সবুজ গালিচায় নতুন সামর্থ্য দেখাতে চায় বাংলাদেশ
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নয়, কেবল একটাই টেস্ট বলে একে সিরিজও বলার উপায় নেই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নামার আগে ম্যাচের তীব্রতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে টেস্ট ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব আর দেশের হয়ে খেলার তাড়নাকে বড় করে দেখতে চাইছে বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে চেনা আদল ছেড়ে নতুন চ্যালেঞ্জ জয় করারও মিশন আছে লিটন দাসদের সামনে।
বুধবার সকাল ১০টায় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট। তার আগের তিন দিন ধরে আলোচনার বড় অংশ জুড়ে ছিল মিরপুরের বাইশ গজ আর তামিম ইকবাল। দুটোরই সুরাহা হয়ে গেছে।
ম্যাচের আগের দিন বিকেলে তামিমের না খেলা নিশ্চিত হতে আলোচনা সীমাবদ্ধ উইকেট ঘিরে। তবে উইকেট কেমন হবে তা এখনো সবারই জানা। এমনিতে মিরপুরে উইকেট সব সময়ই আলোচনার বস্তু। ফল বান্ধব উইকেটে বরাবরই এখানে স্পিনাররা ছড়ি ঘুরিয়েছেন। এবার ব্যতিক্রম দেখার আভাস স্পষ্ট। উইকেটে আছে যথেষ্ট ঘাস। তারমধ্যে কাটা ঘাস ছিটিয়ে রোল করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সকালে এসে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে গেছেন, এমনকি চার পেসারও নামিয়ে দিতে পারেন তারা। দেশের মাঠে কখনই চার পেসার নিয়ে খেলেনি বাংলাদেশ। সেটা হয়ত এবারও হবে না। তবে তিন পেসার যে একাদশে থাকছেন এটা নিশ্চিত। দুই স্পিনারসহ পাঁচ বোলারের সঙ্গে ছয় ব্যাটার। সমন্বয় এমনই থাকবে।
আগের দিন অধিনায়ক লিটন দাস বলেছেন, ঘাসের উইকেটে খেলে এবার নিজেদের বাজিয়ে দেখার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছেন তারা, এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। ব্যাটাররা দেখবেন কেমন করতে পারেন, বোলারদেরও হবে পরীক্ষা।
এসব নিরীক্ষা বাদ দিলে ম্যাচটার গুরুত্ব নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর স্রেফ ৬ টেস্ট খেলা আফগানিস্তানের জন্য প্রতিটি ম্যাচই বড় সুযোগ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বা সিরিজ না হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য নিজেদের তাতিয়ে দেওয়ার রসদটা কি? এমন প্রশ্নে যেন কিছুটা বিরক্তই হলেন হাথুরুসিংহে। টেস্ট ক্রিকেট আর দেশের প্রতিনিধিত্বকে টানলেন তিনি, 'আপনি আপনার দেশের জন্য খেলছেন। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কথা ভুলে যান, এটা কতদিন হয় এসেছে? দুই বছর, তিন বছর বা চার বছর আগে? তার আগেও তো টেস্ট খেলতেন দেশের হয়ে। আমরা যখন ৯,১০, ১১ বছর বয়সে খেলা শুরু করেছিলাম তখন দেশের হয়ে টেস্ট খেলার এই স্বপ্নই তো দেখে এসেছি।'
'কাজেই আমার কাউকে আলাদা করে উৎসাহ দেওয়ার নেই। কারো যদি প্রেরণা পেতে সমস্যা হয় বুঝতে হবে সে ভুল জায়গায় আছে।'
'আমার কাছে দেশের হয়ে টেস্ট খেলাটাই প্রেরণার উৎস। আমি এভাবেই দেখি ব্যাপারটা। দেশের হয়ে, টাইগারদের হ্যাট মাথায় পরে যে কোনো ম্যাচ খেলাটাই সম্মানের। এর চেয়ে বেশি কিছু আমরা ভাবি না।'
নিজেদের তাতিয়ে দেওয়ার আরেকটি বিষয়ও আছে। ২০১৯ সালে আফগানদের বিপক্ষে এর আগে খেলা একমাত্র টেস্টে হারতে হয়েছিল ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে। সেই টেস্টে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেয়া রশিদ খান অবশ্য নেই এবার। নেই সেই ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। যতই আগের তেতো স্মৃতি মাথায় না রাখার কথা বলুন, আফগানদের বিপক্ষে এবার জয় তুলে চট্টগ্রামের সেই ব্যর্থতায় প্রলেপ দেওয়ার বিষয় আছে।
প্রতিপক্ষ আফগানরা লড়কু দল, যদিও সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল ২৭ মাস আগে। তবে কোচ জনাথন ট্রট জানালেন, বাংলাদেশ সব দিক থেকে এগিয়ে আছে মানেই তারা ভালো খেলবে এই গ্যারান্টি তো নেই, 'যে কোনো দলই ঘরের মাঠে খেললে বাড়তি সুবিধা পায়। যে দল অনেক বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে, তারা নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে থাকবে কিছুটা। তবে এর মানে এই নয় যে, কালকে তারা আমাদের চেয়ে ভালো খেলবে।'
'আমরা খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। ছেলেরা দারুণভাবে প্রস্তুতি সেরেছে। বাংলাদেশে টেস্ট ম্যাচ খেলতে তারা রোমাঞ্চিত। আগে কী হয়েছে, এই কন্ডিশনে কে ফেভারিট, এসবের সবকিছুই নির্ভর করে আসলে কালকে কী হবে এবং কোন দল সবচেয়ে ভালো করবে। আমার কাজ হলো, দলের সবাইকে কালকের ম্যাচের জন্য তৈরি করা।'
তামিম না থাকায় জাকির হাসানের সঙ্গে ওপেন করবেন মাহমুদুল হাসান জয়। বাকি ব্যাটিং পজিশন নিয়ে সংশয় নেই। তিনে নাজমুল হোসেন শান্ত, চারে মুমিনুল হক, পাঁচে মুশফিকুর রহিম, ছয়ে লিটন দাস।
এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলাম আছেন স্পিন আক্রমণে। তিন পেসারের মধ্যে ইবাদত হোসেনের খেলা নিশ্চিত। তাসকিন আহমেদ ফিট থাকলেও ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের চিন্তায় তাকে বসিয়ে রাখা হতে পারে। তিনি না খেললে খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের জায়গা পাওয়ার সম্ভবনা বেশি। তবে মুশফিক হাসানের অভিষেকও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ।
Comments