নোয়াখালী

প্রকৌশলীকে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ সেতুমন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক উপসহকারী প্রকৌশলীকে ২ দফা মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে। তবে এ ঘটনার পর দুদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।

আহত ও লাঞ্ছিত ওই প্রকৌশলীর নাম সাইফুল ইসলাম (৩৫)। তিনি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ পিডিবির ফেনী কার্যালয়ের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বসুর হাট পৌরসভা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী। 

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড ও ১ নম্বর বড় রাজাপুর মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে ফেনি বিদ্যুৎ বিভাগের আরেক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ রাত ৮টার দিকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ফেনি নিয়ে যান। 

এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলে তাকে বদলি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও জানান, আহত প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, জীবন বাঁচাতে তিনি ফেনি ছেড়ে এক স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন।

তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর ও মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেন ও তার অনুসারী স্থানীয় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ইসলাম জানান, কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীর হাট, মোল্লারটেকসহ বিভিন্ন স্থানে লো ভোল্টেজ দূরীকরণ, খুঁটি স্থাপন ও নতুন তার টানার জন্য বাপেক্সের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের বিদ্যুৎলাইন নির্মাণের উদ্দেশ্যে ফেনী থেকে বিউবোর ঠিকাদারের লোকজন কোম্পানীগঞ্জে আসেন। তারা তাদের নির্ধারিত কাজ না করে বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি অবৈধ লাইন নির্মাণকাজ শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর আবারও অবৈধ লাইন নির্মাণকাজ শুরু হলে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুনরায় বাধা দিলে যুবলীগের নেতা মো. খোকন ও শিপন শাহরিয়ারসহ ১০-১২ জন তাকে মারধর করেন। পরে সেখান থেকে তাকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়ির সামনে তার ছোট ভাই শাহদাতের কাছে নিয়ে যান।
 
প্রকৌশলী সাইফুল বলেন, 'সেখানে একটি ঘরে আটকে রেখে শাহদাতসহ দ্বিতীয় দফায় আমাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে তারা আমার মাথার চুল কেটে দেন। এরপর আমার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন যুবলীগ নেতা খোকন। পরে খবর পেয়ে ফেনী থেকে পিডিবির লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করেন।'

'বর্তমানে আমি আমার এক স্বজনের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমি এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আবাসিক ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করলেও তারা বিষয়টি দেখছি বলে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আমাকে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। ভয়ে আমি নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি', বলেন প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মো. শাহদাত হোসেন প্রকৌশলীকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মারধরের শিকার প্রকৌশলী একজন ঘুষখোর। বসুরহাট এলাকা থেকে গত ৩ বছরে সে ৩ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রাহকরা বিদ্যুতের জন্য আবেদন করলে প্রতি মিটারে তিনি ৮-১০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে থাকেন। বসুর হাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সোমবার বিকেলে ২টি খুঁটি স্থাপনে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করায় স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে উত্তম-মধ্যম দিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসেছে। এ সময় কে বা কারা তার চুল কেটে দিয়েছে তা আমি জানি না।' 

তবে প্রকৌশলীকে মারধর করেননি বলে দাবি করেন শাহদাত হোসেন।

বসুরহাট পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি শিপন শাহরিয়ার দাবি করেন, তিনি প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের ওপর হামলা করেননি। তবে তিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বানু মাঝির বাড়িতে খুটি স্থাপন করতে গেলে প্রকৌশলী ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওই প্রকৌশলী মন্ত্রীর ছোট ভাইয়ের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন। তখন ওই এলাকার নারীরা তাকে ঘিরে ধরে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছে। মন্ত্রীর ভাই তাকে রক্ষা করেছেন।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি জেনেছি। তবে ঠিক কারা, কেন এবং কোথায় ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) মাধ্যমে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি।'

এ বিষয়ে পিডিবি ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা উন-নবী বৃত্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামলা, মারধর কিংবা চুল কাটার কোনো ঘটনা ঘটেনি। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, তা সমাধান হয়ে গেছে।'

ঘটনার সমাধান হলে জীবন বাঁচাতে সাইফুল ইসলাম কেন ফেনী থেকে পালিয়ে কুমিল্লা গেলেন, এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, মাগরিবের নামাজ শেষে এ বিষয়ে ফোনে কথা বলবেন। তবে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।

 

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

13h ago