বড় বাজেটেও জিডিপি অনুপাতে শিক্ষায় বরাদ্দ কম

দেশের সবচেয়ে বড় বাজেটে শিক্ষাখাতের জন্য বরাদ্দ জিডিপি অনুপাতে কম দেওয়া হয়েছে--বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদরা।

গত ১ জুন জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।
এই বরাদ্দ মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

অথচ, চলতি অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং এর আগের, অর্থাৎ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের (বেন) চেয়ার ও ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের (ক্যাম্পে) ভাইস-চেয়ার ড. মনজুর আহমেদ মনে করেন, 'সুশীল সমাজ, এমনকি রাজনীতিবিদরাও প্রাক-বাজেট আলোচনায় শিক্ষার জন্য বড় বরাদ্দ চেয়েছেন। তারা চেষ্টা করেছেন, কারণ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পৌঁছানোর জাতীয় লক্ষ্য এবং একটি উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর জন্য এই বিনিয়োগ প্রয়োজন।'

করোনা মহামারির প্রভাবে দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনা একটি উদ্বেগের বিষয়। এডুকেশন ওয়াচ ও অন্যান্য গবেষণায় এর ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের জন্য উপকরণ ও তহবিলসহ জরুরি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।'

'নতুন বাজেটে মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। মহামারির সময়ে এবং এর ঠিক পরেই একইভাবে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বরং কমানো হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটে যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এর উদ্দেশ্য প্রশংসনীয়। কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাডেমিক পরিবেশ ও কর্মক্ষমতার ন্যূনতম মান পূরণ করতে না পারলে এর উদ্দেশ্য সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।'

তার ভাষ্য, 'বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অনেক বেশি সরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। তারপরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল তখনই পাওয়া যাবে, যখন কার্যকর ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অগ্রাধিকার, কর্মসূচি ও কৌশল নেওয়া সম্ভব হবে এবং উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পক্ষে থাকবে।'

ইউনেস্কোর পরামর্শ, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করা উচিত।

জিডিপি অনুপাতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানোর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, 'এতে বোঝা যায় এই সরকারের শিক্ষায় প্রায়োরিটি কতটা। তাদের প্রায়োরিটি বোকা মানুষ তৈরি করা, তাদের প্রায়োরিটি কামলা বানানোর শিক্ষা। কারণ, তারা জানে সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষকে বসে আনা বা বোকা বানিয়ে চুরি-দুর্নীতি করা কঠিন।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারের প্রায়োরিটি হচ্ছে শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে এমন মানুষ তৈরি করা, যাতে উচ্চ বেতনের চাকরিগুলো বৈধ বা অবৈধভাবে বিদেশিরা করতে পারে, আর দেশের ছেলেমেয়েরা কিছু করে খাওয়ার জন্য যা দরকার, সেগুলো শিখে দ্রুত কামলা খাটতে নামতে পারে। আমাদের সরকারের প্রায়োরিটি হলো টেকনোলজি ব্যবহারকারী তৈরি করা, নতুন টেকনোলজি বানানো বা ইনোভেট করা নয়।'

গত ৩ বছর ধরে শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ ক্রমাগত কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'একদিকে শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ কমিয়েছে, আর অন্যদিকে বলছে স্মার্ট বাংলাদেশ বানাবে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারী বাড়ালে যদি স্মার্ট বাংলাদেশ বানানো বলা হয়, তাহলে তো আর বলার কিছু নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষার বরাদ্দ টাকার অংক দিয়ে বোঝানো যায় না। স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস হচ্ছে, জিডিপির কত শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হলো, সেটা হিসাব করা। এখানে কোনো অবহেলা চলবে না, কারণ এটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিষয়ে সিদ্ধান্ত। এই অন্যায়ের জোরালো প্রতিবাদ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের দায় থেকে যাবে। এই অন্যায়ের জোরালো প্রতিবাদ না করা হবে অমার্জনীয় অপরাধ।'

'সরকার ইচ্ছে করে শিক্ষায় রাজনীতি ঢুকিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সরকার এভাবে ছাত্র-শিক্ষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। শিক্ষায় যে জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হলো, এটা নিয়ে কোথাও কোনো প্রতিবাদ হয়েছে? হয়নি। প্রতিবাদের বদলে উল্টো ছাত্রলীগ আনন্দ মিছিল করেছে। অবশ্য মন্দের ভালো হচ্ছে, শিক্ষকরা আনন্দ মিছিল এখনো করেনি। কিন্তু, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো সেটাও দেখতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: A day of sharing for some, a day of struggle for others

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

1h ago