দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু মানুষের গরু কেনার সাধ্য তো আরও বেড়ে গেছে: কাদের

ওবায়দুল কাদের
আজ রোববার সকালে সচিবালয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

বাজার পরিস্থিতির ওপর কখনো কোনো সরকারের সেভাবে হাত ছিল না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'বাজার পরিস্থিতি ওঠা-নামা হবেই। আর আজকের সংকটে এই ওঠা-নামার মাত্রাটা আরও বাড়বে এটি খুব স্বভাবিক।'

আজ রোববার সকালে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'তুলনামূলকভাবে ঈদযাত্রা অনেক স্বস্তিদায়ক হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার দুটো ঈদই মোটামুটি হ্যাসেল ফ্রি।'

তিনি আরও বলেন, 'এবার ঈদের একটি বিষয় খুবই লক্ষ্যনীয়, এখন যে বিশ্ব পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া; সেখানে দেখুন এবার ১ কোটি ৫১ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। গত ঈদে সেটা ১ কোটির নিচে ছিল। এটা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য না করাই ভালো, আমরা অর্থনৈতিক অবস্থা এমনটা হয়নি; ঈদুল আজহার সময় গরু কোরবানির বিষয়টা, ঈদের আনন্দ উপভোগের মতো সাধ্য আমাদের দেশে এখনো আছে।'

কাদের বলেন, 'আমাদের বাড়ি যাওয়ার যে বিষয়টা, পদ্ম সেতুতে আমাদের টোল আদায় ১ কোটি ২০-৩০ লাখ প্রতিদিন। সেখানে ঈদের আগের ১ দিনে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৩ হাজার। বঙ্গবন্ধু সেতুতে একই সময়ে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে।'

'তার মানে বহু মানুষ ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের দিকে ছুটে গেছেন। জীবন একেবারে থেমে গেলে...আনন্দযাত্রায় বাড়ি যাওয়ার প্রবণতা, বেড়ানোর প্রবণতা কিন্তু কমেনি। আমাদের দেশে আগের চেয়ে বেশি ঈদযাত্রার আনন্দ আমরা দেখতে পেয়েছি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও মানুষ ঈদ উদযাপন করেছে,' বলেন তিনি।

চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এমআরটি লেন-৫ নর্থ ডাউন রুটের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করতে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেও এ সময় জানান সেতুমন্ত্রী।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সিন্ডিকেট বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বাজার পরিস্থিতি ওপর কখনো কোনো সরকারের সেভাবে হাত ছিল না। বাজার পরিস্থিতি ওঠা-নামা হবেই। আর আজকের সংকটে এই ওঠা-নামার মাত্রাটা আরও বাড়বে এটি খুব স্বভাবিক।'

'কিছু কিছু বিষয় আছে, সব কিছু সরকারের বাঁধন-কষনের ওপর নির্ভর করে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু মানুষের গরু কেনার সাধ্য তো আরও বেড়ে গেছে,' বলেন কাদের।

দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'আশা করি এটা লাগাম ছাড়া থাকবে না। এক সময় এটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। সিন্ডিকেট বলেন আর যা-ই বলেন, সিন্ডিকেট তো আর সরকারের চেয়ে শক্তিশালী না! সরকার সিরিয়াসলি ট্রাই করছে এবং এ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমে যাবে।'

'কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে বছরে ৫৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানি কেন?'—বিএনপি মহাসচিবের এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, 'মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলবেন, কারণ ওনার কণ্ঠটা বিরোধী কণ্ঠ। বিরোধী দলের বাংলাদেশে ব্যর্থতার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। বাংলাদেশের বিরোধী দল তাদের প্রধান নেতার মুক্তির বিষয়ে দর্শনীয় একটি মিছিলও করতে পারেনি। এমন বিরোধী দল!'

'এটি হলো বাস্তবতা, বাংলাদেশে এমন একটি সরকার এখনো আছে, যে সরকার সত্যকে লুকাচ্ছে না। আমরা সত্যকে লুকিয়ে কোনো ফায়দা তুলতে চাচ্ছি না। আর বাংলাদেশের অভাবে-কষ্টে একটি মানুষও কি মরেছে? যে খাদ্যের অভাবে মারা গেছে, ক্ষুধায় মারা গেছে। ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেক কথাই বলতে পারেন,' বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'উন্নয়ন সহযোগী অনেকেই নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে, আমরাও শুনছি। কথা আমরা শুনব, পরামর্শ শুনব, ভালো পরামর্শ কেউ দিলে সেটাও আমরা শুনব। তবে আমরা কারো নির্দেশ বা নিয়ন্ত্রণে থাকব এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। কারো প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে বাংলাদেশের সংবিধানকে ফলো করে। সংবিধান সম্মতভাবে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো নির্বাচনকালীন সরকার রেখে এ দেশের নির্বাচন হবে।'

২০১৪ ও ২০১৮ সালে যে নির্বাচন দেশে হয়েছে এবার ভূ-রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে সে রকম নির্বাচন করা কি সম্ভব হবে আপনাদের পক্ষে? আপনাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ কি না—গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমি এত কথা বুঝি না। আমি শুধু এটুকু বুঝি, নির্বাচনটা এবার এত বেশি কথা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেও দেশের বাইরে ও দেশের ভেতরে বলেছিলেন যে, নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে এবং নির্বাচন স্বচ্ছ হবে, অবাধ হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী বারবার এ কথাটি উচ্চারণ করেছেন, আমরাও একই কথা বলছি।'

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'সব বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে। আমরা কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট করব না। আমাদের বন্ধুত্ব থাকবে, সম্পর্ক থাকবে, পারস্পারিক সহযোগিতাও থাকবে, লেনদেন থাকবে। আমরা বন্ধুত্বের মধ্যে কোনো বিভেদ ঘটাতে চাচ্ছি না। কিছু কিছু ব্যাপারে ভিন্ন মত থাকতে পারে, সেটা বন্ধুত্বের অন্তরায় নয়।'

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Discrimination Students Movement

Students to launch political party by next February

Anti-Discrimination Student Movement and Jatiya Nagorik Committee will jointly lead the process

9h ago