আরও ২ বছরের জন্য সম্ভাব্য করহার চালু রাখতে পারে এনবিআর

এনবিআর
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৭-২৮ অর্থবছর পর্যন্ত সম্ভাব্য করহার ঘোষণা অব্যাহত রাখতে পারে বলে জানা গেছে। এর ফলে করদাতা ও ব্যবসায়ীরা করবর্ষ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগাম সম্ভাব্য করের হার জানতে পারবেন।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট থেকে এটি শুরু হয়েছে। আরও বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ ও কর পরিকল্পনার সমর্থনে সরকার ক্রমান্বয়ে প্রোসপেকটিভ বা সম্ভাব্য আগাম কর ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে।

প্রচলিত রেট্রোস্পেকটিভ বা পশ্চাদমুখী ব্যবস্থায় এনবিআর করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের জন্য কর হার ঘোষণা করত একটি আয় বছর শেষ হওয়ার পর।

উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান আয়কর বর্ষটি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। আগের ব্যবস্থায় করদাতারা এই আয় বছরের ভিত্তিতে তাদের সম্পদ ও আয় বিবরণী দাখিল করতেন এবং পরবর্তী বছর, অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে, কর হার ঘোষণার পর কর পরিশোধ করতেন।

যাহোক, সম্ভাব্য ব্যবস্থায় ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো করবর্ষের জন্য তাদের কর আগেই জেনে নিতে পারে এবং একই করবর্ষ শেষে তা দিতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করদাতাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব বোর্ড সম্ভাব্য পদ্ধতি নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের পর আমরা আরও দুই বছরের জন্য তা চালু রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।'

এই ব্যবস্থা ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের কর ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ পরিকল্পনায় আস্থা বাড়াবে বলে মনে করেন তিনি।

গত ১৫ মে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ প্রস্তাবে সম্মতি দেন।

বিনিয়োগকারী ও কর বিশ্লেষকরা রাজস্ব বোর্ডের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে বলে জানান তারা।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদি সত্যিই এটি হয় তবে তা নিঃসন্দেহে দারুণ খবর। এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ভালো পরিকল্পনা করতে এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় বাস্তবতার প্রতিফলন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।'

আগাম করের ধারণা কার্যকর করের হার কমাতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন তিনি।

তার মতে, আগের ব্যবস্থায় বছর শেষে ব্যবসায়ীরা জানতে পারতো যে গত বছরে করহার কত ছিল। ফলে এক বছরের করের মূল্যায়ন পরের বছরে গিয়ে করা বেশ কঠিন ছিল। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে তাদের হিসাব শেষ করে দিয়ে থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে লভ্যাংশও বিতরণ করে ফেলে।

এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্নেহাশিস বড়ুয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করের হার আগাম জানার ফলে অনিশ্চয়তা কমে যাবে। সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আরও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবো।'

তিনি আরও বলেন, 'কর কত টাকা হতে পারে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনা আরও কার্যকরভাবে করতে পারবে।'

তিনি মনে করেন, এটি সঠিক পরিকল্পনায় সহায়তা করে। এর ফলে কর সাশ্রয়ও হতে পারে।

তার মতে, তবে শুধু আগাম হার জেনে রাখলে করদাতাদের উপকার নাও হতে পারে যদি কর হার যৌক্তিক করা না হয় এবং কার্যকর করের হার বিধিবদ্ধ হারের তুলনায় বেশি থাকে।

সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, 'এই নীতিমালার ধারাবাহিকতা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে কাজ করবে।'

দেশে বিনিয়োগ টানতে পারলে কাজের সুযোগ বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি কবির আশা করেন, ২০২৭-২৮ অর্থবছরের পরও রাজস্ব বোর্ড এই নীতিমালা অব্যাহত রাখবে।

বর্তমানে দেশে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৩ লাখ। তবে এসব করদাতার প্রায় ৬০ শতাংশ চলতি অর্থবছরে রিটার্ন জমা দেননি।

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

1h ago