ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত জেনিন শহরে ইসরায়েলের রাতভর ড্রোন হামলায় নিহত ৭
২ সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় বারের মতো ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরের শহর জেনিনে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এক সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে রাতভর ড্রোন ও বন্দুক হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত হন।
আজ সোমবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাতে শুরু হয়ে এই অভিযান সোমবার সকাল পর্যন্ত চলেছে।
এ শহরে একটি বড় শরণার্থী শিবির রয়েছে। এ শিবিরকে ঘিরে একাধিক স্বাধীনতাকামী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত 'জেনিন ব্রিগেডস' নামের সংগঠনটি জানায়, তারা ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।
জেনিন শহর ও এর সংলগ্ন শরণার্থী শিবিরকে ঘিরে অন্তত ৬টি ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। এই জনবহুল এলাকায় ৫০০ বর্গমিটারের চেয়েও কম জায়গায় ১৪ হাজার মানুষের বসবাস।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭ ব্যক্তি নিহত ও ২৭ জন আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রামাল্লাহ শহরের চেকপয়েন্টে অপর এক ব্যক্তির মাথায় গুলি করা হলে তিনিও নিহত হন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা একটি ভবনে হামলা চালিয়েছে, যেটি জেনিন ব্রিগেডের সদস্যদের সামরিক সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল। তারা এই অভিযানকে পশ্চিম তীরের 'সন্ত্রাসবিরোধী' উদ্যোগের অংশ হিসেবে বর্ণনা করে।
২১ জুন জেনিনে আরো একবার ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এর আগে সর্বশেষ ২০০৬ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে ড্রোন ব্যবহার করে। তবে সহিংসতার মাত্রা এবং স্থলবাহিনীর ওপর চাপ বাড়তে থাকায় ড্রোনের ব্যবহার আরো বাড়তে পারে বলে এক সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
রয়টার্স এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেনিনের এই শরণার্থী শিবিরে হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও ফাতাহ সংগঠনের শত শত যোদ্ধা রয়েছে। তাদের কাছে পশ্চিম তীর দিয়ে চোরাকারবারের মাধ্যমে আনা অস্ত্র ও ইসরায়েলি বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র রয়েছে। এছাড়াও, তাদের আছে নানা ধরনের বিস্ফোরকের মজুত।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ত জানান, তার বাহিনী 'শত্রুদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে।
'প্রতিরক্ষা অবকাঠামো সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে', যোগ করেন তিনি।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র এই অভিযানকে 'আমাদের নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নতুন যুদ্ধাপরাধ' হিসেবে অভিহিত করেন।
গত ১৫ মাসে পশ্চিম তীরে বেড়েছে সহিংসতার মাত্রা। আন্তর্জাতিক মহলে এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। জেনিনের মতো শহরগুলোতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনিরাও ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে একাধিকবার ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে এবং প্রত্যুত্তরে ইহুদী উগ্রবাদীরা ফিলিস্তিনি গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে।
১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর অধিগ্রহণ করে। ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকার সমন্বয়ে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে চায়—যে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেরও সমর্থন রয়েছে।
তবে ২০১৪ সালের পর এ বিষয়টি নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি। এর আগে মার্কিন মধ্যস্থতায় দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা চললেও এতে ফল আসেনি।
Comments