‘বাজেট বাস্তবসম্মত নয়, এতে সাধারণ মানুষের বিষয় নেই’

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

আজ বৃহস্পতিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত 'বাজেট ২০২৩-২৪ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল্যায়ন' শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বড় বাজেট মানে এই না যে প্রশাসনে বেশি ব্যয় করলাম, নানা প্রকল্পে অপচয় করলাম। এক বছরের প্রজেক্ট ৫ বছরে গেলে এমন বাজেট মূল্যহীন। সামাজিক খাতে উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সামাজিক নিরাপত্তা-কর্মসংস্থানে নজর দিলে বড় বাজেট হতে পারে।'

'সে হিসেবে এই বাজেট বড় হলেও, আমি মনে করি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। বাস্তব তো করতেই পারবে না, বরং একটা ইরেলিভ্যান্ট বাজেট,' বলেন তিনি।

কয়েকবছর তিনি বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে বলেন, 'এখানে কিন্তু জনগণের উপলব্ধি, সাধারণ মানুষের বিষয় সেগুলো নেই। বাজেট প্রণয়নের প্রসেসটাই ভুল।'

'বর্তমানে আমাদের যে সংকট আছে, সেটা নজিরবিহীন। মূল্যস্ফীতি, কর ব্যবস্থা, রিজার্ভ সব মিলিয়ে খুব খারাপ অবস্থা। আমি বলব ভুল পলিসি নিয়েছে। গাণিতিক হিসাবে রপ্তানি বাড়ছে, রেমিট্যান্স আসছে, কিন্তু ভেতরে তো সব ভঙ্গুর, বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।

ওয়েবিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারী ও প্রশাসনিক খাতে ব্যয় ৬০ হাজার কোটি টাকা বা ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বাজেটে। মেগা প্রকল্পের পেছনে ব্যয় ৬ হাজার কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ মেগা প্রকল্প নয়, মূলত প্রশাসনিক ব্যয় মেটানোই এখন দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চাপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।'

'এ খরচ মেটাতে টাকা ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।
   
এই গবেষক আরও বলেন, প্রথাগত আয়ের উৎসগুলো ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হওয়ার ফলে, বাংলাদেশ সরকার কিছু আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

তার মতে 'মনিটেরি ফিন্যান্সিং করলে মূল্যস্ফীতি হবে না' বাংলাদেশে ব্যাংকের এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। 

এর কারণ হিসেবে জিয়া হাসান বলেন, 'টাকা ছাপিয়ে সরকারকে যে অর্থায়ন করা হবে সেই অর্থের ট্রান্সমিশন চ্যানেল ও ডলার বিক্রয় করে ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া অর্থের ট্রান্সমিশন চ্যানেল ভিন্ন। সরকারি অর্থায়নের বড় অংশ ৪ দশমিক ৭২ লাখ কোটি টাকার রিকারিং এক্সপেন্সের পেছনে ব্যয় হবে যে অর্থ চূড়ান্ত পর্যায়ে বেতন, ভাতা, মেইনটেনেন্সের ইত্যাদি খাতে মূলত খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা কেনায় ব্যয় হবে, অন্যদিকে ব্যাংকিং সেক্টরের তারল্যের বড় অংশ মুলত মূলধনী বিনিয়োগের পেছনে ব্যয় হবে। যার অর্থ, চ্যানেলের ভিন্নতার কারণে ডিভলভমেন্টের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে সরকারের হাতে তুলে দেওয়া অর্থে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটাবে।'

ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। সমাপনী বক্তব্য দেন ফ্রাই ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলসের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো সাইমুম পারভেজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। 
  

Comments

The Daily Star  | English

IMF loan tranches: Agreement with IMF at last

The government has reached a staff-level agreement with the International Monetary Fund for the fourth and fifth tranche of the $4.7 billion loan programme, putting to bed months of uncertainty over their disbursement.

9h ago