টানা তৃতীয় বছরের মতো গম আমদানি কমেছে

গমের দাম
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আনু মাঝির ঘাটে আমদানি করা গম বস্তায় ভরছেন এক নারী। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর এলসি খোলার ক্ষেত্রে ধীরগতি ও পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় টানা তৃতীয় বছরের মতো দেশে গম আমদানি কমেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গমের আমদানি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৩৮ দশমিক ৭৫ লাখ টন হয়েছে। আগের বছর এটি ছিল ৪০ দশমিক ১২ লাখ টন।

২০২০-২৩ অর্থবছরে গম আমদানি ছিল গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। উৎপাদন কম হওয়ায় বাংলাদেশ গমের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর বেশ নির্ভরশীল।

গম আমদানি কমে যাওয়ায় দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় খাদ্যশস্য আমদানি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। আগের বছরের তুলনায় তা ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম।

আকিজ ইনসাফ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দাম বেড়ে যাওয়ায় গমের আটার ব্যবহার কমেছে।'

'এটি আমদানিতেও প্রভাব ফেলেছে,' যোগ করেন তিনি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত অর্থবছরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানি বেড়েছে। কিন্তু, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি প্রায় ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৯৫ লাখ টন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেশী ইউক্রেনে পরাশক্তি রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সরবরাহ সংকট দেখা দিলে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়ে যায়। একই বছরের মে মাসে খাদ্যশস্য রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলে।

২০২২ সালের জুলাই থেকে দেশের বাজারে গমের আটার দাম বাড়তে শুরু করে। গত ডিসেম্বরে প্রতি কেজি আটা বিক্রির সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ৬২ দশমিক ২৬ টাকা।

২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধরত রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ চুক্তির পর নির্বিঘ্নে খাদ্যশস্য সরবরাহের বিষয়ে উদ্বেগ কিছুটা কমে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনকে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়।

আমদানিকারকরা বলছেন, পরবর্তী মাসগুলোয় খাদ্যশস্যের দাম কমতে শুরু করলেও আমদানি কমে যাওয়ায় ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে দেশের ভোক্তারা এর সুবিধা পুরোপুরি নিতে পারেননি।

বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যে জানা গেছে, গত জুনে প্রতি কেজি আটার দাম ছিল ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা। এটি গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি।

দেশে গমের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমদানি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়া।'

তিনি আরও বলেন, 'শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় গমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে বিস্কুটের মতো অন্যান্য খাদ্যপণ্য তৈরিতে গমের ব্যবহার কমে গেছে।'

তার মতে, প্রতিষ্ঠানগুলো গমের মজুদ রাখতো ৩ মাস পর্যন্ত। এখন তা নেমে এসেছে ১৫ দিনে।

তবে বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম কমে যাওয়ায় চলতি মাস থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, 'প্রচুর উৎপাদনের পাশাপাশি এর মজুদ আছে।'

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপ-মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একদিকে যেমন গমের উৎপাদন বেড়েছে অন্যদিকে এর দাম কমেছে।'

আগামী দিনগুলো ভালোভাবে কাটবে বলেও আশা করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
gold price hike in Bangladesh

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

According to market data, gold now sells for $1,414 per bhori in Bangladesh, compared to $1,189 in India, $1,137 in Dubai

1h ago