৪ কোটি টাকায় নির্মিত এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজ ৩ বছর ধরে বন্ধ
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চালু হওয়া প্রথম ও একমাত্র এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়। জনগণের অর্থ অপচয়ের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করে উদ্বোধনের পর মাত্র ২ মাস চালু ছিল ফুটওভার ব্রিজটি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মতে, এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজের বিদ্যুৎ খরচ এত বেশি যে এটি চালানো সম্ভব নয়।
ফলে, এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজটি ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের পাশাপাশি সাধারণ পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে চসিক কর্তৃপক্ষ ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করে।
৬৫ ফুট দীর্ঘ এবং ৯ ফুট চওড়া সেতুটির উপরে ওঠার জন্য উভয় পাশে ২টি এস্কেলেটর রয়েছে। তবে, নীচে নামার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, উপরে ওঠা কঠিন হলেও নিচে নেমে আসা সহজ।
চসিক সূত্রে জানা যায়, এস্কেলেটরগুলোতে সেন্সর আছে। যখন কেউ উপরে উঠতে যায় তখন এগুলো চলতে শুরু করে। যখন কেউ থাকে না, তখন এগুলো থেমে থাকে।
২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি চসিকের তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ফুটওভার ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রায় ২ মাস এটি চালু ছিল বলে জানান স্থানীয়রা। এরপরে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে এটি বন্ধ রাখা হয়।
ওয়্যারলেস এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, 'করোনা মহামারি শেষ হলেও ফুটওভার ব্রিজটি আর চালু হয়নি। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফুটওভার ব্রিজটি এই এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন মানুষ আর এটি ব্যবহার করতে পারছে না।'
যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, 'ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে ওই এলাকায় ফুটওভার ব্রিজটি স্থাপন করা হয়েছিল। চসিক কর্তৃপক্ষ মূলত রোগীদের সুবিধার্থে ব্রিজটি বসিয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষও ওভারব্রিজটি ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'যদি এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজটি আর্থিক কারণে কার্যকর না করা যায়, তাহলে কর্তৃপক্ষ এটিকে সাধারণ ফুটওভার ব্রিজ হিসেবে পরিচালনা করতে পারে।'
বিশেষজ্ঞদের মতে, এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজটি যে আর্থিকভাবে কার্যকর হবে না, তা এটি স্থাপনের পরিকল্পনা করার সময় চসিক কর্তৃপক্ষের বোঝা উচিত ছিল।
নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, 'যখন এটি বসানো হচ্ছিল, তখন আমি চসিকের তৎকালীন মেয়রের কাছে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। এই ধরনের অপরিকল্পিত প্রকল্প প্রণয়ন প্রমাণ করেছ যে চসিকের কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনা নেই।'
তিনি বলেন, 'পরিকল্পনা ও ডিজাইনের মূল দর্শন হলো, একটি প্রকল্পের আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও পরিবেশগত কার্যকারিতা বিবেচনা করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জনসাধারণের অর্থের অপচয় হয়েছে মাত্র, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।'
ফোরাম ফর প্ল্যানড চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি সুভাষ বড়ুয়া বলেন, 'এখন জনগণের অর্থের অপচয় সম্পর্কে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করছে, কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। জনগণের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো সংস্কৃতি এ দেশে গড়ে ওঠেনি।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এই ধরনের প্রকল্প কল্পনা করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মার্কিন সরকারের জবাবদিহি অফিস এমন কোনো প্রকল্প শুরু করতে দেবে না, যেখানে জনসাধারণের অর্থেরই শুধু অপচয় হবে।'
যোগাযোগ করা হলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজের বিদ্যুৎ খরচ এত বেশি যে এটি চালানো সম্ভব নয়।'
প্রকল্প পরিকল্পনার সময় বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।
এই এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজের জন্য প্রতি মাসে চসিকের কত বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, 'এটি ৩ বছর ধরে অকার্যকর। কত টাকা বিল আসতো সেটা মনে নেই।'
এই প্রকল্পে জনসাধারণের অর্থের অপচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, 'এস্কেলেটরটি অপসারণ করে এটিকে ম্যানুয়াল ফুটওভার ব্রিজ হিসেবে পরিচালনা করা হবে।'
বারবার চেষ্টা করেও কল রিসিভ না করায় মন্তব্যের জন্য চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
Comments