ফিলিস্তিনের জেনিন থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার, ২ দিনে নিহত ১২

জেনিনে সামরিক অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনারা বেড়ার সামনে জমায়েত হন। ছবি: রয়টার্স
জেনিনে সামরিক অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনারা বেড়ার সামনে জমায়েত হন। ছবি: রয়টার্স

দুই দিনের ভয়াবহ ও সহিংস অভিযান শেষে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শহর জেনিন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২।

আজ বুধবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার সাম্প্রতিক সময়ে অধিকৃত ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সবচেয়ে তীব্র ও রক্তক্ষয়ী এই অভিযান শেষ হয়।

এ ঘটনার পর গাজা উপত্যকা থেকে স্বাধিনতাকামী বাহিনীরা রকেট হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিক্রিয়ায় একটি ভূগর্ভস্থ অস্ত্র নির্মাণ কারখানায় ইসরায়েল যুদ্ধবিমান হামলা চালায়। তবে নতুন এই সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়বে কী না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে, রয়টার্সের সাংবাদিকরা লক্ষ্য করেন, অভিযানের সমাপ্তি টেনে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গাড়িবহর রাতের আধারে জেনিন ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

এই 'অভিযানে' ১২ ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হন, যাদের মধ্যে অন্তত ৫ জন যোদ্ধা। এক ইসরায়েলি সেনাও প্রাণ হারিয়েছেন।

ইসরায়েলের ভাষ্য অনুযায়ী, জঙ্গি অবকাঠামো ও অস্ত্র ধ্বংসের উদ্দেশ্যে জেনিন শরণার্থী শিবিরে পরিচালিত এই অভিযান শুরু হয় সোমবার। এতে প্রাথমিকভাবে ড্রোন ও ১ হাজার সেনা অংশ নেন।

ইসরায়েলি সেনারা চলে যাওয়ার পর শিবির ছেড়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা ফিরে আসতে শুরু করেন। কেউ কেউ মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা বোঝার চেষ্টা করেন।

এই জনবহুল শরণার্থী শিবিরে মাত্র ৫০০ বর্গমিটার জায়গায় ১৪ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। সর্বশেষ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল জেনিনের এই শিবির।

ইসরায়েলি বাহিনী জেনিন ছেড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর গাজা উপত্যকার ফিলিস্থিনি স্বাধিনতাকামী বাহিনীর সদস্যরা ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডের উদ্দেশ্যে ৫টি রকেট ছুঁড়েছে। সামরিক বাহিনী এই তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, রকেটগুলো লক্ষ্যে আঘাত হানার আগেই ভূপাতিতি হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা যায়নি।

রকেট হামলার প্রত্যুত্তরে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স
রকেট হামলার প্রত্যুত্তরে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা জেনিন থেকে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরক খুঁজে পেয়েছে। একটি মসজিদের নিচে অবস্থিত সুড়ঙ্গেও এরকম বিস্ফোরকের সংগ্রহ খুঁজে পান তারা। এছাড়াও ১ হাজার অস্ত্র বাজেয়াপ্ত ও ৩০ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন তারা।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা শিবির থেকে ৫০০ পরিবারের প্রায় ৩ হাজার সদস্যকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১০০ জন আহত হয়েছেন, যাদের ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত আরও একবার প্রমাণ করেছে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মতপার্থক্যের রাজনৈতিক সমাধান এখন সুদূর পরাহত। আন্তর্জাতিক মহল এই অভিযানে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের নিজেদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে বেসামরিক ব্যক্তিদের জীবন বাঁচানো খুবই জরুরী। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, তারা সংঘাতের মাত্রা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সামরিক অভিযানের কলেবর দেখে তাদের আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এই অভিযানের প্রতিবাদে, পশ্চিম তীরের অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার ধর্মঘট পালন করে। ফিলিস্তিনি কতৃপক্ষ একে 'যুদ্ধাপরাধ' বলে অভিহিত করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
NBR Protests

NBR officials again announce pen-down strike

This time, they will observe the strike for three hours beginning at 9 am on June 23

1h ago