পশ্চিম তীরেও চলছে ইসরায়েলি হামলা, গাজায় স্থল হামলায় ২ ইসরায়েলি সেনা নিহত

গাজার স্থল যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনা। ছবি: রয়টার্স
গাজার স্থল যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনা। ছবি: রয়টার্স

অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর-পূর্ব অংশের হেবরন অঞ্চলের বেইত আইনুন শহরের কাছাকাছি জায়গায় এক ফিলিস্তিনি তরুণকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আগের রাতে শরণার্থী শিবিরের হামলায় পাঁচজন নিহত হন।

এ ছাড়া পৃথক ঘটনায় খান ইউনিসে ১০ ফিলিস্তিনি ও গাজায় ২ ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।

আজ মঙ্গলবার আল জাজিরা, আনাদোলু, রয়টার্স ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম গত ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

পশ্চিম তীরে হামলা

অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলা চালায় ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলা চালায় ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স

গাজা উপত্যকায় চলমান হামলার পাশাপাশি পশ্চিম তীরেও নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম ওয়াফা জানায়, ২০ বছর বয়সী মুহাম্মাদ আবদ আল-মাজিদ আল-হালাকিয়াকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শুইউখ শহরের বাসিন্দা আল-হালাকিয়া ছুরি নিয়ে হামলা চালাতে গেলে (সেনাদের বিরুদ্ধে) তাকে গুলি করা হয়।

অভিযোগ মতে, আল-হালাকিয়াকে গুলি করে ফেলে রাখে ইসরায়েলি বাহিনী। ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছালেও সেনাসদ্যসদের বাধার মুখে চিকিৎসাকর্মীরা তার কাছে গিয়ে চিকিৎসা দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আল-হালাকিয়া। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে আল জাজিরার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহর তুলকারেমে আজ মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি বুলডোজার একটি অপ্রশস্ত সড়কের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলছে।

পশ্চিম তীরের শহর তুলকারেমে ইসরায়েলি বুলডোজার একটি অপ্রশস্ত সড়কের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে। ছবি: রয়টার্স
পশ্চিম তীরের শহর তুলকারেমে ইসরায়েলি বুলডোজার একটি অপ্রশস্ত সড়কের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে। ছবি: রয়টার্স

এর আগের রাতে শহরটির শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে পাঁচ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।

অপর এক পোস্টে বুলডোজারের নিচে বিধ্বস্ত গাড়ি দেখানো হয়।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত পশ্চিম তীরে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৯০ ছাড়িয়েছে।

গাজায় স্থলযুদ্ধ

গাজার স্থল হামলায় অংশ নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স
গাজার স্থল হামলায় অংশ নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স

সোমবার সন্ধ্যায় গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে স্থলযুদ্ধে ইসরায়েলের দুই সেনা প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতরা হলেন ফার্স্ট সার্জেন্ট রো মারম (২১) ও মেজর রাজ আবুলাফিয়া (২৭)।

সেনাবাহিনী এই দুইজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এই যুদ্ধে আরও চার ইসরায়েলি সেনা আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে ইসরায়েল।

দক্ষিণ গাজার পরিস্থিতি

অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে ধ্বংসযজ্ঞ। ছবি: রয়টার্স
অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে ধ্বংসযজ্ঞ। ছবি: রয়টার্স

এর আগে ওয়াফা সংবাদসংস্থা জানায়, দক্ষিণ গাজায় গতকাল সোমবার ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশু রয়েছে।

খান ইউনিস শহরের উত্তর অংশে আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালালে ১০ জন নিহতের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হন।

আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক। তাদেরকে নাসের হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসা উপকরণ ও ভেন্টিলেটরের অভাবে তাদের চিকিৎসা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।

হাসপাতাল পরিস্থিতি

আল-শিফা হাসপাতাল ও এর আশেপাশের এলাকায় চলছে নিরবচ্ছিন্ন হামলা। ছবি: রয়টার্স
আল-শিফা হাসপাতাল ও এর আশেপাশের এলাকায় চলছে নিরবচ্ছিন্ন হামলা। ছবি: রয়টার্স

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. আশরাফ আল-কুদরা আল জাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানান, জ্বালানি সংকটের কারণে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজার সবগুলো হাসপাতাল (মোট ৩৫টি) বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তিনি জানান, বেশিরভাগ হাসপাতালে ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবা বন্ধ আছে, বিশেষত, উত্তর গাজার হাসপাতালগুলোতে।

গাজার সবচেয়ে বড় দুই হাসপাতাল আল-শিফা ও আল-কুদস এর কার্যক্রম সোমবার থেকে বন্ধ আছে। জ্বালানির অভাবে এই দুই হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা সরঞ্জাম কাজ করছে না। 

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয়কারী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজার পরিস্থিতি 'উদ্বেগজনক'। সংস্থাটি শিগগির যুদ্ধবিরতির ও বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানায়।

নিহতের সংখ্যা

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাস হামলা চালালে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২০০ ইসরায়েলি ও বিদেশী নাগরিক। প্রথমে এক হাজার ৪০০ নিহত ও ২৪০ জিম্মির কথা বললেও পরে সংখ্যাটি সংশোধন করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

এর পর থেকে প্রায় ৩৭ দিন ধরে গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচার ও প্রতিশোধমূলক বিমান ও স্থল হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

এসব হামলায় প্রায় ১১ হাজার ৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের ৪০ শতাংশই শিশু।

শুক্রবারের পর গাজায় মৃতের সংখ্যার হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশিরভাগ হাসপাতালের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বসে যাওয়ায় সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

Comments

The Daily Star  | English

1,500 dead, nearly 20,000 injured in July uprising: Yunus

He announced plans to demand the extradition of deposed dictator Sheikh Hasina from India

1h ago