'খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের আত্মত্যাগের প্রতিদান দেওয়ার সময় এসেছে'

অবশেষে পেশাদার লিগে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছে মোহামেডান। ফোর্টিসের কাছে আবাহনী হেরে যাওয়ায় শিরোপা নিশ্চিত হয় গত শনিবারই। ক্লাবটির সুদিনের দুর্দান্ত স্ট্রাইকার আলফাজ আহমেদ, যিনি দুর্দিনে কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এনে দিয়েছেন এই শিরোপা, যেখানে গত ২৩ বছরে অনেকেই ব্যর্থ হয়েছিলেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিসহ নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া ক্লাবটির জন্য এটি মোটেও সহজ ছিল না। দ্য ডেইলি স্টার-এর আতিক আনামের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আলফাজ তার দলের এই সাফল্যের পেছনের রহস্য এবং শিরোপা জয়ের পর ক্লাবের প্রতি তার প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলেন। নিম্নে সেই সাক্ষাৎকারের মূল অংশগুলো তুলে ধরা হলো—
দ্য ডেইলি স্টার: মোহামেডান তাদের সর্বশেষ লিগ শিরোপা জিতেছিল ২৩ বছর আগে। এটি ছিল এক দীর্ঘ প্রতীক্ষা। আপনার কেমন লাগছে?
আলফাজ আহমেদ: অনুভূতিটা শব্দে প্রকাশ করা কঠিন। আমরা মোহামেডানে খেলেই বড় হয়েছি, আর এই ক্লাবকে ভালো একটা অবস্থানে নিতে পারাটা দারুণ লাগে। নিজেকে এই শিরোপা জয়ের অংশ হিসেবে ভাবতেই ভালো লাগছে।
ডেইলি স্টার: নিশ্চয়ই আপনারা ইউটিউবে খেলা অনুসরণ করছিলেন। ক্লাব টেন্টে পরিবেশ কেমন ছিল?
আলফাজ: শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর সবাই উল্লাসে ফেটে পড়ে। সবাই খুব খুশি, আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তবে আনুষ্ঠানিক উদযাপন এখনো হয়নি, ক্লাব কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে এ সাফল্য উদযাপন করা হবে।
ডেইলি স্টার: খেলোয়াড় হিসেবে মোহামেডানের হয়ে আপনি অনেক শিরোপা জিতেছেন। কিন্তু ক্লাবটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা অন্ধকার সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। আপনি এবং বাকি কোচিং স্টাফ কীভাবে দলকে এই পর্যায়ে নিয়ে এলেন?
আলফাজ: একবার (ইমতিয়াজ আহমেদ) নাকিব আর আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর, ফুটবল কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মিলে আমাদের লক্ষ্য ছিল ক্লাবের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা। আমাদের চেয়ারম্যান (মহিউদ্দিন) আলমগীর ভাই এবং ক্লাব সভাপতি জেনারেল মুবিন ভাই এই অর্জনে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তার চেয়েও বড় কথা, দেশি-বিদেশি সব খেলোয়াড় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। এটি ছিল সম্পূর্ণ একটা টিমওয়ার্ক।
ডেইলি স্টার: গত কয়েক বছর ধরেই মোহামেডান আবার শক্তি হিসেবে ফিরে এসেছে, ফেডারেশন কাপ জিতেছে এবং আরও কয়েকটি প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছে। মৌসুমের শুরুতেই কি আপনি বিশ্বাস করতেন ক্লাব এবার শিরোপা জিততে পারবে?
আলফাজ: গত বছর আমরা তিনটি টুর্নামেন্ট—ফেডারেশন কাপ, লিগ ও স্বাধীনতা কাপ—সবগুলোতেই রানার্স-আপ হয়েছিলাম। তখনই মনে হয়েছিল, দ্বিতীয় হতে পারলে চ্যাম্পিয়নও হওয়া সম্ভব। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল এবার লিগ জেতা। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে খেলোয়াড়রা শতভাগ দিয়ে খেলেছে।

ডেইলি স্টার: রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনী কিছুটা দুর্বল হয়েছে। শেখ জামাল ও শেখ রাসেল তো অনুপস্থিত ছিল। এতে কি আপনার কাজ কিছুটা সহজ হয়েছে?
আলফাজ: খেলাধুলায় সবাই চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। ঢাকা লিগে কোনো দলই দুর্বল নয়। ফলাফল দেখলেই বোঝা যায়—আমরা ফোর্টিসকে হারিয়েছি, ফোর্টিস আবাহনীকে হারিয়েছে, আবাহনী আবার বসুন্ধরাকে হারিয়েছে। আমার মনে হয়, এবারের লিগ বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল।
ডেইলি স্টার: আপনার নিজের ক্লাবও এবছর নানা সমস্যা, বিশেষ করে আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিল। মাঠের খেলায় কি এর প্রভাব পড়েছে?
আলফাজ: এটি ছিল আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা আর্থিকভাবে কষ্টে ছিলাম। তবে আলমগীর ভাই, তার নিজের কষ্টের মাঝেও, সবসময় মোহামেডানের পাশে ছিলেন। গত তিন-চার মৌসুমে তিনি মোহামেডানের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করেছেন।

ডেইলি স্টার: শোনা যাচ্ছে, খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের প্রায় তিন মাসের বেতন বাকি রয়েছে। এই সময়টাতে নিজেকে ও খেলোয়াড়দের প্রেরণা জোগানো কতটা কঠিন ছিল?
আলফাজ: দেখুন, আমরা সবাই ক্লাব কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করেই আত্মত্যাগ করেছি। সবাই আত্মত্যাগের মানসিকতা নিয়ে ক্লাবের জন্য কাজ করেছে। এখন সময় এসেছে ক্লাবের তা ফিরিয়ে দেওয়ার।
চ্যাম্পিয়ন তো প্রতিদিন হওয়া যায় না। আমরা ট্রফি এনে দিয়েছি মোহামেডানে। ক্লাব কর্তৃপক্ষের উচিত এখন সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা। আমরা চাই ক্লাব এই বিজয়টা উদযাপন করুক এবং খেলোয়াড়দের সন্তুষ্ট করুক।
ডেইলি স্টার: বেতন ছাড়াও মোহামেডানের অন্যান্য ঘাটতির কথাও শোনা যায়। ক্লাবের তো একটা উপযুক্ত টেন্ট বা প্রশিক্ষণ মাঠও নেই। এ বিষয়ে আপনার দাবি কী থাকবে?
আলফাজ: আমাদের একটা ঠিকঠাক অনুশীলন মাঠ নেই। এটি আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি। ক্লাবকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে এই সাফল্য যেন ভবিষ্যতের আরও সাফল্যে রূপ নেয়। আমরা মানুষের মোহামেডানের প্রতি ভালোবাসা আবার ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ এখন বিশ্বাস করে, বসুন্ধরার মতো দলকে হারাতে পারে মোহামেডান। সামনে একটা নতুন কমিটি আসবে। আমরা চাইবো, ক্লাব যেন একটা শক্তিশালী দল গড়ে তোলে—এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে।
Comments