবির সম্পৃক্ততার অভিযোগকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কেউ ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে রাজনীতি করছে কি না সেটি বুয়েটের পক্ষ থেকে দেখার সুযোগ নেই। এটি আমাদের নিয়মের মধ্যেও পড়ে না।'

সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বুয়েটের ২ শিক্ষার্থীকে পদ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কোনো শিক্ষার্থী যদি রাজনীতি করে তাহলে সেক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার অর্থ হলো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিজীবনে হস্তক্ষেপ করা। এটা আমরা করতে পারি না।'

এ বিষয়ে জানতে বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদারের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বুয়েট শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তৎপর হওয়া উচিত বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

তিনি বলেন, 'যে ২৪ জন ছাত্র গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী আছেন। শিক্ষার্থী নন এমনও আছেন। তার মানে তারা নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ছাতার নিচে একত্রিত হয়েছিলেন। এর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু সেটা থাকলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে হবে কেন?'

'বুয়েটের ২৪ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হলো। এক্ষেত্রে বুয়েটের অবশ্যই দায়িত্ব ছিল তাদের বিষয়ে যোগাযোগ করা, তাদেরকে আইনি সহায়তা দেওয়া। আগে দেখা উচিত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়টি সঠিক কি না', যোগ করেন তিনি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'বুয়েটের যেসব শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে তারা আদৌ জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা রেখে সেখানে গিয়েছিলেন কি না সে ব্যাপারে আমরা কেউ নিশ্চিত নই।'

শিক্ষার্থীরা বলেন, 'বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী সাংগঠনিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আমরা যথারীতি শক্ত অবস্থানে যাব। শিক্ষার্থীরা বরাবরই সব ধরনের সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ছিল, আছে এবং থাকবে। আমরা এটাও বলতে চাই যে, কোনো নিরীহ শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রহসন আমরা মেনে নেব না। যে ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আমরা চাই।'

উল্লেখ্য, গত রোববার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নতুনবাজার এলাকায় একটি হাউসবোট থেকে শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার বিকেলে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার দেখায়। পরে তাদের সুনামগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গ্রেপ্তারকৃত বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ জন প্রথম বর্ষ, ৬ জন দ্বিতীয় বর্ষ, ৫ জন তৃতীয় বর্ষ, ৫ জন চতুর্থ বর্ষ ও ২ জন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বাকিদের মধ্যে ৭ জন সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থী, ২ জন সদ্য এসএসসি উত্তীর্ণ এবং একজন বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বাড়িতে কাজ করেন।

আজ বুধবার দুপুরে এই শিক্ষার্থীদের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক ফারহান সাদিক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। গ্রেপ্তার আরও ২ জনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাদের জামিন শুনানি শিশু আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

A budget without illusions

No soaring GDP promises. No obsession with mega projects. No grand applause in parliament. This year, it’s just the finance adviser and his unemotional speech to be broadcast in the quiet hum of state television.

8h ago