পেপার বনাম কম্পিউটার: আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য কোনটা ভালো?
কাগজে কিংবা কম্পিউটারে যেকোনোভাবে দেওয়া যায় আইইএলটিএস পরীক্ষা। তবে পরীক্ষা দেওয়ার আগে সবার মধ্যেই এই জিজ্ঞাসা আসতে পারে; কোন মাধ্যমে পরীক্ষাটি দিলে ভালো হবে।
তবে পরীক্ষা দেওয়ার আগে নয়, বরং পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরুর আগেই আপনার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ইন্টারফেসের দিক থেকে কম্পিউটারে আইইএলটিএস পরীক্ষা কাগজভিত্তিক পরীক্ষার থেকে অনেকটাই আলাদা। এর জন্য বিশেষ কিছু দক্ষতার প্রয়োজন। যেমন, দ্রুত টাইপিং এবং কম্পিউটারে পারদর্শীতা; যেগুলো একবারে জানা না থাকলে রপ্ত করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
তবে, আপনি যে মাধ্যমেই পরীক্ষা দেন না কেন, পরীক্ষার বিষয়বস্তু এবং কাঠামো একই থাকবে। মূল পার্থক্য হলো আপনি একটিতে উত্তর কম্পিউটারে টাইপ করবেন অন্যটিতে কাগজে লিখবেন।
কাগজে আইইএলটিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে আপনাকে লিসেনিং (শুনা), রিডিং (পড়া) এবং রাইটিং (লেখা) বিভাগের উত্তরগুলো কাগজে লিখতে হবে। অন্যদিকে, কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এগুলো আপনাকে টাইপিং করতে হবে।
তবে উভয় ক্ষেত্রেই, স্পিকিং (বলা)-এর পরীক্ষাটি আপনাকে একজন প্রশিক্ষিত আইইএলটিএস পরীক্ষকের মুখোমুখি হয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশে আপনি ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে আইইএলটিএস-এর অফিসিয়াল পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে কম্পিউটারে পরীক্ষা দিতে পারবেন।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, আইইএলটিএস পরীক্ষার দেওয়ার এই দুই উপায়ের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো সম্পর্কে।
সুবিধা-অসুবিধা
- কম্পিউটারে আইইএলটিএস পরীক্ষা দিলে মাত্র ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই খুব দ্রুত ফলাফল পেয়ে যাবেন। যেখানে কাগজে লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে, আপনাকে পরীক্ষার তারিখ হতে ১৩ দিন পর্যন্ত ফলাফল পাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।
- আপনার যদি খারাপ হাতের লেখার সমস্যা থাকে, তাহলে কাগজে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার থেকে কম্পিউটারে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
- আবার আপনার যদি টাইপিংয়ের গতি ধীর হয় সেক্ষেত্রে কম্পিউটারে পরীক্ষা দেওয়া উচিত হবে না। সময়মতো টাইপ করতে না পারলে অনেক উত্তর মিস হতে পারে।
- আপনার যদি ৩ ঘণ্টা ধরে কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে কম্পিউটার ভিত্তিক পরীক্ষাটি আপনার জন্য নয়।
- কম্পিউটারের পরীক্ষার বিভিন্ন অনুশীলন আপনি সহজেই অনলাইনে পেয়ে যাবেন এবং কিছু কিছু ওয়েবসাইটে সেগুলোর মূল্যায়নের সুবিধাও পাবেন। তবে, কাগজের অনুশীলন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আপনাকে কোনো কোচিং সেন্টার কিংবা নিজের ওপরই নির্ভর করতে হতে পারে।
লিসেনিংয়ের ক্ষেত্রে
- কম্পিউটারে লিসেনিং টেস্টের ক্ষেত্রে আপনি হেডফোন পাবেন এবং অডিও আরও স্পষ্টভাবে শুনতে পারবেন। যেখানে আপনি ভলিউমও সামঞ্জস্য করতে পারবেন।
- কম্পিউটারে পরীক্ষার ক্ষেত্রে, স্ক্রিনে উত্তর টাইপ করা এবং একটি খসড়া কাগজে নোট তৈরির মধ্যে আপনার মনোযোগ বিভক্ত হয়ে যায়। যদিও নোট তৈরি করার বিষয়টি ঐচ্ছিক। তবে, অনেকেই শোনার সময় কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করলে এটি করে থাকেন।
- লিসেনিংয়ের ক্ষেত্রে, কাগজে পরীক্ষা দিলে আপনি আপনার উত্তরগুলো রিভাইজ দেওয়ার জন্যে ১০ মিনিট সময় পাবেন। যেখানে, কম্পিউটারে পাবেন মাত্র ২ মিনিট। এই সময়ে, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় খসড়া কাগজে লেখা নোটগুলো পরীক্ষা করে নিতে পারেন। পাশাপাশি, আগে উত্তর করা না হলেও সেখানে উত্তর যোগ করতে পারেন। এ ছাড়া, উত্তরের বানান, ব্যাকরণগুলোও তারা সেই সময়ে দেখে নিতে পারেন।
- অন্যদিকে, যারা শুনতে শুনতে টাইপ করতে অভ্যস্ত নন, তাদের কাছে কম্পিউটারে পরীক্ষা দেওয়া কঠিন হতে পারে।
রিডিংয়ের ক্ষেত্রে
- কম্পিউটারের স্ক্রিনটি দুটি অংশে বিভক্ত থাকবে বিধায় আপনি একই সঙ্গে টেক্সট এবং প্রশ্নগুলো দেখতে পারবেন। বাম পাশে টেক্সট এবং ডানপাশে প্রশ্নগুলো থাকবে। প্রতিটি পাশ স্বাধীনভাবে স্ক্রল করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি প্যাসেজের যেকোনো অংশ এবং যেকোনো প্রশ্নের গ্রুপ পাশাপাশি দেখতে পারবেন। এতে পৃষ্ঠাগুলো বার বার উল্টানোর দরকার পড়বে না বিধায় আপনার সময় বাঁচবে।
- তবে কাগজে পড়ার তুলনায় কম্পিউটার স্ক্রিনে রিডিং পড়া তুলনামূলক কঠিন। মানুষ কাগজে পড়ে তথ্যগুলো আরও ভালোভাবে বোঝার এবং মনে রাখার প্রবণতা দেখায়। অন্যদিকে, দ্রুত চোখ বুলিয়ে যাওয়ার জন্যে আবার স্ক্রিন বেশি উপযুক্ত। এ ক্ষেত্রে, আইইএলটিএস-এর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যে বিস্তারিত পড়ার প্রয়োজন হয়, যা স্ক্রিনে কঠিন হয়ে পড়ে।
- কম্পিউটারে লেখা হাইলাইট করা এবং নোট তৈরি করার ক্ষেত্রে একাধিক ক্লিকের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, কাগজে নোট হাইলাইট করা কিংবা আন্ডারলাইন অনেকটা তাৎক্ষণিকভাবেই করা যায়।
রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে
- কম্পিউটারে আপনার লেখা সম্পাদনা করা বেশ সহজ। এখানে আপনি বিষয়বস্তুগুলো সহজেই কপি এবং পেস্ট করতে পারবেন। এ ছাড়া, বাক্য বা অনুচ্ছেদগুলোও পুনরায় সাজাতে পারেন এবং ঘশা-মাজা ছাড়াই মুছে ফেলতে পারবেন, যা আপনি কাগজে পারবেন না।
- কম্পিউটারে আপনাকে লেখার ক্ষেত্রে শব্দসংখ্যা গণনা করতে হবে না। এটি আপনি স্ক্রিনেই দেখতে পারবেন এবং আপনার সময় বাঁচবে।
- রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার হাতের লেখা খারাপ হলে কম্পিউটারই সুবিধাজনক।
- কিছু ক্ষেত্রে, কম্পিউটারে টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ শব্দ হয়। পরীক্ষার সময় অন্যদের টাইপিংয়ের আওয়াজ অনেকের কাছেই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে, হেডফোনের ব্যবহার আওয়াজের সমস্যা কিছুটা কমাতে পারে।
স্পিকিংয়ের ক্ষেত্রে
স্পিকিংয়ের ক্ষেত্রে উভয় পরীক্ষার ধরনই একই। এখানে কোনো পার্থক্য নেই। কাগজ এবং কম্পিউটার উভয় ক্ষেত্রেই আপনি পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যক্তিগতভাবে কিংবা পরীক্ষকের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে পরীক্ষাটি দিতে পারবেন।
কাগজ নাকি কম্পিউটার, কোন মাধ্যমে দিবেন?
কাগজ এবং কম্পিউটার উভয় মাধ্যমেরই নিজস্ব কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। তবে কাগজ কিংবা কম্পিউটার, যে মাধ্যমেই আইইএলটিএস দেন না কেন; আপনাকে সেটির জন্য উত্তম প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে।
যদি কাগজভিত্তিক আইইএলটিএস আপনার পছন্দ হয়, তবে আগে থেকেই সেটি কাগজে অনুশীলন করুন। আর কম্পিউটারে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এর জন্যে, দুটি মাধ্যমের ক্ষেত্রে আপনার সবল এবং দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করুন। আপনি কোন মাধ্যমে বেশি পারদর্শী সেটি বোঝার চেষ্টা করুন এবং তারপর সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন।
তথ্যসূত্র: ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইইএলটিএস ব্লগ
Comments