আম কখন খাওয়া ভালো, ডায়াবেটিস রোগীরা কি আম খেতে পারবেন

ছবি: সংগৃহীত

আম খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। আম স্বাদে-গন্ধে যেমন অতুলনীয়, তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর একটি ফল। কাঁচা ও পাকা ২ ধরনের আমই শরীরের জন্য উপকারি। এ সময় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পাকা আম। দামে সাশ্রয়ী এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় অনেকেই প্রায় প্রতিদিনই খাদ্য তালিকায় রাখছেন আম।

তবে এই আম খাওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যেই ভয় বা বিভ্রান্তি কাজ করে। আম খেলে ওজন বেড়ে যাবে কি না, ডায়াবেটিস রোগীরা আম খেতে পারবেন কি না বা আম দিন বা রাতের কোন সময়টা খাওয়া ভালো এসব বিষয়ে জানতে চান তারা। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুষ্টিবিদ তাসনিম আশিকের সঙ্গে।

প্রথমে জেনে নিই আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে।

পুষ্টিবিদ তাসনিম আশিক জানান, আম বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ একটি ফল।

  • আমে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইবার। তাই উচ্চ কোলেস্টেরল আক্রান্ত রোগীরাও পরিমিত পরিমাণে আম খেতে পারবেন।
  • ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় আম কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে দারুণ কার্যকর।
  • মানুষের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের 'এ'র চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশের জোগান দিতে পারে আম। ভিটামিন এ চোখের জন্যেও খুব উপকারী। তাই দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে আম।
  • ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতেও আম বেশ কার্যকরী একটি ফল। আমে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে ত্বক থাকে সতেজ ও টানটান।
  • আমে আরও আছে ভিটামিন ই, যা ত্বক ও চুলের জন্য ভীষণ উপকারী।
  • আমে আছে কপার, যা রক্তে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
  • তাজা আম পটাশিয়ামের খুব ভালো একটি উৎস।

 

 

আম কখন খাওয়া ভালো?

তাসনিম আশিক জানান, আম খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে মধ্য সকাল অর্থাৎ সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের মাঝের সময়টা। এটা সবার ক্ষেত্রেই। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বা ডায়াবেটিস যাদের আছে তারাও চেষ্টা করবেন মধ্য সকালে আম খেতে। এ ছাড়া কেউ যদি বিকেলে খেতে চান বা রাতে খেতে চান সেক্ষেত্রে আম গ্রহণের পরিমাণটা কমিয়ে আনতে হবে। তবে মধ্য সকালটাই সবচেয়ে ভালো।

ডায়াবেটিস রোগীরা কি আম খেতে পারবেন?

তাসনিম আশিক বলেন, আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫০ এর বেশি। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কার্বোহাইড্রেটের সূচক। যত কম গ্লাইসেমিক রেটের খাবার খাওয়া হবে ততই শরীরের জন্য ভালো। ডায়াবেটিসের রোগী আম খেতে পারেন না, এ কথা ভুল। তবে ভরপেট খাওয়ার পর দুপুর বা রাতে আম খেলে তার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে।

সেক্ষেত্রে বুদ্ধি করে আম খেতে হবে। যেদিন সকালের নাশতায় আম খাওয়া হচ্ছে, সেদিন দুপুরে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। দেখতে হবে শরীরে জমা অতিরিক্ত ক্যালরি যেন ঝরিয়ে ফেলা যায়।

পাকা মিষ্টি আম একজন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম খেতে পারেন। মানে প্রতিদিন একটি ছোট আম বা অর্ধেকটা মাঝারি আম খাওয়া যাবে।

আম খেলে কি ওজন বাড়ে?

পরিমিত পরিমাণে আম খেলে ওজন বাড়ে না৷ যারা ওজন কমানোর ডায়েটে আছেন তারা প্রতিদিন ক্যালরি মেপে নির্দিষ্ট পরিমাণ আম খেতে পারেন৷ তবে আম খাওয়ার সময় সেটি কীভাবে খাচ্ছেন তার ওপরও ক্যালরির পরিমাণ নির্ভর করে৷ আপনি যদি কোনো চিনিযুক্ত ডেজার্ট বা আমের জুস খান তাহলে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। ফলে ওজন বাড়তে পারে।

আম খেলে ওজন না বাড়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে এতে থাকা খাদ্যআঁশ। আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যআঁশ আছে, কিন্তু এর ক্যালরি মূল্য অন্যান্য ফলের তুলনায় কিছুটা কম। তাই আমকে স্ন্যাকস হিসেবে রাখলে পেট ভরা থাকবে। এতে অন্যান্য ক্যালরিবহুল খাবার খাওয়া থেকেও দূরে থাকা সম্ভব হবে।

যখন কোনো ব্যক্তি সুষম উপায়ে খাবার খাবেন, তখন তিনি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ২টি আম রাখতে পারেন। এর বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। পাশাপাশি আমে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপটোফেন রয়েছে, যা ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। দিনের বেলার ঘুম এমনিতেই আমাদের মেটাবলিক রেট কমিয়ে দেয়, যা ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এ ছাড়া আম খেলে ওজন বাড়বে, যদি কেউ প্রক্রিয়া করে খায়। যেমন আমের শরবত, স্মুদি, আমের আইসক্রিম বা চাটনি বানিয়ে খেলে বাড়তি চিনি যুক্ত হবে এবং প্রভাব পড়বে ওজনে।

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu now a wanted man

ICC issues arrest warrants for the Israeli PM, his former defence chief for war crimes and crimes against humanity; 66 more killed in Gaza

13m ago