প্রকৌশলীকে মারধরের পর মাথা ন্যাড়া: মামলা হয়নি ৩ দিনেও

কোম্পানীগঞ্জ থানা
কোম্পানীগঞ্জ থানা। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক উপসহকারী প্রকৌশলীকে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় মামলা হয়নি বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত।

মঙ্গলবার বিকেলে মারধরের ঘটনার পর বুধবার থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও, পুলিশ তা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের। 

এদিকে, কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ বলছে ওই ঘটনার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিতে আসেনি। 

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড ও ১ নম্বর ওয়ার্ড বড় রাজাপুর মহল্লায় প্রকৌশলী সাইফুলকে মারধরের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। 

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেন ও তার অনুসারী স্থানীয় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন ওই প্রকৌশলী।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার লোক মারফত লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে, পুলিশ মেডিকেল সনদ না থাকার অজুহাত দিয়ে সেটি গ্রহণ করেনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে মেডিকেল সনদসহ আবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় যাই। তখন তারা সন্ধ্যার পর যেতে বলেন।'

'বুধবার সন্ধ্যার পর আমার পক্ষ থেকে পিডিবি কোম্পানীগঞ্জ কার্যালয়ের লাইনম্যান মো. মামুন লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় পরিদর্শকের (তদন্ত) কাছে যান। পরিদর্শক তাকে বলেন যে ডাক্তারি সনদসহ অভিযোগকারীকে থানায় আসতে হবে,' বলেন প্রকৌশলী সাইফুল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান অভিযোগ নিয়ে কারও থানায় যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভিযোগ নিয়ে ওসির কাছে যাবে, আমার কাছে কেন আসবে। আমি সাক্ষী দিয়ে বুধবার রাতে থানায় ফিরেছি।'

যোগাযোগ করা হলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার সন্ধ্যা থেকে আমি থানায় ছিলাম। প্রকৌশলীর ঘটনার বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এলাকার সবাই জানে এ ঘটনার বিষয়ে। অভিযোগ দিলে আমি নেবো না কেন? আমার কাছে আসেনি। আমি পরিদর্শক তদন্তকে জিজ্ঞেস করব।'

বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত তার কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি বলে দাবি করেছেন ওসি সাদেকুর।

তবে অভিযোগ নিয়ে থানায় যাওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন লাইনম্যান মামুন। থানা অভিযোগ গ্রহণ না করায় তিনি সেখান থেকে ফিরে এসে বিষয়টি প্রকৌশলী সাইফুলকেও জানিয়েছেন।

থানা মামলা না নিলে, প্রকৌশলী সাইফুল আদালতের আশ্রয় নেবেন বলে জানান।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'আমার ওপর হামলা হলেও, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। ৩ সদস্যের যে তদন্ত কমিটি হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন আছেন যিনি হামলার ঘটনার পেছনে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করি।'

সাইফুল ইসলামের অভিযোগ, 'অবৈধ লাইন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যরা এখন উঠেপড়ে লেগেছেন আমাকে ফাঁসানোর জন্য। তারা এখন হামলাকারীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে নানা গল্প প্রচার করছেন।'

তিনি জানান, কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীর হাট, মোল্লারটেকসহ বিভিন্ন স্থানে লো ভোল্টেজ দূরীকরণ, খুঁটি স্থাপন ও নতুন তার টানার জন্য বাপেক্সের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের বিদ্যুৎলাইন নির্মাণের উদ্দেশ্যে ফেনী থেকে পিডিবির ঠিকাদারের লোকজন কোম্পানীগঞ্জে আসেন। তারা তাদের নির্ধারিত কাজ না করে বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি অবৈধ লাইন নির্মাণকাজ শুরু করেন। 

বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর আবারও অবৈধ লাইন নির্মাণকাজ শুরু হলে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুনরায় বাধা দিলে যুবলীগের নেতা মো. খোকন ও শিপন শাহরিয়ারসহ ১০-১২ জন তাকে মারধর করেন। পরে সেখান থেকে তাকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়ির সামনে তার ছোট ভাই শাহদাতের কাছে নিয়ে যান।

তিনি আরও জানান, সেখানে একটি ঘরে আটকে রেখে শাহদাতসহ কয়েকজন দ্বিতীয় দফায় তাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে তারা তার মাথার চুল কেটে দেন। এরপর ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন যুবলীগ নেতা খোকন। পরে খবর পেয়ে ফেনী থেকে পিডিবির লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।
 

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago