বিচ্ছেদের পর সামলে উঠবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

জীবন চলার পথে যে মানুষটির ওপর আমরা মানসিকভাবে অনেকখানি নির্ভরশীল থাকি, তার সঙ্গে নানা কারণে সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। দাম্পত্য সম্পর্ক বা প্রেমের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটলে হতাশায় ভুগতে শুরু করাটাই স্বাভাবিক। তবে অনেকের জন্য এই ধাক্কা সামলে উঠা কঠিন হয়ে পড়ে। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না এটা জানার পরও অনেকেই বুঝতে পারেন না, এখন আসলে কী করা উচিত।

বিচ্ছেদের ধকল কীভাবে সামলে উঠবেন তা নিয়ে থাকল কিছু পরামর্শ।

সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিন

বিচ্ছেদ যখন হয়েই গেছে, তখন সেই মানুষটির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। কাজটি সত্যিকার অর্থেই কঠিন। দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে বারবারই ইচ্ছা করবে যোগাযোগ করতে। ইন্টারনেটের এই যুগে তো এখন এক ক্লিকেই প্রাক্তনের খোঁজ জানা যায়, ফলে নিজেকে সংবরণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

কিন্তু এভাবে নিজেকে সামলে নেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে। যোগাযোগ রাখলে পিছুটান কাটবে না, একা চলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারবেন না। তাই কোনো ধরনের ক্ষুদে বার্তা পাঠানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুসরণ করা অথবা ফোন করা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। সম্ভব হলে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন কিছুদিনের জন্য। প্রবাদ আছে, 'চোখের আড়াল তো মনের আড়াল'। যদি প্রাক্তন যোগাযোগ করার চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে আপনি এড়িয়ে চলুন।

নিজের চিন্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করুন

চিন্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার কথা বলা যতটা সহজ, করা ঠিক ততটাই কঠিন। আপনার ও আপনার প্রাক্তন সঙ্গীর মাঝে যে সমস্যাগুলো হয়েছে এবং আপনাদের যেসব ভালো সময় ছিল, সেগুলো বারবার চিন্তা করতে থাকলে খারাপ লাগা আরও বাড়তে থাকবে। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা বিরত থাকুন।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ গ্রিনবার্গ বলেছেন, 'এসব ক্ষেত্রে আমরা চিন্তা থামানোর পরামর্শ দিই। যখন বুঝতে পারবেন আপনি এই চিন্তাগুলোর মধ্যে আটকে আছেন, তখন সেখানেই নিজেকে থামিয়ে দিন।'

কাজটি সহজ না হলেও চেষ্টা করতে থাকুন। প্রাক্তন সঙ্গীর সাথে কাটানো সুসময় কিংবা দুঃসময় – দুটোর কোনোটাই মাথায় না আনার চেষ্টা করুন। মাথায় চলে এলে ওই সময় অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিন বা কোনো বন্ধুর সঙ্গে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলুন অথবা একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসুন।  

নিজের প্রতি মনোযোগ দিন

সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে গেলে নিজের মাঝে পরিবর্তন আসে, এমনকি দীর্ঘদিনের অভ্যাসেও আসে পরিবর্তন। বিচ্ছেদের ইতিবাচক দিক হিসেবে আপনার সেই হারিয়ে যাওয়া অভ্যাসকে নতুন করে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।সম্পর্কে থাকাকালীন যে কাজগুলো করতে পারেননি সেগুলো শুরু করতে পারেন। হতে পারে সেটি বাগান করা কিংবা বই পড়া।

আবার আপনি যদি ভ্রমণপিয়াসী হয়ে থাকেন তাহলে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন নতুন জায়গা দেখতে। নিজেকে ভালবাসুন,নিজেকে নতুন করে জানার চেষ্টা করুন।নিত্যনতুন জিনিসের সন্ধান করুন। আপনাকে আনন্দ দেওয়া বিষয়গুলো খোঁজা অনেক জরুরি। এই অন্বেষণ আপনার হৃদয়ের ক্ষত পূরণে সাহায্য করতে পারে।

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান

বিচ্ছেদের পর নিজেকে একা করে ফেলেন অনেকেই। বদ্ধ ঘরে কাতরতায় ডুবে না থেকে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে মন হালকা হবে। সম্পর্কে থাকাকালীন সেভাবে তাদের খোঁজ নেওয়ার সময়-সুযোগটাই পাচ্ছিলেন না হয়তো। তাদের সামনে আপনার মনের অবস্থা তুলে ধরুন, কথা বলুন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারেন কিংবা দল বেঁধে ঘুরতে যেতে পারেন। পুরনো বন্ধুদেরও খুঁজে নিতে পারে এই সময়ে। এই মানুষগুলোই আপনার মনের ক্ষত সারিয়ে তুলবে অনেকখানি।

নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন

অনেকেই বিচ্ছেদের পর নেতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করেন।সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর হতাশা এমনভাবে আঁকড়ে ধরে যে অনেক সময় বেঁচে থাকাও অর্থহীন মনে হতে থাকে। আত্মবিধ্বংসী চিন্তা মাথা আসে। এগুলোকে কোনোভাবেই মনে স্থান দেওয়া যাবে না। মনে রাখবেন, সঙ্গীর ওপর রাগ করে বা সঙ্গীকে হারিয়ে ফেলার দুঃখে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষতিটা আপনারই হচ্ছে। একটুখানি ভুলের জন্য জীবন অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। নেতিবাচক চিন্তার বিপরীত দিকে নিজেকে ঠেলে নিয়ে যেতে হবে। নিজেকে বোঝাতে হবে, জীবন এতো ঠুনকো নয় যে কারো প্রস্থানে থমকে যাবে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

অনেকভাবে চেষ্টা করার পরও অনেকের মনে প্রাক্তনের সঙ্গে স্মৃতিগুলো বারবার ফিরে আসে আর তীব্র মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চাইলেও মানসিক ট্রমা, হতাশা থেকে বের হওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে শরণাপন্ন হতে হবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের।

সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা বহু মানুষ পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডারেও ভোগেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, 'সম্পর্কের ভাঙন মনের ওপর খারাপ প্রভাব রেখে যায়। হতাশা থেকে দেখা যেতে পারে মানসিক রোগ।'

যদি মনে হয় আপনি নিজেকে আর সাহায্য করতে পারছেন না, তবে একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে কাউন্সিলিং করুন। ধীরে ধীরে নিজেকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন তাহলে।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

7h ago