বেলা শেষে গরু নিয়ে বিপাকে ফেনীর বিক্রেতারা

বেলা শেষে গরু নিয়ে বিপাকে ফেনীর বিক্রেতারা
ছবি: স্টার

'বড় গরুর দাম চাই ২ লাখ, পরশুদিন ২ জনে ১ লাখ ৬০ হাজার কইলো। কিন্তুক আরও লাভের আশায় বেচলাম না। আর আইজ ১ লাখ ১০ হাজারের উপরেই কেউ তুলেই না। কই যামু কন! পথে বসা ছাড়া গতি নাই!' ফেনীর মোহাম্মদ আলী বাজার হাটে দাঁড়িয়ে এমন করেই আক্ষেপ করছিলেন গরু বিক্রেতা মোতালেব সর্দার। 

মোতালেব জানালেন, দিন কয়েক আগে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে ৭টি গরু কিনে বিক্রির উদ্দেশ্যে ফেনীর কোরবানির হাটে তুলেছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে দুটি গরু বেশ ভালো দামে বিক্রি হলেও বাকি ৫টি গরু বিক্রি না হওয়ায় বিপদে পড়েছেন। আজকের মধ্যে গরু বিক্রি না হলে বাজার মূল্যের চেয়ে কমে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করা ছাড়া তার আর উপায় থাকবে না। আর তাতে তার বিপুল লোকসান হবে।

কেবল মোতালেবই নন। ঈদের আগের দিন বিকেলে ফেনী সদর উপজেলার মোহাম্মদ আলী বাজারে দেখা যায় গরু বিক্রেতাদের এমন হতাশা।  গরু বিক্রেতারা জানান, গত দুদিন আগে দাম ভালো থাকলেও আজ গরুর দাম তলানিতে নেমে এসেছে। আর তাতে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন বিক্রেতারা। 

উল্টো দিকে গরুর দাম অনেকটাই কমে যাওয়ায় দারুণ খুশি ক্রেতারা। 

দুই ভাইকে নিয়ে মোহাম্মদ আলী বাজারে গরু কিনতে এসেছিলেন মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফয়সাল। দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদকের সঙ্গে যখন তার কথা হয় তখন গরু কিনে হাটে হাসিল পরিশোধ করছিলেন তিনি। 

ফয়সাল বলেন, '৮২ হাজার টাকা দামে আজ যে গরু কিনলাম গতকালকের বাজারেও এই গরুর দাম ছিল অন্তত সোয়া ১ লাখ। আমার সর্বোচ্চ বাজেটই ছিল ৯০ হাজার টাকা। এই দামে মনের মতো গরু কিনতে পেরে ভীষণ খুশি লাগছে!' 

আজ ফেনীর একাধিক গরুর হাট সরজমিনে ঘুরে দেখেন দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদক। গরুর ক্রেতা, বিক্রেতা ও হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুদিন আগেও ফেনীতে গরুর ভীষণ চড়া দাম ছিল। যার ফলে গরুর বিক্রিও হয়েছিলো তুলনামূলক কম। গতকাল মঙ্গলবার থেকেই ফেনীর গরুর হাটগুলোতে গরুর দাম কমতে শুরু করে। আর তাতে বিক্রিও বেড়েছে কয়েকগুণ। গত কয়েকদিনের তুলনায় বিক্রি বাড়লেও আজ হাটগুলোতে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি ছিল। 

দুটি গরু নিয়ে ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার কৈখালী গ্রাম থেকে মোহাম্মদ আলী হাটে এসেছিলেন আনসার আলী। গরুর আশানুরূপ দাম না পেয়ে ভীষণ হতাশ তিনি। 

দ্য ডেইলি স্টারকে আনসার আলী বললেন, 'দাম এমন হইবো জাইনলে আগেই গরু বেচি দিতাম। অন গরু লই বাড়িত যওন ছাড়া উপায় নাই। '২ বছর ধরি মেলা যত্ন করি গরু হালি যদি এই অবস্থা অয়, তয় গরু সামনে না হালাই ভালা!'

আজ সন্ধ্যার পর ফেনী পৌরসভার সিও অফিস গরু বাজারে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই হাটেও গরুর দাম আরও পড়তির দিকে নেমে যায়। সদরের আলোকদিয়া গ্রাম থেকে গরু নিয়ে এসেছিলেন বশির উদ্দিন। সন্ধ্যার পর তার গরুটি বিক্রি হয়ে গেলেও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হতাশ তিনি। 

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক বছর আগে ঊনসত্তর হাজার দিই গরু কিনি ১ বছর ধরি পাইললাম। তিন দিন আগে যে গরুর দাম এক লাখ ষোল হাজার উইঠলো হেই গরু অন সাতানব্বই হাজারে বেচলাম! কারে বুঝ দিমু কন চাই! এক বছর পালি কি লাভটা অইলো! ভাইবলাম আইজ্জা শেষ বাজার। গরুর দাম কিছু উইঠবো, এইরম যাইনলে আগেই গরু বেচি দিতাম। খাওনের দাম ও উইঠলো না!'

কেবল বশির উদ্দিনই নন, শেষদিনে গরু বিক্রির আশায় থাকা এই হাটের বেশীরভাগ গরু বিক্রেতাই গরুর দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানান একাধিক বিক্রেতা। অনেক বিক্রেতা গরু বিক্রি না হওয়ায় বাড়ি ফিরে যেতেও দেখা যায়।

হাটের একাধিক বিক্রেতার এই প্রতিবেদককে জানান, যারা গ্রাম থেকে নিজে লালনপালন করে গরু নিয়ে এসেছেন তাদের বেশিরভাগই গরু বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে পারলেও, সেই উপায় নেই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। রাতের মধ্যে গরু বিক্রি না করতে পারলে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হবেন তারা।  

তবে গরুর দাম কমে গেলেও উল্টো চিত্র ছাগলের বেলায়। সোনাপুর গ্রাম থেকে ছাগল কিনতে এসেছিলেন সোহাগ মিয়া। ছাগলের দাম বেশ চড়া হওয়ায় দামদরের ফাঁকে ঠাট্টার গলায় তিনি বললেন, 'অন ত দেখা যার ২ ছাগলের দামে এক গরু হন যাইবো। (এখন তো দেখা যাচ্ছে ২ ছাগলের দামে ১ গরু পাওয়া যাবে।)

 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

3h ago