ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রেখে যেভাবে ব্যবহার করবেন টিকটক
বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কানাডা ও পশ্চিমের অন্যান্য দেশের কর্তৃপক্ষ টিকটক ব্যবহার সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করছে। এই দেশগুলো বলছে, টিকটক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের সম্পর্কে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেগুলো চীন সরকারের কাছে পাচার করে। টিকটক যদিও বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
টিকটকে তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ যেমন আছে, আবার এই অ্যাপের জনপ্রিয়তাও ভিন্ন উচ্চতায়। তরুণ প্রজন্ম অ্যাপটিতে বুঁদ হয়ে আছে। প্রশ্ন আসে, ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে কি টিকটক ব্যবহার সম্ভব?
পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগের কারণ
টিকটক নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগ অস্বাভাবিক নয়। তারা অ্যাপটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। অ্যাপটির মালিক চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটডান্স। চীনের আইন অনুসারে দেশটির সরকার কোনো তথ্য চাইলে বাইটডান্স সেটি সরবরাহ করতে বাধ্য।
গ্রাহকের ফেসিয়াল আইডি, কণ্ঠ, টেক্সট, লোকেশন, ছবি, ব্রাউজিং হিস্ট্রিসহ অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করে টিকটক। যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা প্রথম কোনো রাজ্য, যেখানে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও দেশটির দুই তৃতীয়াংশ তরুণের মধ্যে টিকটক জনপ্রিয়।
তাহলে বিকল্প কী?
অনেকে ভাবতে পারেন মোবাইল অ্যাপ বাদ দিয়ে ওয়েব থেকে টিকটক ব্যবহার করলে তথ্য বেহাত হওয়ার সুযোগ কম থাকবে। কিন্তু এটাও সঠিক নয়। ওয়েব থেকেও অনেক তথ্য সংগ্রহ করে টিকটক। তা সত্ত্বেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
আলাদা স্মার্টফোন
এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে অল্প দামে আলাদা একটি স্মার্টফোন কেনা। এই স্মার্টফোনটি আপনি শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কাজে ব্যবহার করতে পারেন। খুব কম দামী অ্যান্ড্রয়েড ফোনেও এই কাজটি করা সম্ভব।
নতুন একটি ফোন কিনে সেখানে টিকটক অ্যাপ ইনস্টল করে তারপর অ্যাপটি ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন।
তবে তারপরও সতর্ক থাকতে হবে। আপনার কোনো প্রাইমারি একাউন্ট এই ফোনে ইনস্টল বা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
ফোনটি একেবারেই আলাদা রাখুন
আপনার নিজস্ব গুগল অ্যাকাউন্ট বা অ্যাপল আইডি, প্রাথমিক বা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া ইমেইল আইডি ও ব্যক্তিগত ইমেইল এই মোবাইলে ব্যবহার করবেন না। অবশ্যই এমন কোনো একাউন্ট বা প্রোফাইল ব্যবহার করবেন না, যেখানে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে।
টিকটক ব্যবহারের জন্য নতুন আরেকটি ইমেইল আইডি তৈরি করা হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। ফলে টিকটক যদি আপনার তথ্য সংগ্রহ করেও, তারপরও কোনো ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
তারপরও ফোনটি যেহেতু আপনিই ব্যবহার করছেন, তাই সর্বদা সতর্ক থাকা ভালো। নতুন কোনো অ্যাপ ব্যবহারের আগে, নতুন কোনো একাউন্টে লগ ইন করার আগে অথবা নতুন কোনো তথ্য সরবরাহ করার আগে ভালোভাবে চিন্তা করুন।
নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার আগে সতর্ক থাকুন
আপনি হয়তো ফোনটিকে বাসার ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করছেন। একই নেটওয়ার্কের সঙ্গে বাসার অন্যান্য ডিভাইসও যুক্ত থাকে।
দুর্ভাগ্যবশত যদি এই ফোনে কোনো ম্যালওয়ার প্রবেশ করে, তাহলে তা বাসার অন্যান্য ডিভাইসের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করে।
যেহেতু নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নতুন ফোনটি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য, তাই বাসার নেটওয়ার্কে একটি গেস্ট বা অতিথি নেটওয়ার্ক তৈরি করে তারপর ফোনটিকে সংযুক্ত করুন।
এর ফলে বাসার অন্যান্য ডিভাইসগুলো যে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, এই ফোনটি ভিন্ন নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকবে।
অধিকাংশ রাউটারের সেটিংসে গিয়ে 'গেস্ট নেটওয়ার্ক' সেট করা যায়। রাউটারের ইউজার ম্যানুয়ালেও সাধারণত গেস্ট নেটওয়ার্ক সেটআপের নির্দেশনা থাকে।
সাধারণত রাউটারের সেটিংসের ওয়্যারলেস সেটিংসে গেস্ট ওয়াই-ফাই সেকশনে এই অপশনটি থাকে। সেখান থেকে রাউটারের গেস্ট নেটওয়ার্ক সেটআপ করে নিতে পারেন।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল
Comments