যে কারণে অ্যাপলের ডেভলপার সম্মেলনে একবারও উচ্চারিত হয়নি ‘এআই’ শব্দটি

যে কারণে অ্যাপলের ডেভলপার সম্মেলনে একবারও উচ্চারিত হয়নি ‘এআই’ শব্দটি
ফাইল ছবি: অ্যাপল

সম্প্রতিকালে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ডেভেলপারস সম্মেলনে (ডব্লিউডব্লিউডিসি) নতুন ল্যাপটপ, আইওএস ১৭ এবং বহুল প্রতীক্ষিত ভিশন প্রো হেডসেটের ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। তবে পুরো অনুষ্ঠানে প্রযুক্তি বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় 'এআই' নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেনি শীর্ষ এই টেক কোম্পানি।

সিলিকন ভ্যালি ও ওয়াল স্ট্রিটে এখন এআই প্রযুক্তির উন্মেষ এবং এর ভবিষ্যত সম্ভাবনা-উদ্বেগ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। অথচ অ্যাপলের মতো এই খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা একবারের জন্যও বিষয়টি মুখে আনেননি দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। 

অথচ মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যালফাবেট ও অ্যামাজনের মতো অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি তাদের বিভিন্ন সম্মেলন ও মিটিংয়ে এআইকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছেন। বিজনেস ইনসাইডারের এক হিসাব অনুসারে, উল্লেখিত ৪টি কোম্পানি গত এপ্রিল মাসে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী প্রদানের অনুষ্ঠানগুলোতে সম্মিলিতভাবে ১৬৮ বার 'এআই' টার্মটি ব্যবহার করেছে।

উল্লেখ্য, অ্যাপলের এমন অনেক প্রযুক্তি রয়েছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ক্যাটাগরিতে পড়ে। যেমন- মুখের কথাকে টেক্সটে রূপান্তর করা, 'অটোকারেক্ট' ফিচারকে আরও উন্নত করা ও এয়ারপডকে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ ফিল্টারে আরও দক্ষ করে তোলা, ইত্যাদি। অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানই বর্তমান স্রোতের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য এগুলোকে এআই প্রযুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতো। কিন্তু অ্যাপল তা করেনি।

একটি কারণ হচ্ছে- প্রযুক্তি খাতের উন্মাদনা সৃষ্টিকারী কিংবা আলোচিত শব্দ, টার্ম ও বিষয় সম্পর্কে অ্যাপল সাধারণত নিরব থাকে। অ্যাপল নিজেই উন্মাদনা সৃষ্টি করতে চায়, কিন্তু নিজ থেকে আলোচিত বিষয়ে সামিল হয়ে উন্মাদনা আরও বাড়াতে চায় না। যেমন- এমপিথ্রি প্লেয়ার আর আইপড কিন্তু একই জিনিস। কিন্তু অ্যাপল কখনো এমপিথ্রি নিয়ে আলোচনা করেনি। বরং আইপড বাজারে এনে নিজেই উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে। পুরো মিউজিক শিল্পকে বদলে দিয়েছে। ওয়্যারলেস এয়ারবাডস আর এয়ারপডসের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য।

অ্যাপল আরও সুনির্দিষ্ট ও যথার্থ টার্ম ব্যবহার করে। যেমন- মেশিন লার্নিং। অ্যাপলের এবারের ডব্লিউডব্লিউডিসি সম্মেলনে মোট ৭ বার এই টার্মটি ব্যবহৃত হয়েছে। এআই প্রযুক্তি আসলে বিশাল ও বিস্তৃত অর্থে ব্যবহৃত হয়। সে হিসেবে অ্যাপলের পণ্যগুলোর জন্য 'মেশিন লার্নিং' টার্মটিই সুনির্দিষ্ট ও যথার্থ।

মেটাভার্স নিয়েও একই পথে হেঁটেছেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক। পুরো সম্মেলনে একটি বারেরও জন্য 'মেটাভার্স' শব্দটি উচ্চারণ করেনি কেউ, যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য কোম্পানিগুলো হয়তো অ্যাপলের ভিশন প্রো হেডসেটকে মেটাভার্সের সঙ্গে তুলনা করবে।

গত বছর ডাচ সংবাদমাধ্যম ব্রাইটের সঙ্গে এক স্বাক্ষাৎকারে কুক বলেন, 'আমি সব সময় মনে করি এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, কোনো কিছু করলে বা বললে মানুষ যাতে সেটি বুঝতে পারে। একজন সাধারণ মানুষ মেটাভার্স সম্পর্কে কিছু বলতে পারবে কি না, আমি নিশ্চিত নই।'

তবে এটাও সত্যি যে, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অ্যাপলকে কেউ জেনারেটিভ এআইয়ের জন্য চেনে না।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় যেসব ওপেন সোর্স প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, এ ধরনের প্রযুক্তি গ্রহণে অ্যাপলের বরাবরই অনীহা রয়েছে। যদিও চ্যাটজিপিটি বা গুগল অ্যাস্টিস্ট্যান্ট অ্যাপলের সিরির চেয়ে অনেক উন্নত।

তারপরও কুক সম্ভবত এসব নিয়ে উদ্বিন্ন নন। নাম উল্লেখ না করেও এআই প্রযুক্তির সাহায্যে অ্যাপল প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারছে।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Regulator repeatedly ignored red flags

Time after time, the internal safety department of the Civil Aviation Authority of Bangladesh uncovered irregularities in pilot licencing and raised concerns about aviation safety, only to be overridden by the civil aviation’s higher authorities.

8h ago