‘এক দফা, এই সরকারকে চলে যেতে হবে, নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে’

আওয়ামী লীগ একটা প্রোপাগান্ডা দল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: স্টার

এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ বুধবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশ করবে বিএনপি। একইদিনে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে 'শান্তি সমাবেশ' করবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ-উত্তর) আওয়ামী লীগ।

বিষয়টি নিয়ে আজ সকালে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: একই দিনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচির কারণে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন কি না?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে কোনো রকমের সাংঘর্ষিক রাজনীতি যেন না হয়, সেজন্য সচেতনভাবেই আমরা কর্মসূচিগুলো দিচ্ছি। সেগুলো শান্তিপূর্ণ ও জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি। আমাদের দিক থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যে আওয়ামী লীগের কোনো রকম উসকানিতেও যেন আমরা শান্ত থাকতে পারি। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারি দল প্রথম থেকেই শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি তৈরি করতে চাইছে। তারা পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস করে বিএনপির ওপর দায় চাপাতে চায়। সে কারণে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করলেই তারা পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করছে। আমরা কিন্তু তাদের পাল্টা কোনো কর্মসূচি কখনো দিচ্ছি না।

ইতোমধ্যে অনেকগুলো জায়গায় আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা আক্রমণ করেছে। তারপরও বলতে চাই যে, আমাদের কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। আমরা কোনো ধরনের সহিংসতার দিকে যাব না। কিন্তু সরকার পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেওয়া জন্য প্যারালাল কর্মসূচি দিচ্ছে, যা জাতিকে একটা সহিংসতা ও সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে, যা আমরা এড়াতে চাই। এটার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকার ও সরকারি দলের।

ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, তারা সরকারে আছে। সেই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য যদি কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলন করে, তাহলে সেই আন্দোলন ঠেকানোর, সেই আন্দোলনের বিপরীতে তাদের সমাবেশ করার, রাজপথ দখলে রাখার অধিকার আছে এবং সেই কারণেই তারা শান্তি সমাবেশ করছে।

মির্জা ফখরুল: বর্তমান সরকার নির্বাচিত সরকার নয়, অবৈধ সরকার। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি যে, এই সরকারকে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। পুরো পৃথিবীতেই জনতা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করে নেয়। আমরা সেটাই বলেছি, বলছি। আমরা কখনোই সহিংস আন্দোলনের দিকে যাইনি এবং যাবও না।

ডেইলি স্টার: এই মুহূর্তে বিশ্বের শক্তিশালী ২টি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আছে—যুক্তরাষ্ট্রের ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের। তাদের সঙ্গেও তো আপনাদের আলোচনা হচ্ছে। আমরা কি বিদেশিদের দূতিয়ালি ছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানের সক্ষমতা অর্জন করব না বা করি নাই?

মির্জা ফখরুল: আমরা তো নিজেদের সমস্যার সমাধান করেছিলাম ১৯৯৬ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আমরা চালু করিনি? এতকিছুর পরেও আমরাই সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান নিয়ে এসেছিলাম, যাতে স্থায়ীভাবে নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকে এবং যাতে কোনো সমস্যা তৈরি না হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের বিধান নিয়ে এসেছে স্থায়ীভাবে সহিংসতাকে জিইয়ে রাখার জন্য এবং সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করার জন্য।

ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগ একবার বলছে সংলাপ হতে পারে, একবার বলছে হবে না। আবার বলছে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু না এনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে আলোচনা হতে পারে। আপনাদের সর্বশেষ অবস্থান কী?

মির্জা ফখরুল: আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সংলাপের প্রশ্নই উঠতে পারে না। কারণ আওয়ামী লীগ তো বিশ্বাসযোগ্য দলই নয়। তাদের আশ্বাসে আমরা এর আগে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কী করেছে? নির্বাচনকে পুরোপুরি আগের রাতে নিয়ে গেছে। প্রহসন করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য নির্বাচন বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা নয়। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যেভাবেই হোক রাষ্ট্রযন্ত্রকে দখল করে ক্ষমতায় থাকতে হবে। এটাই তাদের মূল লক্ষ্য। যেটা কোনোভাবেই জনগণ গ্রহণ করছে না এবং করবেও না।

ডেইলি স্টার: পুলিশের ২৩ দফা মেনে, অর্থাৎ শর্তের ভিত্তিতে বিএনপি বা আওয়ামী লীগকে আজ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হলো। আমরা গতকাল রাতেই দেখলাম বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে লোকসমাগম হয়েছে। এখন পল্টন থেকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট তো খুব বেশি দূরে নয়। সেক্ষেত্রে ২ দলের সমাবেশস্থল কি খুব কাছাকাছি হয়ে যাচ্ছে না?

মির্জা ফখরুল: এটাও একটা অশুভ চক্রান্ত। তারা তো সহজেই দুয়েকদিন পরে সমাবেশ করতে পারত কিংবা দূরে কোথাও করতে পারত। আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে যে তারা বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে যে তারা পুরোপুরিভাবে একটা সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে তারা ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে চায়। জনগণ এটা গ্রহণ করবে না।

ডেইলি স্টার: যে ২৩ শর্তের ভিত্তিতে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলো, যেমন: রাস্তায় আসা যাবে না, ফুটপাতে থাকতে হবে, যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না—এসব শর্ত মেনে কি এরকম বড় একটি সমাবেশ করা সম্ভব? আপনারা কি সেটা করতে পারবেন?

মির্জা ফখরুল: এটা কখনই সম্ভব না। জনগণ তাদের অধিকার আদায় করে নেয়। পাকিস্তানি মনোভাব থেকে আওয়ামী লীগ তো বেরই হতে পারেনি। পাকিস্তান এভাবে করত। আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন করে রাখার জন্য এই ধরনের শর্ত আরোপ করে করছে পাকিস্তানি কায়দায়, একাত্তরের কায়দায়। শর্তাধীন রাজনীতি তো পাকিস্তানি কায়দা।

ডেইলি স্টার: সেক্ষেত্রে বিএনপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি খুব প্রবলভাবে করা হয় যে, বিএনপি আগুন সন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে মারে। আবারও সেরকম একটা জায়গায় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না এবং সেই দায়টা আবারও বিএনপির ওপরেই আসবে কি না?

মির্জা ফখরুল: এটা তো প্রমাণ হয়েছে গত ৫ বছরে যে, কারা আগুন সন্ত্রাস করে, কারা পুড়িয়ে মারে, কারা এগুলো করে বিএনপির ওপর দায় চাপায়। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব সরকারের। বিএনপির এ ধরনের কাজের প্রশ্নই উঠতে পারে না। কারণ বিএনপি এখন পর্যন্ত এমন কোনো কর্মসূচি দেয়নি যার ফলে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ ধরনের প্রশ্ন শুনলে মনে হয় যে আপনারা আসল জায়গা থেকে দূরে সরে যান। আসল জায়গাটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতাকে হরণ করেছে। জনগণের যে গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই জায়গা থেকে তারা জনগণকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছে। যারা আজকে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিচ্ছে, তারা সবাই তো এই রাজনীতিই করছে। আমরা মনে করি এটা একটা বড় ধরনের চক্রান্ত। সেই চক্রান্ত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। সেই কারণেই এক দফা, এই সরকারকে চলে যেতে হবে, নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।

ডেইলি স্টার: আজকের সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না?

মির্জা ফখরুল: বাধা তো আছেই বিভিন্নভাবে। আমরা সেগুলোকে বড় করে দেখতে চাই না। সেগুলোতে অতিক্রম করেই আমরা আজকের সমাবেশ সফল করব। এক দফা আন্দোলনের সূচনা করব। এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। নাম যাই হোক, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

12m ago