সাক্ষাৎকার

‘আমার কাছে অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’

Alfaz Ahmed
আলফাজ আহমেদ। ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

২৫ বছর ফুটবল খেলার পর ২০১৩ সালে অবসরে যান সাবেক জাতীয় তারকা আলফাজ আহমেদ। দীর্ঘদিন পর আলফাজ আবার আলোচনায় এসেছেন কোচিং মুন্সিয়ানায়। ৪৯ বছর বয়েসী এই তারকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে বিবর্ণ দশা থেকে টেনে চ্যাম্পিয়ন করেছেন ফেডারেশন কাপে। ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে ৮ গোলের রোমাঞ্চ ভরা ম্যাচের পর দেশের ফুটবলেই উঠেছে নতুন জোয়ার। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে আলফাজ জানিয়েছেন সেই ম্যাচ ও তার কোচিং দর্শনের কথা।

সেদিন ম্যাচের পর বলেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে যে বদলগুলো এনেছেন সেগুলোই টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তাহলে প্রথমার্ধে ঘাটতি কি ছিল?

আলফাজ আহমেদ: প্রথমার্ধে ঘাটতি ছিল যে কামরুল লাইনটাকে মার্ক করতে পারেনি ফাহিমকে। দ্বিতীয় গোলটাতে কলিদ্রেসের বেলায় আমাদের মুরাদ ছিল… ও (কলিনদ্রেস) আসলে যে বিশ্বকাপ এটা বোঝার দরকার ছিল। সে টেকনিক্যালি তাকে পরাস্ত করেছে।

এখানে তো রক্ষণের সমস্যা ছিল। কিন্তু আপনি বদল করলেন জাফর, শাহরিয়ার ইমন। মাঝে নিলেন আলমগীর রানাকে। মানে সামনের দিকে বদল করলেন!

আলফাজ: এই জায়গায় মনে হয়েছে যে রোদে খেলা ছিল, গরম ছিল, চাপ ছিল। তারা (আবাহনী) ওভারল্যাপ করে খেলছিল। ভেবেছি এখানে যদি আমার দুইটা উইঙ্গার থাকে তারা ওভারল্যাপ করতে পারবে না। আমার উইঙ্গাররা সতেজ নেমেছে। আমরা আক্রমণে থাকলে ওরা আসতে পারবে না। পাশাপাশি আলমগীর রানা জাতীয় দলের খেলোয়াড়, তাকে বলেছিলাম বিল্ডআপের জন্য। সেই জায়গায় কাজটা সে সুন্দরভাবে করেছে।

এসব বড় ম্যাচে যদি একটা ভালো মুভমেন্ট হয় তখন কিন্তু খেলার মোড়টাই ঘুরে যায়। সেই কাজটাই হয়েছে। ইমন কয়েকবার, জাফর কয়েকবার বল দিয়ে ঢুকেছে। যার কারণে ওদের ডিফেন্স আড়ষ্ট হয়ে গেছে। ওই জায়গায় সুলেমান দিয়াবাতে সুযোগ নিয়ে কাজটা করে দিয়েছে।

আপনার ফুটবল দর্শন কি?

আলফাজ : দর্শন হচ্ছে আক্রমণাত্মক ফুটবল।

কি দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। অনেকে তো বলে আগে রক্ষণ সামলাও…

আলফাজ: আমি কাছে অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স। অ্যাটাকিং জোনে চার বনাম চার হলে তখনই প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা যায়। এখানে এই কাজটাই করার চেষ্টা করেছি যে অ্যাটাকিং জোনে আমার খেলোয়াড় বেশি থাকবে।

এই দল প্রথম লেগে খুব একটা ভালো করেনি। একটা ভাঙাচোরা দল নিয়ে পরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন। কীভাবে সম্ভব হলো?

আলফাজ: প্রথম লেগে যদি দেখেন আমাদের দল খেলছে ৪-৩-৩ ফরমেশনে। এখানে তিনটা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার তারা খেলেছে, চারটা ডিফেন্ডার তো ছিলই। সাতটা প্লেয়ার আমার ডিফেন্সে ছিল। আমরা গোল খাব না, কাউন্টার অ্যাটাকে যদি গোল পাই এমন ছিল চিন্তা। এখানে আমি বদল করেছি। একটা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বাড়িয়েছি। বাকি দুজনের মধ্যে একজন বিল্ডআপ, আরেকজন ডিফেন্সিভ খেলবে। তিনটা মিডফিল্ডার তিনটা ক্যাটাগরির রেখেছি।

বাল্লু বল ধরে বিল্ডআপ করে, মোজাফফর বল ধরে রাখে, চেঞ্জ করে, ডিফেন্সিভ করে। আক্রমণে থাকে সানডে। সে বল নিয়ে মুভ করে সব সময়। আমরা আক্রমণে জোর দিয়েছি। পাশাপাশি দুই উইঙ্গার তারা আক্রমণে যায়, আবার নিচে নেমে ডিফেন্ডিংও করে।

জেতার পর তুমুল দৌড় দিলেন

আলফাজ: আসলে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। খেলার যে উত্তেজনা সেটা আমার ভেতরে কাজ করছিল খুব, খুশিতে ছুটেছি।

আবাহনী-মোহামেডানের সেই পুরনো দিন ফেরা সম্ভব?

আলফাজ: অবশ্যই। আপনি যদি দেখেন আবাহনী-মোহামেডান এই ম্যাচটা বিগত দশ বছর ধরে রঙহীন ছিল।  মোহামেডানের যে পরিস্থিতি ছিল, সমর্থকরা কিন্তু মোহামেডানের খেলার খবর নিত না। এবার মিডিয়ার প্রচারণার কারণে বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারছে। নতুন প্রজন্মও জানতে পারছে। প্রচারণার মাধ্যমেও মোহামেডানের সমর্থক যারা ঘুমিয়েছিল তারাও উজ্জীবিত হয়ে খেলা দেখতে ছুটে গেছে। শুধু মিডিয়ার কারণেই সম্ভব হয়েছে।

আমরা যখন বসুন্ধরাকে হারালাম তখন থেকেই উন্মাদনা শুরু হয়েছে। এই জিনিসটা ফুটবল ফেডারেশনকে বলেন, ক্লাবকে বলেন, ক্লাব যদি আরও উদ্যোগী,হয় তবে আরও ভাল দল করে তাহলে আরও ভালোভাবে এগুবে।  আমি মোহামেডানের এই মৌসুমের কোচ। পরের মৌসুমে থাকব কিনা সেই নিশ্চয়তা পাইনি। পেলে হয়ত পরিকল্পনা করতে পারব।

আপনার কোচিং জার্নিটা নিয়ে যদি বলেন

আলফাজ:  আমি ২০১৪ থেকে ২০১৭ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দলের কোচ ছিলাম। ওদের আন্তঃবাহিনী চ্যাম্পিয়ন করিয়েছি। উত্তর বারিধারায় ছিলাম ২০১৯ সালে। তারপর মোহামেডান থেকে সহকারি কোচের সুযোগ পাই। এবার প্রধান কোচ হলাম।

স্বাধীনতা পেয়েছেন কাজে?

আলফাজ: এখানে ধন্যবাদ জানাব কানন (সাঈদ হাসান কানন) ভাইকে। সিনিয়র ভাই হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন। নকিব ম্যানেজার ছিল, সেন্টু আসার পরে আমার অনেক শক্তি বেড়েছে কোচিং স্টাফে। সিদ্ধান্ত আমিই নিয়েছি। আলোচনা করেছি অন্যদের সঙ্গে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছি।

Comments

The Daily Star  | English

Make right to vote a fundamental right

The Constitutional Reform Commission proposes voting to be recognised as a fundamental right, so that people can seek legal remedies if it is violated.

14h ago