নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করে গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করা যাবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সংস্কার কমিশনের প্রচেষ্টার মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে...নির্বাহী বিভাগকে যত বেশি নিয়ন্ত্রিত করা যায়। অতীতে একজন স্বৈরাচার হয়েছিল সেজন্য নির্বাহী বিভাগ আমরা বিলুপ্ত করতে পারব না এবং দুর্বল করতে পারব না। একজন সংসদীয় পদ্ধতিতে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেজন্য তো আমরা আইনসভাকে বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগকে তার কাজ করতে দিতে হবে।
'সেখানেই থাকবে একটা কমপ্লিট ব্যালেন্স অব পাওয়ার। সেটাকে আমরা আইনের ভাষায় যেটা বলি যে একটা সেপারেশন অব পাওয়ার থিওরির যেটা মূল কথা—স্টাবলিশিং হারমোনিয়াস কোঅপারেশন অ্যামাং অল অরগানস অব দ্য স্টেট। তাহলে একটি আরেকটির ওপরে অত্যধিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, হস্তক্ষেপ করতে পারে না। একটি আরেকটির ব্যালেন্সিং পাওয়ার বা পাহারাদার হিসেবে কাজ করে।'
তিনি বলেন, আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং একটা হারমোনিয়াস কোঅপারেশনের। একটা মধুর সম্পর্ক এবং পাহারাদার সৃষ্টি করা। সেফগার্ড সৃষ্টি করার জন্য সব অর্গানগুলোকে সেভাবে শক্তিশালী করা। সব গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো, যাতে করে তারা নিজস্ব এখতিয়ারের মধ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। এতে করে আর কোনোদিন এদেশে স্বৈরাচারের উৎপত্তি হবে না।
'আমরা ক্রমান্বয়ে সেদিকে যাচ্ছি, আমরা ৭০ অনুচ্ছেদের মধ্যে সংস্কার এনেছি। এতে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এখন একটা প্রস্তাব আরও দিয়েছি আমরা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সদস্যদের মধ্যে গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে এমপিরা ভোট দেবে, সেটা আরেকটা বিপ্লব হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করলাম আমরা। এটি কি আমাদের একটা বড় ধরনের অর্জন নয়? কিন্তু আমরা যদি প্রতিক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে সীমাবদ্ধ করি আইনিভাবে ও সাংবিধানিকভাবে, তাইলে নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হবে। এরফলে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে না, সরকারও পরিচালনা করা যাবে না।'
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিএনপি সেই সংস্কার চায় যেই সংস্কারের মধ্যে কোনো বিভাগের অধিকার খর্ব হবে না, যেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো নির্মিত হবে, যার ফলশ্রুতিতে দেশ ও জাতির মধ্যে একটা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন হবে।
গণমাধ্যমকে নিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা মনে রাখবেন, আপনারা যেন মালিকের চাকরি না করে বিবেকের চাকরি করেন। যেই দেশে ফ্রিডম অব প্রেস শতভাগ, সেই দেশের গণতন্ত্রও শতভাগ, যা আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে।
আপনারা যারা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত আছেন, তাদের অনেক বেশি দায়িত্ব এই জাতি বিনির্মাণের জন্য। ভবিষ্যৎ শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং রাষ্ট্র দাঁড় করার জন্য আপনাদেরকে অবিরাম সংগ্রাম করতে হবে কলমের মধ্য দিয়ে। ফ্রিডম অব প্রেস যেন এনসিওর করা হয়। আমাদের যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার এবং সরকার ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে এ ব্যাপারে।
'দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রাম করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সব সময়ের জন্য আমাদের দেশে নির্বাচনকালীন সময়ে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যদি সত্যিকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা হয়, তাহলে কিন্তু স্বৈরাচারের উৎপত্তিটা বন্ধ হয়ে যায়।'
Comments